ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জ-১

শাহ্ মোয়াজ্জেম না মাহী- কে পারবেন বিজয়ের মালা ?

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

শাহ্ মোয়াজ্জেম  না মাহী- কে পারবেন বিজয়ের মালা ?

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জে-১ আসনে বিজয়ের মালা কার ? মাহী বি. চৌধুরী নাকি শাহ্ মোয়াজ্জেমের। এমন আলোচনা চলছে এলাকায়। নানা কারণে আলোচিত মুন্সীগঞ্জ-১ আসনেও নৌকা এগিয়ে রয়েছে বলেই মনে করছে বিশ্লেষকগণ। এখানে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পুত্র মাহী বি চৌধুরী। বিকল্প ধারার মুখপাত্র মাহী অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রার্থী সত্তে¡ও ধানের শীষের প্রবীণ প্রার্থী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ভাল অবস্থানে রয়েছেন। জাতীয় পার্টির শাসনামলের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান রাজনীতিক শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন ২০০৮ সালেও ধানের শীষ নিয়ে নৌকার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তখন নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শ্রীনগর উপজেলার সভাপতি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এমপি। সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এমপির অসুস্থতার কারণে এবার তিনি মাঠে নেই। তবে তিনি ভিডিও বার্তায় মাহী বি চৌধুরীকে নৌকায় ভোট দেয়ার আহŸান জানিয়েছেন। ধানের শীষের প্রার্থী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন ২০০৮ সালে পরাজয়ের পর এলাকায় ১০ বছরে এসেছেন এমনটা দেখা যায়নি। এই নির্বাচনেই তিনি এসেছেন। এছাড়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার ভাল সম্পর্কও নেই বলে বিএনপির দায়িত্বশীল অনেকে দাবি করেছেন। বিশেষ করে শ্রীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মমিন আলীর সঙ্গেও তার ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। সম্পর্ক নেই সিরাজদিখানে শক্ত সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পরিচিত শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ। তার সঙ্গেও মনোনয়ন নিয়ে যে খারাপ সম্পর্ক হয়েছে তার পরিবর্তন আনতে পারেননি। এসব নানা কারণে এই আসনে বিএনপির অবস্থান দুর্বল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। এছাড়া মাহী বি চৌধুরী এই আসনে দু’বার উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন। তার ব্যক্তিগত ও তার বাবা বি চৌধুরী ও দাদা কফিল উদ্দিন চৌধুরীর ইমেজ কাজ করছে। এছাড়াও পুরো আওয়ামী লীগ তার জন্য মাঠে রয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা নানা কারণেই এখানে সকল বিরোধ মিটিয়ে মাহীকে বিজয়ী করে আনার জন্য আন্তরিক ভাবে কাজ করছেন বলেও তথ্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জে ৪টি আসন নির্ধারিত ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে মুন্সীগঞ্জে ৪টি আসনেই নির্বাচন হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনের আগে জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্গঠন করে মুন্সীগঞ্জে ৪টি আসন থেকে কমিয়ে ৩টি আসন পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.ফখরুদ্দিন সরকারের সময় ২০০৮ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা আসন পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাই ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচন থেকে এ পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জে ৩টি আসনেই নির্বচন হয়ে আসছে। ১৯৭০ সালে ১ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জম হোসেন জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ’৭৩ সালে ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনিই বিজয়ী হয়ে জাতীয় সংসদের মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেন। ’৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সরকারের সময় তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ওই সময়ের বিএনপি’র মহাসচিব ডাঃ একিউএম বদরুদোজ্জা চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ’৮৬ সালে এরশাদ সরকারের সময় ৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ’৮৮ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদের মধ্যবর্তী নির্বাচনেও তৎকালীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ’৯১ সালে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে পরাজিত করে বিএনপি’র প্রার্থী অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদোজ্জা চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন । বিএনপি সরকারের ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি ৬ষ্ঠ ও একই বছর ৭ম এবং ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি’র প্রার্থী অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদোজ্জা চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। ওই মেয়াদের সময়ই বদরুদ্দোজা চৌধুরী সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপির সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শূন্য হয়ে যাওয়া এই আসনের উপ-নির্বাচনে তারই ছেলে মাহী বি-চৌধুরী ২০০২ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে বিকল্প ধারা দল গঠন করে আবারও উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি’র প্রার্থী মমিন আলীকে পরাজিত করে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদে যান মাহী। এবার সবার আগ্রহ আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে কে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবে। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন না মাহী বি. চৌধুরী।
×