ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সকলের মুখে একই কথা- কেমন হবে নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

সকলের মুখে একই কথা- কেমন হবে নির্বাচন

সমুদ্র হক ॥ সব পথ মিশে গেছে একটি পয়েন্টে। আজ রবিবার সকালের ভোটের সূর্য বলে দেবে কেমন যাবে দিনটি। সন্ধ্যায় সবচেয়ে আগে জ¦লে ওঠা লুব্ধক তারা দিনের আলোয় লুকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। রাতের সব তারা মুখ লুকিয়ে থাকে দিনের আলোয়। লুব্ধকের হাসিতে ওরাও মুখ টিপছে। শনিবার সকাল থেকেই বগুড়া নগরীর পথঘাট শান্ত। কোন জ্যাম নেই। বেশি মোটর গাড়িও নেই। মোটর বাইক চলাচল বন্ধ হয়েছে গেল রাতে। নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ রাখতে দুদিন বন্ধই থাকবে। একই কারণে নির্ধারিত যান্ত্রিক যানবাহন ছাড়া বাকিগুলো নির্বাচনের দিন বন্ধ থাকবে। নগরীর নিত্যদিনের যে ব্যস্ততা তা নেই। কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় ট্রাফিক পুলিশ অনেকটা নির্ঝঞ্ঝাট। ফুরুত ফুরুত বাঁশি বাজাতে হচ্ছে না। দম ঠিক থাকছে। অবৈধ রিক্সা দাবড়াতে হচ্ছে না। এর মধ্যেই জনচলাচলে প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেল। সকলের মুখে একই কথা- কেমন হবে নির্বাচন! কে জিতবে ভোটে! কোন দল সরকার গঠন করবে। একাদশ সাধারণ নির্বাচনকে নিয়ে কম কথা হলো না। কে যে কি বলছে, কোন কথার শাখা-প্রশাখা কতদূর গড়াচ্ছে, সেই কথার কে যে কি অর্থ করছে, এ নিয়ে দিনা কয়েক কি না তক্কযজ্ঞ। বেসরকারী টেলিভিশনওয়ালারা তো কয়েক কাঠি সরেস। কত যে বাহারি টকশো। যদিও এই টকমিষ্টিঝাল শো নামের টকশোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কয়েকটি মুখেরই ছড়াছড়ি। যে কারণে টকশো শুরু হলে দর্শক-শ্রোতারা আগেই কিছুটা বলে দিতে পারে। হালে কোন উপস্থাপকের উপস্থাপনা কেমন, কার মুখ বেশি চলে, কে হাত বেশি ছুড়ে কথা বলে, কার কণ্ঠ রাগি মেজাজের, কে প্রশ্নের উত্তর নেয়ার চেয়ে নিজেই এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ করে বেশি কথা বলে....এইসব অতি চেনা হয়ে গিয়েছে। এ যুগের তরুণ-তরুণী ফারাহ নূর নওরীন, তাসমিম নওরীন, নোশিতা নওরীন, সুরভী নাসরিন, শিহাব শাহরিয়ার, রেজোয়ানুল হক গৃহবধূ কামরুন্নাহর, কামরুল লায়লা, সিনিয়র সিটিজেন আব্দুস সালাম, সদরুল হক বিভিন্ন চ্যানেলের টকশো দেখেন। তাদের খুব পছন্দের টকশো উপস্থাপক একাত্তর টেলিভিশনের মিথিলা ফারজানা। গৃহবধূ জেসমনি হক বললেন কি স্বাচ্ছন্দ্যে মিষ্টি কথায় মিথিলা ফারজানা উপস্থাপন করেন। ভাল লাগে। টকশোর কয়েক শ্রোতার মন্তব্য- শেখ হাসিনা এবারের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে হ্যাট্রিক করবেন। ১৯৯৬ এর নির্বাচনেরও বিজয়ী শেখ হাসিনা হবেন বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী। এই মন্তব্যের পাশাপশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন পুলক আনাম সংযুক্ত হয়ে বললেন, তাহলে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হতে পারেন বিএনপির ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাদের কথা শুনে রিন্টু সরকার বললেন, তাহলে কি হবে জাতীয় পার্টির! কি আবার হবে, যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। ওরা তো মহাজোটের মধ্যেই আছে- তাৎক্ষণিক জবাব জাকারিয়া হোসেন খুশির। এই আলোচনায় যুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বললেন, স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতকে কেন যে নির্বাচন করতে দিচ্ছে! এসবই নির্বাচনের আগের কথা। ফলাফল মিলবে রবিবার রাতেই। নগরীর এই আলোচনার রেশ ধরে গ্রামের পথে পা বাড়িয়ে দেখা গেল একটা উৎসব পরিবেশ। এই পরিবেশ নগরীর চেয়েও বেশি। লোকজনের মধ্যে একটাই আলোচনা ভোট ভোট ভোট। বাঙালী নদী তীরের সোনাতলা উপজেলার রানীরপাড়া গ্রামের আব্দুল বাসেত বললেন ‘হামরা রেডি হয়া আছি। ব্যায়না উঠে আগে ভোট দিব্যর যামো। সেই কুন বছর ভোট দিছি (আমরা প্রস্তুত নিয়েই আছি। সকালে উঠেই ভোট দিতে যাবো। সেই কোন বছর ভোট দিয়েছি)।’ কৃষক সমেশ বলল ‘ও ভাই ভোটের কথা কি কওয়া লাগবি। হামাগেরে এমপি দশ বছর ধরে এলাকাত কত করিছে। রাতের আন্ধার রোশনাই করে দিচ্ছে। রাস্তাও সকল হইছে। হামাগেরে গাঁওত পাকা রাস্তা। কেউ হাঁট্যে যায় না ভাই। টোটো গাড়ি (ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক) আছে, সিএনজি অটো আছে, ব্যাটারি লাগান্যে ভ্যান গাড়ি আছে, উঠলাম আর শোঁ করে উড়ে গেলাম (ও ভাই কি বলবো আওয়ামী লীগের এমপি এলাকায় কত উন্নয়ন করেছেন। রাত রোশনাই হয়েছে। রাস্তাতেও আলো। পাকা রাস্তা। কেই হাঁটে না। যন্ত্রচালিত গাড়িতে চরে উড়ে গেলাম)। গৃহস্থ জহুরুল ইসলাম বললেন, গ্রামটি অনেক উন্নত। প্রত্যেকের হাতে মোবাইল ফোন আছে। সব খবরই রাখে। রাতে কেবল সংযোগের টিভি চ্যানেলে সকল খবরই রাখে। এবারের নির্বাচনে গত দশ বছরের উন্নয়নই ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলবে। লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল দলমত নির্বিশেষে সকলেই উন্নয়ন চায়। গত দশ বছরের উন্নয়নই সরকারের প্লাস পয়েন্ট। যে সরকার তরুণদের হাতে তুলে দিয়েছে আধুুনিক বাংলাদেশ। এই তরুণরাই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ।
×