ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুল বাণিজ্য হবে ৩শ’ কোটি টাকার

ভোট ও ইংরেজী নববর্ষ ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

ভোট ও ইংরেজী নববর্ষ ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার

এম শাহজাহান ॥ থার্টিফার্স্ট নাইটের একদিন আগের ভোট উৎসবকে ঘিরে মাইক্রো অর্থনীতির ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ইংরেজী নববর্ষ বরণ করে নিতে প্রস্তুত নগরবাসী। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আজকের ভোট উৎসবে অংশগ্রহণে সরব গোটা জাতি। এই দুই উৎসবকে ঘিরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতি সঞ্চার হয়েছে। বেড়েছে নগদ টাকার প্রবাহ। অর্থের সরবরাহ ঠিক রাখতে ব্যাংকের এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। টানা তিনদিনের ছুটি পাওয়ায় নগরবাসীর অনেকে ভোট দিতে ছুটে গেছেন গ্রামের বাড়ির আপন ঠিকানায়। বেড়েছে ভোগ্যপণ্যের কেনাকাটা। নির্বাচন ও নববর্ষ উৎসব ঘিরে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস ধরে দেশের মাইক্রো অর্থনীতির ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনসহ নির্বাচনী সরঞ্জামাদি প্রস্তুতে দেশের প্রিন্টিং ও মুদ্রণ শিল্পের কর্মব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া ভোটের হাওয়ায় শহর ও গ্রামের চায়ের কাপে ঝড় বইছে। একই সঙ্গে পান, সিগারেট, বিড়ি, গুল ও জর্দার মতো তামাক পণ্যের বাণিজ্যে চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে। সংসদ সদস্য প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা পাড়া ও মহল্লায় সাধারণ ভোটারদের তুষ্ট করতে চা-পান দিয়ে আপ্যায়ন করছেন। এছাড়া অনেক প্রার্থী অসহায় গরিব মানুষদের শীতের গরম কাপড় ও কম্বল কিনে দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। মুদ্রণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের তারিখ ঘোষণার পর থেকে তাদের প্রেসগুলোতে কাজের পরিমাণ বেড়ে গেছে। সবই নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকা-। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জহুরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনী পোস্টার ছাপতে সারা মাস প্রেসগুলোর ব্যস্ততা ছিল। তিনি বলেন, সারা বছর যে কাজ হয় তার সঙ্গে নির্বাচনী পোস্টার ছাপার কাজটি বাড়তি পাওনা হিসেবে এসেছে। এ সময়টাতে সারাদেশের প্রেসগুলোতে ভাল ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ে থাকে। তিনি বলেন, নির্বাচনী বছরে বাড়তি কাজ হবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া নতুন বছরের বই ছাপতেও প্রেসগুলোর ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে। সবমিলিয়ে মুদ্রণ শিল্পখাত এখন চাঙ্গা। জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে সবদল অংশগ্রহণ করায় এবার ঘরে ঘরে প্রার্থী। ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী, রাজনৈতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, ডাক্তার-আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যারিস্টার, ব্যাংকার, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী সকল শ্রেণির মানুষই এবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এছাড়া শতাধিক ব্যবসায়ীও এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট চেয়ে সারাদেশে ব্যবসায়ীদের নিয়ে ক্যাম্পেন করেছেন। সূত্র মতে, ইসির নির্বাচন কর্মকা- পরিচালনা করতে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ১ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। স্থানীয় নির্বাচন ও অন্যান্য নির্বাচনের জন্য আরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে কমিশন। এছাড়া ইভিএম মেশিন কেনার জন্যও বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে এবার ৬টি আসনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচন কেন্দ্র করে শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্রই কাবিখা ও সামাজিক সুরক্ষার উন্নয়ন কার্যক্রমে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। রাস্তাঘাট, ফুটপাথ সংস্কার ও মেরামতের কাজও এগিয়ে চলছে। স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণসহ ধর্মীয় উপাসনালয়েও অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব ব্যয়ও নির্বাচনী অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন। সারাদেশে ৩০০ আসনে নির্বাচন হবে। এবার প্রতি আসনে অন্তত গড়ে পাঁচজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে ১৫০০ প্রার্থী ২৫ লাখ টাকা খরচ করলে নির্দেশিত ব্যয় দাঁড়াবে কমপক্ষে ৩৭৫ কোটি টাকা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসির নির্দেশনা মোতাবেক সুনির্দিষ্ট টাকায় নির্বাচন করা প্রার্থীদের জন্য কষ্টকর। তাদের মতে, বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী একেকটি আসনে পাঁচজন প্রার্থী মিলে কমপক্ষে ৪-৫ কোটি টাকা ব্যয় করবেন। ওই হিসেবে প্রার্থীদের খরচ দাঁড়াবে কমপক্ষে ১ হাজার ৫শ’ কোটি থেকে ২ হাজার কাটি টাকা পর্যন্ত। এই অর্থের প্রায় ৮০ ভাগ গ্রামের সংসদীয় আসনগুলোতে ব্যয় হবে। দরজায় কড়া নাড়ছে নববর্ষ ॥ এদিকে ভোটের উৎসব শেষ না হতেই সারাদেশের মানুষ ইংরেজী নববর্ষ বরণ করবেন। নগরজীবনে এটি একটি বড় উৎসব। যদিও সম্প্রতি গ্রামীণ জীবনেও ইংরেজী নববর্ষ পালনের রেওয়াজ শুরু হয়ে গেছে। এই উৎসব ঘিরে বাসাবাড়িতে ভাল রান্নার পাশাপাশি উপহার দেয়া নেয়ার মতো সংস্কৃতি দেশে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ফুল বাণিজ্য জমজমাট হয়ে উঠে এই উৎসবকে ঘিরে। এছাড়া এবার সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীরা ফুলের মালা পাবেন কর্মী ও সমর্থকদের কাছ থেকে। ফলে ফুলের চাহিদা এবার সবচেয়ে বেশি। ইতোমধ্যে রাজধানীর শাহবাগ ও কাটাবনের ফুল বাজারের ব্যবসায়ীরা দেশ-বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন জাতের ফুল সংগ্রহ করেছেন। কয়েক বছর আগেও দেশে ফুলের বাজারে হাতেগোনা কয়েক ধরনের ফুল পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ বেশি হওয়ায় ও আমদানি করায় বাহারি রঙের ফুল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে লালগোলাপ, সাদা গোলাপ, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, কসমস, ডালিয়া, টিউলিপ, কালো গোলাপ, ঝুমকা লতা, গাজানিয়া, প্লামেরিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। এছাড়া ইংরেজী নতুন বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে অনেকটাই বেড়ে গেছে কার্ড, ক্যালেন্ডার, নোটবুকের মতো উপহার সামগ্রীর বিক্রি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্পোরেট পর্যায়ে এসবের ব্যবহার বাড়লেও প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে অনেকটাই কমেছে ব্যক্তিপর্যায়ে কার্ডবিনিময়ের রেওয়াজ। এছাড়া প্রিয়জনকে উপহার দেয়া কিংবা কর্পোরেট সম্পর্ক জোরদারে, নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজ বেশ পুরনো। আর এজন্য ভোক্তা-পছন্দের শীর্ষে থাকে নিউইয়ার কার্ড, ডায়েরি, ক্যালেন্ডার আর নোটবুকের মতো উপহার সামগ্রী। তাই এ সময়ে, শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেয়া এসব সামগ্রী তৈরিতে বেড়ে যায় ছাপাখানার ব্যস্ততা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মৌসুমগুলোতে দ্বিগুণ হয়ে যায় এসব শুভেচ্ছা উপকরণের বিক্রি। পছন্দমতো একটি ওয়াল ক্যালেন্ডারের দাম পড়বে ৩০ থেকে ২০০ টাকা, ডেস্ক ক্যালেন্ডার ৬০ থেকে ৮০ টাকা আর ডায়েরির দাম ১০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। ক্রেতারা চাহিদা ও সাধ্যমতো এসব উপহার সামগ্রী কিনে থাকেন।
×