ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগ্নেয়গিরি ধসে পড়ার কারণেই প্রাণঘাতী সুনামি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

 আগ্নেয়গিরি ধসে পড়ার কারণেই প্রাণঘাতী সুনামি

সুন্দা প্রণালীতে প্রাণঘাতী সুনামি সৃষ্টির কারণ ইন্দোনেশিয়ার আনাক ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির একটি অংশের নাটকীয়ভাবে ধসে পড়া, এটি ক্রমেই পরিষ্কার হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আনাক ক্রাকাতোয়ার স্যাটেলাইট ইমেজ পরীক্ষা করে কী পরিমাণ পাথর ও ছাই সাগরের ছিটকে পড়েছিল তা হিসাব করে দেখছেন। তারা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহজুড়ে এর উচ্চতা ও আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি হারিয়েছে আগ্নেয়গিরিটি। এর মধ্যে একটি আলোড়নেই হারিয়ে যাওয়া অধিকাংশ বস্তু সাগরে গিয়ে পড়তে পারে। আর এটি নিশ্চিতভাবেই সাগরের পানি স্থানচ্যুত হয়ে পাঁচ মিটার উঁচু ঢেউ সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করতে পারে, যে ঢেউ সুনামি হয়ে নিকটবর্তী জাভা ও সুমাত্রার উপকূল প্লাবিত করেছিল। খবর বিবিসির। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, গত শনিবারের ওই সুনামিতে ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ২০ জনেরও মতো এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় ৪০ হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আগ্নেয়গিরি ও ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকি প্রশমন কেন্দ্র (পিভিএমবিজি) ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেন্টিনল-১ কৃত্রিম উপগ্রহম-ল ও জার্মানির টেরাএসএআর-এক্স রাডার ইমেজিং স্যাটেলাইটের মতো কয়েকটি কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিগুলো পর্যালোচনা করছে। দিন বা রাত অথবা মেঘের মধ্য দিয়েও ভূপৃষ্ঠের দিকে নজর রাখতে পারে রাডার। এই সক্ষমতার ফলে আনাক ক্রাকাতোয়ার হারানো উচ্চতার কিছু প্রাথমিক পরিমাপ নেয়া সম্ভব হয়েছিল, বিশেষ করে এর পশ্চিম পাশটিতে। আগ্নেয়গিরিটির ওই অংশটি যেখানে ৩৪০ মিটার উঁচু ছিল এখন সেটির উচ্চতা মাত্র ১১০ মিটারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে পিভিএমবিজি। আয়তনের দিক থেকে ওই অংশটি ১৫ থেকে ১৭ কোটি ঘনমিটার বস্তু হারিয়েছে আর মাত্র চার থেকে সাত কোটি ঘনমিটার বস্তু এখনও রয়ে গেছে। তবে ২২ ডিসেম্বর সুনামির দিনটিতে আগ্নেয়গিরিটি ঠিক কতটুকু বস্তু হারিয়েছে আর পরবর্তীতে কতটুকু হারিয়েছে তা অজানাই থেকে গেছে। বিজ্ঞানীরা কখনও আগ্নেয়গিরিটি পরিদর্শনের সুযোগ পেলে এবং নিবিড় জরিপ চালাতে সক্ষম হলে আরও বিশদ ধারণা করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু উদ্গিরণ এখনও অব্যাহত আছে আর এর চারপাশে নিরাপত্তাজনিত প্রবেশ নিষেধ এলাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, ফলে কেউই আনাক ক্রাকাতোয়ার কাছে যাচ্ছেন না। গত শনিবারের অনেক আগেই আগ্নেয়গিরিটির একটি অংশ ধসে পড়তে পারে এবং এতে সুনামি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ছয় বছর আগে এই সম্ভাবনার মডেল তৈরি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি আনাক ক্রাকাতোয়ার পশ্চিম পাশটি ধসে পড়তে পারে এমন সম্ভাবনাও চিহ্নিত করেছিলেন তারা। ওই পরীক্ষায় এর ফলাফল হিসেবে উঁচু ঢেউ তৈরি হওয়া এবং এতে উপকূলভাগ ডুবে যেতে পারে এমন সম্ভাবনাও অনুমান করা হয়েছিল, বাস্তবে যা ঘটেছে তার সঙ্গে ওই পরীক্ষা ফলের উল্লেখযোগ্য মিল রয়েছে।
×