ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডনে জিসিএম রিসোর্সের সাধারণ সভার বাইরে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

 লন্ডনে জিসিএম রিসোর্সের সাধারণ সভার বাইরে বিক্ষোভ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের ফুলবাড়ী কয়লা খনি প্রকল্পের পেছনে রয়েছে যে ব্রিটিশ মাইনিং কোম্পানি, লন্ডনে তাদের বার্ষিক সাধারণ সভার বাইরে পরিবেশবাদীদের বিক্ষোভের সময় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। সেন্ট্রাল লন্ডনের অক্সফোর্ড সার্কাসের কাছে ক্যাভেনডিশ স্কোয়ারের একটি ভবনে জিসিএম রিসোর্সেস পিএলসির এই সভা শুরু হয় শুক্রবার সকাল দশটায়। কিন্তু সভা শুরু হওয়ার আগে থেকেই সেখানে কয়েকটি পরিবেশবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সেখান থেকে ‘একস্টিংশন রেবেলিয়ন’ নামে একটি পরিবেশবাদী গ্রুপের তিনজনকে পুলিশ আটক করে বলে বিক্ষোভকারীরা জানায়। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন ভবনটির নিরাপত্তা গেটের সঙ্গে নিজেদের গ্লু বা আঠা দিয়ে আটকে শেয়ার হোল্ডারদের ভেতরে যেতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। বিক্ষোভে যোগ দেয়া একটি সংগঠন লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্কের রিচার্ড সলি বলেন, ‘আমাদের কিছু সহকর্মী এই ভবনের সিকিউরিটি গেটের সঙ্গে নিজেদের গ্লু দিয়ে আটকে ফেলেছিলেন। এরপর পুলিশ কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।’ রিচার্ড সলি বলেন, ‘ফুলবাড়ী প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি এই প্রকল্প নিয়ে এগুনো উচিত নয়। কারণ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিরোধিতা রয়েছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দিক থেকে। একটি উন্মুক্ত কয়লা খনি করা হলে সেটি তাদের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে দেবে। কিন্তু প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে জিসিএম মনে হচ্ছে দৃঢ় সংকল্প। এখন তারা চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয় নিজেদের এই প্রকল্পটিকে বাঁচাতে চাইছে। তারা মনে করছে, চীন এতে যুক্ত হলে এই প্রকল্প হয়ত এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।’ উল্লেখ্য জিসিএম লন্ডনে স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে (এআইএম) তালিকাভুক্ত একটি মাইনিং কোম্পানি। এটি দাবি করে যে ফুলবাড়ীতে তারা ৫৭২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লার মওজুদ শনাক্ত করেছে। এখন তারা এই প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এই কোম্পানি আগে এশিয়া এনার্জি নামে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী কয়লা খনি প্রকল্প থেকে উন্মুক্ত খনি পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল ২০০৬ সালে। তখন এশিয়া এনার্জি নামে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল জিসিএম রিসোর্সেস। ব্যাপক বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হলে তৎকালীন বিএনপি সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছয় দফা চুক্তি করে। চুক্তির মূল বিষয় ছিল উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু পরিবেশবাদীরা বলছেন, সেই চুক্তি সত্ত্বেও সেখানে এভাবে কয়লা উত্তোলনের পক্ষে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। লন্ডনে জিসিএমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন বাংলাদেশের বামপন্থী এবং পরিবেশবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্যরাও। তেল গ্যাস জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার নেতা আখতার সোবহান মাশরুর বলেন, ‘জিসিএম এখনও বাংলাদেশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তারা চায়না কর্পোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। তারা মিথ্যা কথা বলে নতুন করে শেয়ার বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আমরা এখানে এসেছি। আমাদের প্রক্সি শেয়ার হোল্ডারদেরও তারা ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।’ লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্কের রিচার্ড সলি জানান, তিনি বহু বছর ধরে জিসিএম রিসোর্সের শেয়ার হোল্ডার। এর আগে শেয়ারহোল্ডারদের অনেক সভায় যোগ দিয়ে ফুলবাড়ী প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, কিন্তু এবার তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন এজিএমে এসব ইস্যু তুলি, অন্য শেয়ারহোল্ডাররা আমাদের কথা শোনে। কিন্তু এ বিষয়ে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করে। সামাজিক ন্যায়বিচার বা জলবায়ুর পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোকে তারা পাত্তা দিতে চায় না। তবে এটা ঠিক আমাদের প্রতিবাদের মুখে এই কোম্পানিতে তাদের বিনিয়োগের ভবিষ্যত নিয়ে তারা চিন্তায় আছে।’ ২০০৬ সালে ফুলবাড়ীতে যেদিন বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে অনেকে হতাহত হন, সেদিন সেখানে ছিলেন রুমানা হাশেম। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা হাশেম বলেন, ‘জিসিএমের প্রকল্পটি যদিও স্থগিত, তারপরও তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের দলে ভেড়াতে চাইছে। আমরা মনে করি কোন চুক্তি না থাকার পরও বাংলাদেশের সম্পদ দেখিয়ে অন্য একটি দেশে এভাবে বিনিয়োগ সংগ্রহ করা আইনবিরুদ্ধ।’ জিসিএমের ওয়েবসাইটে দাবি করা হচ্ছে, এশিয়া এনার্জি নামে এটি প্রথম লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৩ সালে। তখন তারা সেখান থেকে ১৪ মিলিয়ন পাউন্ডের পুঁজি সংগ্রহ করে। তবে ২০০৫ সালের নবেম্বরে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফুলবাড়ী প্রকল্পের বিষয়ে তারা যে প্রকল্প পেশ করেছিল, সেটির ভিত্তিতে তারা শেয়ার মার্কেট থেকে আরও আরও ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে।
×