ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এসএম মুকুল

অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৭:০২, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনা

ধারাবাহিকভাবে তিন দশক সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে উন্নতির শীর্ষে দেশকে পৌঁছে দিয়েছেন লি কুয়ান ইউ। আমরা বলতে পারি মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের কথাও। মাহাথিরের ধারাবাহিক নেতৃত্ব দেশটিকে উন্নয়নের শীর্ষ চুড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যদি বলি তাহলে দেখা যাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশটি স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে। ১৯৭৫ সালের অনাহুত অঘটন না ঘটলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হতে পারত। কারণ একটি দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য যে স্বপ্ন সোপান থাকতে হয় তা জাতির জনকের মাঝে ছিল বলেই তিনি জাতির মননে সেই স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন। যা জাতি ৪৭ বছর পরেও এসে গভীরভাবে অনুভব করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির মননে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নের বীজ বপন করে দিয়েছেন। সেই স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ আজ উন্নত বাংলাদেশের সোপানে পথ চলছে। তাই আমরা সহজভাবে বলতে পারি- বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং উন্নত বাংলাদেশের রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রথমে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নে উজ্জীবিত করেছেন জাতিকে। বাংলাদেশ এখন মোবাইল, ইন্টারনেট, অনলাইন, ইউটিউব, ফেসবুক, লিঙ্কড ইন, টুইটারসহ সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন হাতে হাতে মোবাইল- কৃষক, শ্রমিক কেউ বাদ যায়নি। এসবের মাধ্যমে বেড়েছে কর্মক্ষেত্র, বেড়েছে আর্থিক তৎপরতা। শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশের পথ নকশা তৈরি করে জাতিকে সে লক্ষ্য পূরণে ধাবিত করেছেন। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা চলছে দ্রুত গতিতে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে এখন উন্নয়নের রোল মডেল। হাজারো সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে উন্নত বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে তিনি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নিবিষ্ট মনে কাজ করে যাচ্ছেন। সামাজিক এবং মানব উন্নয়নের অনেক সূচকেই বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে সর্বক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সারাদেশের চিত্রই পাল্টে গেছে যোগাযোগ ক্ষেত্রে। বিদ্যুত ও জ্বালানি উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ সব ক্ষেত্রেই সেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এসব উন্নয়ন কর্মসূচী তাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকারে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বর্তমান ১৮ জন জাতীয় নারী নেতার মধ্যে অন্যতম হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। নারী রাজনীতিবিদদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত ‘উইমেন প্রেসিডেন্টস এ্যান্ড প্রাইম মিনিস্টারস’ নামক বইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারকর্মী রিচার্ড ও ব্রিয়েনের লেখা এই বইয়ে প্রচ্ছদে বিশ্বের আরও ছয় নারী রাষ্ট্রনায়কের পাশাপাশি স্থান পেয়েছেন শেখ হাসিনা। বইটিতে রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহস, ঝুঁকি, প্রজ্ঞা এবং অবদানভিত্তিক সাজানো হয়েছে তার জীবনী। ‘গ্লোবাল ইনোভেশন এক্সচেঞ্জ’ (জিআইই) শেখ হাসিনাকে ‘মোস্ট ইনোভেটিভ পলিটিশিয়ান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। বিশ্বে উদ্ভাবনী কাজের ওপর এই বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা করে। বিশ্বের কোথায় কী উদ্ভাবনী আইডিয়া চলছে সে সম্পর্কে বুলেটিন প্রকাশ করে। গবেষণায় সংস্থাটি বলেছে, ‘বিশ্বের রাষ্ট্র এবং সরকারপ্রধানদের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা লোপ পাচ্ছে। তারা গৎবাঁধা কাজ করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এমন কোন সরকার প্রধান দেখা যায় না, যাদের উদ্ভাবনী চিন্তা রাষ্ট্র পরিচালনায় রেখাপাত করেছে।’ সংস্থাটির মতে, শেখ হাসিনার সবচেয়ে ইনোভেটিভ চিন্তার ফসল হলো ‘কমিউনিটি ক্লিনিক।’ কমিউনিটি ক্লিনিক বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক অনবদ্য আবিষ্কার। এর বাস্তবায়ন সফলভাবে করা হলে আফ্রিকায় এবং এশিয়ায় সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজতর হবে। দ্বিতীয় উদ্ভাবনী চিন্তার বাস্তবায়ন বলা হচ্ছে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’, যার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক চমকপ্রদ পথ আবিষ্কার করা হয়েছে। তৃতীয় উদ্ভাবনী চিন্তার নাম ডিজিটাল বাংলাদেশে। হতদরিদ্র, অর্ধশিক্ষিত মানুষের হাতে তথ্যপ্রযুক্তি পৌঁছে দিয়ে কার্যত শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ আদান প্রদানে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বদলে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। জিআইই মনে করে, বাংলাদেশ সবচেয়ে দেরিতে ইন্টারনেট যুগে প্রবেশ করে সবচেয়ে এগিয়ে যাওয়া একটি দেশ। বিশ্বনন্দিত নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরব আমিরাতের (ইউএই) সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা খালিজ টাইমসের ব্লগে রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি মানবিক আবেদনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাচ্যের নতুন তারকা হিসেবে অভিহিত করেছে। পত্রিকাটির মতামত সম্পাদক এ্যালন জ্যাকব ‘শেখ হাসিনা জানেন সহমর্মিতার নৈপুণ্য’ শীর্ষক ওই লেখাটি পোস্ট করেন। সামাজিক এবং মানব উন্নয়নের অনেক সূচকেই বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্যও শেখ হাসিনার ধারাবাহিকভাবে আরও কয়েক মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা প্রয়োজন। বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্য স্ট্যাটিসটিক্স। গবেষণা সংস্থাটি তাদের গবেষণার মাধ্যমে এ মনোনয়ন দেয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটাকে সরকারের অর্জন হিসেবে মন্তব্য করে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সরকারের অর্জন জনগণকে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনেও তিনি দুটি পুরস্কারে ভূষিত হন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয় এবং দৃশ্যমান ভূমিকা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ‘চ্যাম্পিয়নস অফ দ্য আর্থ’ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে যুগান্তকারী উদ্যোগের জন্য ‘আইসিটি টেকসই’ উন্নয়ন পুরস্কার লাভ করেন। এর আগে রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তিনি ‘সাউথ সাউথ’ ও ‘সেরেস’ পদকসহ অন্য পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলাদেশে নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য ইউনেস্কো থেকে ‘শান্তির বৃক্ষ (ট্রি অফ পিস) অভিধারায়ও সিক্ত হন। নারী জাগরণে এ ভূখ-ে কাজ করে গেছেন অনেক মহীয়সী নারী। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীর ক্ষমতায়নে ইতিহাস সৃষ্টি করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের নারী সমাজের বঞ্চনা, নির্যাতন, নিগ্রহ আর পিছিয়ে পড়ার ইতিহাসকে বদলে দিয়ে সম্ভাবনার নতুন ইতিহাস গড়ায় অসামান্য অবদানের জন্য ‘প্ল্যানেট ফিফটি চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। যদিও জাতিসংঘের এ পুরস্কারের আগেও বিশ্বব্যাপী নারীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। জাতিসংঘের ৭১তম অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগে ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার স্তম্ভ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী মেরি ক্লড বিবেউ। কানাডায় অনুষ্ঠিত ‘ফিফথ গ্লোবাল ফান্ড রিপ্লেনিশমেন্ট কনফারেনন্স’-এ সঞ্চালকের দায়িত্ব পালনকালে মেরি ক্লড বিবেউ বলেন, শেখ হাসিনাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মতো কিছু নেই, যিনি ‘নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার স্তম্ভ।’ এভাবে সরবে-নীরবে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বে ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় রচনা করতে সক্ষম হয়েছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। নিন্দুকরা যাই বলুক না কেন- দুর্নীতি, অনিয়ম, অপরাজনীতি, জঙ্গীবাদসহ শত প্রতিকূলতাকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
×