ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লুকোচুরির অবসান ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ২১, স্বতন্ত্র ৪

জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর প্রথম ভোট বর্জনের ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

 জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর প্রথম ভোট বর্জনের ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও পূর্ব পরিকল্পনা হিসেবেই সবার আগেই বেলা একটায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে নিবন্ধনহীন এ দলটির প্রার্থী সংখ্যাও পরিষ্কার হলো। এতদিন প্রার্থী সংখ্যা নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটি লুকোচুরি করলেও রবিবার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণাতেই জানিয়েছে, ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচন করা ২১ এবং স্বতত্র প্রার্থীই হিসেবে অংশ নেয়া চার জামায়াত প্রার্থীই নির্বাচন বর্জন করেছে। এদিকে জামায়াতের সূত্রগুলো বলছে, এবার ভোটের শুরু থেকেই অংশগ্রহণের বিপক্ষে ছিল জামায়াত-শিবির। এমনকি ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের শুরুতে জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী বিরোধী অবস্থানেরও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। বিষয়টি তারা তারেক রহমানকেও জানিয়েছিল। এক পর্যায়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে অবস্থান ও জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী ইসূুতে ড. কামালদের নমনীয়তার প্রেক্ষাপটে ভোটে আসে জামায়াত। ব্যারিস্টার মওদুদসহ বিএনপির যে গ্রুপটি নির্বাচনের আগেই বর্জনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন জামায়াত তাদের সমর্থনও দিয়েছিল। জামায়াতের পক্ষ থেকে একদিন আগেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ইসির সামনে লাগাতার অবস্থান নেয়ার পক্ষে মত দেয়া হয়েছিল। মওদুদসহ কয়েক নেতা বিষয়টিতে একমত হলেও মির্জা ফখরুল, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ অন্যদের আপত্তিতে জামায়াতের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তবে জনগণের সাড়া মিলছে আঁচ করতে পেরে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়াই বেলা একটায় দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্যেই বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের এ রাজনৈতিক মিত্র। অথচ নির্বাচনের তখন ৩ ঘণ্টা বাকি। এমনকি বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ও ড. কামাল তখনও বলেছেন, নির্বাচন শেষ পর্যন্ত না দেখে কিছু বলা যাবে না। সূত্র মতে, জামায়াত তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারেই নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা নিশ্চিত ছিল, যে নীরব বিপ্লবের আশা করা হয়েছিল তা দৃশ্যমান না হওয়ায় বিএনপির পক্ষেও নির্বাচন গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। জামায়াত সেক্রেটারি ডাঃ শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একটায় বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, প্রহসনের এ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য আমরা ইসির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জনগণের কাছে প্রতীয়মান যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সরকারের নির্দিষ্ট ছক ও নক্সা অনুযায়ী সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ও সমতল মাঠ তৈরিতে ব্যর্থ হয়। এত কিছু সত্ত্বেও আমরা আশাবাদী ছিলাম নির্বাচন কিছুটা হলেও নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে এবং জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে। জামায়াতের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে এটা কোন নির্বাচনই নয়। নির্বাচনের নামে এটি একটি ব্যালট ডাকাতির প্রহসন এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই একতরফা নির্বাচনকে কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর যেসব প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, ওসব আসনে আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও বয়কটের ঘোষণা দিচ্ছি। এতদিন জামায়াত তাদের প্রার্থী সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি করেছে। কখন ২১, কখন ২২ বলে প্রচার করেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী এক বলে জানিয়েছে। তবে রবিবার বর্জনের বিবৃতিতে তারা প্রার্থীদের নামের তালিকাও প্রকাশ করে। সেই অনুযায়ী, ধানের শীষ মার্কায় জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছে ২১। স্বতন্ত্র প্রার্থী চার। ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে জামায়াতের প্রার্থীরা হলো দিনাজপুর-১ মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ এ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডাঃ শফিকুর রহমান, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডাঃ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম। এছাড়া স্বতন্ত্র চার প্রার্থী হলো কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ, পাবনা-১ ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, চট্টগ্রাম-১৬ জহিরুল ইসলাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ নুরুল ইসলাম বুলবুল। জামায়াত নেতাদের ভোটে থাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামালকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে।
×