ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণ ভোটাররা উচ্ছ্বসিত

স্বাধীনতা ও উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিতে পেরে খুশি রফিকুল

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

  স্বাধীনতা ও উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিতে পেরে খুশি রফিকুল

অপূর্ব কুমার ॥ উৎসবপ্রিয় বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভোট আরও একটি উৎসবের মতোই। পাঁচ বছর পর পর নতুন উৎসাহ নিয়ে এই উৎসবটি মানুষের কাছে ফিরে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ করায় উৎসবটি এবার নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী নির্বাচনটি ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করায় রাজধানীর ভোটকেন্দ্রগুলোতেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। সকাল আটটা.. নিউ মডেল কলেজ ধানমন্ডি সকাল আটটা ভোট শুরুর অফিসিয়াল সময় শুরুর পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে ধানম-ির নিউ মডেল কলেজে। সেখানে অপেক্ষাকৃত তরুণ ভোটারদের মধ্যে আনন্দের ফুলকি দেখা গেছে চোখে-মুখে। জীবনের প্রথম ভোট দেয়ার অভিব্যক্তি বর্ণনা করতে গিয়ে রফিকুল ইসলাম নামের তরুণ ভোটার বলেন, প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা ও উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিতে পেরে আমি খুশি। আমি কখনওই চাই না এই দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জাতীয় পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াক। তাই প্রথম ভোটটি আমি বুঝেশুনেই দিয়েছি। আমি চাই তরুণরা আগামী দিনের বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসুক। আর দেশের চলমান উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক। ধানম-ি-৩২ সংলগ্ন এই কেন্দ্রটিতে পুরুষ ভোটারের সঙ্গে নারী ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল যথেষ্ট। এই আসনের সোবহানবাগ-তল্লাপাড়া এলাকায়ও ব্যতিক্রম ছিল না। কোথাও বিএনপির সমর্থনে কোন পোস্টার-ব্যানার এবং ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের জন্য তথ্য কেন্দ্র ছিল না। সকাল সাড়ে আটটা.. প্রাইম আই হসপিটাল.. ধানমন্ডি.... ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি কক্ষেই পোলিং অফিসাররা ব্যস্ত ভোটারদের সহায়তা করতে। বয়সী ভোটারদের ক্ষেত্রে তারা কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করছেন। প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, এখানে সবদলেরই পোলিং এজেন্ট রয়েছে। সবাই নির্বিঘেœ ভোট দিচ্ছেন। প্রাইম ব্যাংক আই হসপিটাল কেন্দ্রের খায়রুল হোসেন নামের মাঝবয়সী ভোটার বলেন, তিনি তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন শান্তিপূর্ণ ভোট আর কখনও হয়নি। ভোটাররা নির্বিঘ্নে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। তবে অনুসন্ধান বুথের সংখ্যা বাড়ানো হলে ভোটারদের কম সময় লাগতো। ভোটারের কেন্দ্র ও রুম খুঁজে পেতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের ছাড়া অন্য কোন দলের অনুসন্ধান বুথ ছিল। সেখানে অনুসন্ধান কাজের সঙ্গে যুক্ত যুবলীগ কর্মী কামালউদ্দিন বলেন, ভোটের কয়েকদিন আগেই প্রতিটি বাসাতে গিয়ে সিরিয়াল নম্বর সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু বাসাতেই ভোটারদের সময়মতো না পাওয়ার কারণে এই এটি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ভোটের দিন সবাই একসঙ্গে ভিড় করায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে কিছুটা সময় ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে সবাইকে সহায়তা করা হবে। সকাল নয়টা... ঝিগাতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়... ঝিগাতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল নয়টায় সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ভোট দিতে ইচ্ছুকদের দীর্ঘ সারি। সেখানে কার আগে কে ভোট দিবে সেটা নিয়ে চলছে মধুর ঝগড়া। নতুন ভোটাররা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে ভোট দিতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সুশৃঙ্খলভাবে তাদের একই সারিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে সেখানে ভোটগ্রহণ চলে। তবে সেখানে প্রথমবারের মতো হাতপাখার প্রার্থীর পক্ষে অনুসন্ধান বুথ খুঁজে পাওয়া যায়। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের হাতপাখার কর্মীদের বুথ থেকে ভোটারদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। সেখানে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কোন অনুসন্ধান বুথ দেখা যায়নি। এমনটি ভোটকেন্দ্রের মধ্যেও কোন পোলিং এজেন্ট ছিল না। বিএনপির ধানের শীষের সমর্থক রবিউল ইসলাম নামের এক ভোটার বলেন, ধানম-ি ও হাজারীবাগ এলাকায় বিএনপির প্রার্থীর ভোট প্রার্থনায় কিছুটা ঘাটতি ছিল। বিশেষ করে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তুলনায় নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্বও ছিল চোখে পড়ার মতো। দলীয় নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার ভয়ে ভীত থাকার পরও ভোট দিতে আসছেন। কিন্তু দলের প্রার্থীর থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে তিনি নিজেই নিজের মতো করে ভোট দিতে এসেছেন। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে ভোট দেয়া অধিকার তাই তিনি সেই ভোট প্রদান করতে এসেছেন। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। জয়-বিজয় নির্ভর করবে জনগণের ভোটের ওপর। তবে তিনি নিজের মতো চেষ্টা করেছেন। বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কোন পোলিং এজেন্ট নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের নেতাদেরও কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে এবং একইসঙ্গে নেতাকর্মীদেরও আন্তরিকতার অভাব ছিল। সকাল সাড়ে ১০টা... মোহাম্মদপুর আদাবর মোহাম্মদপুর-আদাবর নিয়ে ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসন। এই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদেক খানের পক্ষে কাজ করেছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী আব্দুস সালামের পক্ষে দৃশ্যত কোন তৎপরতা ছিল না। একমাত্র আসাদগেটে তার ভোট চেয়ে একটি পোস্টার ঝুলতে দেখা দেয়। সেখানে জমিয়া ইসলামিয়া বাইতুল ফালাহ নামের কেন্দ্রে দেখা গেছে, সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে শীতের মিষ্টি রোদ উপভোগ করছেন। সকাল সাড়ে দশটাতে সেখানে ভোটারদের বেশিরভাগই অনুপস্থিত ছিল। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ও ভিতরে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা ছিল ব্যাপক। তাদের সহায়তায় নিবিঘ্নে ভোট দিতে পারার আনন্দও তাদের চোখে। এছাড়া প্রথমবারের মতো ইভিএমে সেখানে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইভিএমে ভোট দিতে পেরে তারাও উচ্ছ্বসিত। তাদের মতে, এত সহজে মাত্র আধা মিনিটে স্বয়ংস্ক্রিয়ভাবে ভোট দিতে পেরে আমি খুশি। নিজে বাটন চেপে ভোট দিয়েছি। নিজের ভোট অন্যের দেয়ার সুযোগ নেই। দুুপুর একটা... কারিগরি ইনস্টিস্টিউট মোহাম্মদপুরে দেখা গেছে, ইভিএমে ভোটগ্রহণে ভোটারদের প্রথম অভিজ্ঞতা। তবে দুপুর পর্যন্ত সেখানে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের ভিড় থাকলেও ভেতরে চাপ ছিল কিছুটা কম। সেখানে প্রিসাইডিং অফিসাররা ভোটারদের প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট শেখাচ্ছেন। দুপুর দেড়টা— গ্রাফিক্স আটর্স ইনস্টিস্টিউট ও মোহাম্মদপুর সরকারী কলেজÑ এই দুটি কেন্দ্রে গিয়েও ইভিএমে ভোট দেয়ার তৃপ্তি দেখা গেছে ভোটারদের মাঝে। তারা বলেন, ইভিএমের ভোটে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। একজনের ভোট অন্যের দেয়ার সুযোগ নেই। তারা এই পদ্ধতিতে ভোট দিতে পেরে গর্বিত। একইসঙ্গে উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিতে পেরে তারা আনন্দিত। দুপুর দুইটা... ১নং ঘাটারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেরানীগঞ্জের ঢাকা-২ সংসদীয় আসনের বছিলায় ১নং ঘাটারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে একটি বুথে ভোটারদের দীর্ঘ সারি ছিল। উৎসবমুখর পরিবেশে নারী-পুরুষরা ভোট দিচ্ছেন। বাকি বুথগুলো ছিল কিছুটা ফাঁকা। সেখানে প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, দুপুরের কারণে ভোটাররা কম ভোট দিতে আসছেন। শেষ বিকেলে ভোটারের চাপ আরও বাড়বে।
×