ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুমিনুলের লক্ষ্য...

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

মুমিনুলের লক্ষ্য...

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সাড়ে ৩ বছর পর গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। দুই ম্যাচ খেলে ভাল কিছু করতে না পারায় আবারও বাদ পড়েছেন। হয়তো এখানেই মুমিনুল হক সৌরভের ওয়ানডে ক্রিকেটের সমাপ্তি। কারণ টেস্ট স্পেশালিস্ট তকমা পেয়ে গত ৬ বছরে মাত্র ২৮ ওয়ানডে খেলতে পেরেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে ২৭ বছর বয়সী এ বাঁহাতি টপঅর্ডার যে কতটা ভাল মানের ব্যাটসম্যান সেটা এ বছর আরও ভালভাবে বুঝিয়েছেন। শুধু নিজের দেশকেই নয়, এবার সারাবিশ্বেই তিনি হয়েছেন সেরা। চলতি বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বাধিক ৯ সেঞ্চুরিসহ সর্বাধিক ১৭৯১ রান করেছেন ৫১.১৭ গড়ে। তাই এ বছর বিশ্বের সেরা প্রথম শ্রেণীর ব্যাটসম্যান মুমিনুল। বিশ্বরেকর্ড গড়ার পর অবশ্য মুমিনুল জানিয়েছেন আগামী বছর এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নিতে চান। আরও রান করে নিয়ে যেতে চান নিজেকে আরও উঁচুতে। এ বছর বিশ্বের প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বাধিক রান করা ব্যাটসম্যানের তালিকায় দুই নম্বরেও একজন বাংলাদেশী। তিনি তুষার ইমরান। গত বছর মুমিনুলের টেস্ট ক্যারিয়ারও হুমকির মুখে পড়েছিল। তৎকালীন কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে তাকে টেস্ট দল থেকে বাদ দিয়েছিলেন স্পিনারদের খেলতে পারেন ন্ াএমন অভিযোগে। সে কারণে দেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্টে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা হয়নি। হাতুরাসিংহে বিদায় নেয়ার পর থেকেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। আর এ বছর তো নিজেকে অন্যভাবেই চেনালেন। এ বছর দারুণ এক কীর্তিতে ভাস্বর হয়েছেন মুমিনুল। ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান ও সেঞ্চুরির মালিক তিনি। শুধু মুমিনুল নয়, বাংলাদেশের জন্যও বিস্ময়কর এক অর্জন এটা। শেষ হতে যাওয়া বছরে ২০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে মুমিনুলের রান ১ হাজার ৭৯১, সেঞ্চুরি ৯টি। দেশের ক্রিকেটের জন্য খুশির কথা, দ্বিতীয় স্থানেও এক বাংলাদেশী। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ১০ হাজার রানের রেকর্ড গড়া তুষার ১৯ ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরিসহ ১ হাজার ৫৭৩ রান নিয়ে মুমিনুলের পরেই আছেন। ১ হাজার ৫৫৭ রান নিয়ে তৃতীয় স্থানে ইংল্যান্ডের রোরি বার্নস। গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে প্রথম শ্রেণীর টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ (বিসিএল)। মুমিনুল তাই ছুটি কাটাতে নিজের জেলা কক্সবাজারে এখন। এ বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করে তিনি উচ্ছ্বসিত। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তার অর্জন নিয়ে বলেছেন, ‘২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান আমার। এটা সত্যিই গর্বের ব্যাপার। আশাকরি আগামীতে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে অনেক রান করতে পারব।’ এখন মুমিনুলের জন্য চ্যালেঞ্জটা আরও বেড়ে গেল। আগামী বছরও বাংলাদেশের ক্রিকেট তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকবে টেস্ট ম্যাচগুলোয়। দুর্দান্ত সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ে অনেক কাজও করেছেন। সেসব নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘কোথায় খেলছি সেটা কখনও চিন্তা করি না। আমার ভাবনায় শুধু নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজের কাছে জবাবদিহিতা। সেটা থাকলে ভাল করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’ সেই জবাবদিহিতা যে করেছেন সেটা বোঝা যায় এ বছর তার পারফর্মেন্সেই। টেস্ট না খেলে বসে থাকতে হয়েছে, তখন থেকেই ঝলসে উঠেছেন আরও। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। নতুন বছরে আরও বড় চ্যালেঞ্জ তার সামনে। টেস্ট ক্রিকেটে আড়াই হাজার রানের মালিক অবশ্য এ নিয়ে চিন্তিত নন, ‘আগামী বছর ভাল করার চ্যালেঞ্জ তো আছেই। তবে আমি এটা নিয়ে ভাবছি না। নিজেই ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দিলে তো সবকিছু কঠিন হয়ে যাবে। চেষ্টা করব আগামী বছরও ভাল ব্যাটিং করতে। এ বছর রান পেলেও কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা ছিল। সেগুলো শুধরে আগামী বছর আরও ভাল খেলতে চাই।’ আগামী বছর বাংলাদেশ দলের প্রথম মিশন নিউজিল্যান্ডে, ফেব্রুয়ারি-মার্চে। কিউইদের মাটিতে রান করা কঠিন হলেও তিন টেস্টের সিরিজে ভাল করতে আশাবাদী মুমিনুল, ‘নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন অবশ্যই কঠিন। তবে যেহেতু এ বছর রান পেয়েছি, তাই ওখানে আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেতে পারব।’
×