ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গবেষণায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

  গবেষণায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সব দিক দিয়েই এগিয়ে চলেছে। এখন গবেষণাক্ষেত্রেও অগ্রযাত্রা বিশেষভাবে লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠেছে। সরকারের ব্যয় বরাদ্দের কারণে গবেষণায় সুবাতাস বয়ে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ ও গুণগত মানোন্নয়নে শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণায় নজর দিচ্ছে। গবেষণায় এ বছর বরাদ্দ ২৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গবেষণামুখী হচ্ছেন দেশের সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বলা নিষ্প্রয়োজন, সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হতে হলে তাকে জ্ঞান সৃষ্টি করতে হয়। জ্ঞান সৃষ্টি করার জন্য গবেষণা করতে হয় এবং গবেষণা করার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে পিএইচডি প্রোগ্রাম। কারণ পিএইচডি করার সময় শিক্ষার্থীরা টানা কয়েক বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে সময় দেয়। একটা সময় ছিল যখন পিএইচডি শিক্ষার্থীদের কোন স্কলারশিপ দেয়ার উপায় ছিল না। যদিওবা দেয়া হতো তার পরিমাণ এত কম ছিল যে, কোন শিক্ষার্থীর যদি নিজের আলাদা উপার্জন না থাকত তার পক্ষে পিএইচডি গবেষণা করার কোন উপায় ছিল না। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। বিজ্ঞান ও গবেষণা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চিন্তা। কৃষি খাত এ চিন্তার ভিতর দিয়েই এখন বিকশিত হয়ে চলেছে। এর রূপ ও ধরন পাল্টাচ্ছে। সময়ের চাহিদা পূরণ করতে গিয়েই আসলে এ পরিবর্তনগুলো সূচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে দেশে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণায় সাফল্য এসেছে। এর ভেতর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়াদি ছাড়াও রয়েছে শিল্প সহায়ক গবেষণা। প্রথমেই বলতে হয় ক্যান্সার চিকিৎসায় দুটি গবেষণার কথা। বিশ্বে এখন পর্যন্ত এমন কোন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি যার মাধ্যমে আগে থেকেই ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়। বাংলাদেশের গবেষকদের গবেষণায় শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই ক্যান্সার নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এছাড়া ক্যান্সার নিরাময়ে মনোক্লোন্যাল এ্যান্টিবডি উদ্ভাবনে প্রাথমিক সফলতা মিলেছে। প্রাথমিকভাবে এ অর্জন আশাব্যঞ্জক এবং এটা যদি প্রত্যাশামাফিক কাজ করে তবে তা হবে বিশ্বের মধ্যে ক্যান্সার নিরাময়ের প্রথম প্রযুক্তি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সয়েল টেস্টিং কিট উদ্ভাবন করেছেন। একটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উদ্ভাবিত সয়েল টেস্টিং কিট বাজারজাতকরণ শুরু করেছে। এই কিট ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ও স্বল্প খরচে মাটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে কৃষকরা মাটির চাহিদা অনুযায়ী সার ব্যবহার করতে পারছেন। এটির ব্যবহার অত্যন্ত সহজ, দ্রুত ও সুবিধাজনক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এনার্জি সাশ্রয়ী আল্ট্রা লাইট ওয়েট হিট ইনস্যুলেটিং সিরামিক সামগ্রী তৈরির জন্য স্থানীয় খনিজ পদার্থ শনাক্ত করেছেন। এ উদ্ভাবনের ফলে সিরামিক সামগ্রী উৎপাদনে জ্বালানি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গবেষণার স্বত্ব রক্ষার জন্য পেটেন্ট করে রাখা অত্যাবশ্যক। পেটেন্ট আসলে এক ধরনের সম্পদ। সব পেটেন্টই যে বড় সম্পদ তার কোন গ্যারান্টি নেই। কিন্তু কোন আবিষ্কার যদি হঠাৎ করে বড় কোন কাজে লেগে যায় তখন সেটি অনেক বড় সম্পদ হতে পারে। নতুন পৃথিবীতে জ্ঞান হচ্ছে সম্পদ এবং সেই সম্পদের পরিমাপ করা হয় পেটেন্ট দিয়ে। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদের যেহেতু গবেষণা করার ক্ষমতা আছে, তারা তাদের আবিষ্কারগুলো পেটেন্ট করে দেশের জন্য সম্পদ সৃষ্টি করবেন, সেটি আমরা আশা করতেই পারি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও গবেষণায় উদ্যোগী হয়ে অর্থায়ন করলে দেশের গবেষণা পরিস্থিতি যে আগামীতে আরও সমৃদ্ধ হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
×