ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবীণ ভোটারদেরও সরব উপস্থিতি

সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় নাতিকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিলেন দাদা

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় নাতিকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিলেন দাদা

ওয়াজেদ হীরা ॥ পৌষের সকালের প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে সকাল সাড়ে আটটায় ড. মালিকা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন ৬৮ বছর বয়সী হুমায়ন হারুন। শরীরে চাদর জড়িয়ে তার তরুণ নাতি সায়মনসের হাত ধরে ভোট দিতে আসেন তিনি। দাদা অনেকবার ভোট দিলেও নাতি এবারই প্রথম। বয়সের ভারে কিংবা শীতের তীব্রতায়ও ভোট দেয়া থেকে পিছিয়ে থাকেননি এই প্রবীণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধু এই প্রবীণ হারুনই নন, তার মতো অসংখ্য প্রবীণের দেখা মিলেছে রাজধানীর একাধিক ভোটকেন্দ্রে। যারা কিনা এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের মতো ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সুশৃঙ্খলভাবে, ধৈর্য ধরে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে খুশি তারা। কোন কোন জায়গায় দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রে লাইনে থেকে প্রবীণদের সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন এই প্রজন্মের তরুণরা। ভোট দেয়ার পর হুমায়ন হারুন জনকণ্ঠকে বলেন, জীবনে আর ভোট দিতে পারব কিনা জানি না। বয়সও অনেক হলো। তবে আমি খুশি এই জন্য যে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিয়েছি। এবারই প্রথম নাতির সঙ্গেও ভোট দিলাম। একই ভোটকেন্দ্রে লাঠি ভর দিয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন ৭২ বছর বয়সী প্রবীণ নারী ভোটার হালিমা আক্তার। ভোট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, অনেক নির্বাচন দেখলাম। অনেকবার জীবনে ভোটও দিলাম। এবার আসতে চাইনি তবে প্রার্থীরা যেভাবে গিয়ে বাসায় অনুরোধ করেছেন না এসে পারলাম না। তবে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে বেশ খুশি বলেও জানান তিনি। ঢাকা-১০ আসনসহ রাজধানীর অন্যান্য ভোট কেন্দ্রেও প্রবীণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অধিকাংশ কেন্দ্রেই দেখা যায় বয়স্ক ভোটারদের লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। তারা সরাসরিই ভোট দিয়েছেন। আর দেশের প্রবীণ এ নাগরিকদের পাশাপাশি তরুণ-যুবা ভোটাররাও শীতের পোশাকের উষ্ণতা নিয়েই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সকালেই হাজির হন ভোটকেন্দ্রে। ঢাকা ১০ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা-১০ আসনের কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছে। ধানমন্ডির কামরুন্নেসা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে সেখানে তিনি তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। কামরুন্নেসা সরকারী বিদ্যালয়ে প্রবীণদের সঙ্গে তরুণদের বেশ উচ্ছসিত দেখা যায়। তরুণ মাজিদুল ইসলাম বলেন, এবারই প্রথম ভোটার হয়েছি। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার একটা তৃপ্তি আছে। এছাড়াও জিগাতলা কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্র, ইউরোপা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঘুরে দেখা যায় নবীন ভোটারদের পাশাপাশি প্রবীণ ভোটারদের সরব উপস্থিতি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার সংখ্যাও বেড়েছে। তবে যারা একটু ঝামেলা এড়াতে চেয়েছেন তারা শীতের সকালের আরামের ঘুম ছেড়ে ভোট দিতে এসেছেন ভোট কেন্দ্রে। রাজধানীর ইস্পাহানী বালিকা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে কথা বলেন হাসনা বেগম (৬৫)। পুত্রবধূর সঙ্গে ভোট দিতে আসেন এই প্রবীণ। তিনি বলেন, আমি তো দল বুঝি না বাবা, দেশ-মানুষ, আমার সন্তানরা ভাল থাকুক, এটাই চাই। তেজগাঁও সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট শুরু হওয়ার আগে থেকেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন শুরু হয়। জানা যায়, দুপুরের আগ পর্যন্ত বেশি চাপ ছিল ভোটারদের। এই কেন্দ্রের প্রবীণ ভোটার সামছুল ইসলাম (৭০) নির্বাচন নিয়ে বলেন, দেখুন আমরা অনেক সংঘাতের নির্বাচন দেখেছি। সে তুলনায় এই নির্বাচনকে অনেক ভালই বলব আমি। জানি না, আর ভোট দিতে পারব কিনা বা কতটা ভাল হবে। গত নির্বাচনে ভোট দেইনি, এবার ভোট দিতে পেরে ভাল লেগেছে। এছাড়াও অন্যান্য কেন্দ্রে প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দায়বদ্ধতা থেকে তারা ভোট দিতে এসেছেন। ভোট দিতে আসার আগে শঙ্কা থাকলেও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পেরে সন্তুষ্টির কথাও বলেন একাধিক প্রবীণ। উন্নয়নের মহাসড়কে চলা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন থেমে না থাকে, ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন একটি সুখী দেশ পায় সে প্রত্যাশাও করেছেন দেশের প্রবীণরা। আর দেশের একাধিক নবীন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চান বিশে^র সঙ্গে তাল মেলানো এক আধুনিক বাংলাদেশ। তরুণ ভোটার সাবিহা আক্তার জাতীয় নির্বাচনে এবারই প্রথম ভোট দিলেন। ভোট দিয়ে বলেন, আমরা কি চাই? লেখাপড়া শেষ হলে চাকরির জন্য যেন সুযোগ থাকে। দেশের বেকারত্ব যেন কমে। বিশে^র সঙ্গে যেন আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারি। সাগর-তামিম-হাসান তিন জনই জিগাতলার ভোটার। তারাও নিজের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন। তারা জানান, আগামী বছরগুলোতে যারাই ক্ষমতায় যাবে তারা আশা করি তরুণদের স্বপ্নগুলো মূল্যায়ন করবে। আমরাও দেশের উন্নয়নে শরিক হতে চাই তবে আমাদের প্ল্যাটফর্ম দরকার। আশা করছি আগামীর সরকার সেই প্ল্যাটফর্ম করে দেবে। দেশের প্রবীণ ভোটাররা যখন নতুন প্রজন্মের জন্য সুখি দেশের স্বপ্ন দেখছেন সেখানে নতুন কিছু করে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টায় আছে এই প্রজন্মের তরুণরা। প্রবীণদের মতো তরুণরাও বিশ^াস করেন সুখি-সমৃদ্ধ- আধুনিক বাংলাদেশের। নিজেদের ভোটে যাদের ক্ষমতায় বসানো হচ্ছে।
×