ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশে বাতাসে এক সুর, জনতার ঐকতান

জয় বাংলা, বাংলার জয় হবে হবে হবে হবে নিশ্চয়ই

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

জয় বাংলা, বাংলার জয় হবে হবে হবে হবে নিশ্চয়ই

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর দুর্ভাগ্য বটে। বারবারই সংগ্রাম করতে হয়েছে। অহর্নিশ সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস। এ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আসে একাত্তর। দেশপ্রেমের অনন্য নজির গড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। প্রশিক্ষিত বর্বর পাকিস্তান আর্মির সামনে সিনা টান করে দাঁড়িয়ে যান। এর পর নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ। আহারে কত মৃত্যু! রক্তে ভেসে যাওয়া! আমার মায়ের শরীর ক্ষতবিক্ষত। বিবস্ত্র বোন। ভিটেমাটি ছাড়কার। আগুনে পোড়া। এবং অতঃপর পাওয়া হয় দেশ। দেশ হলো। সংগ্রাম শেষ হলো না। যে অবিসংবাদিত নেতার হাত ধরে স্বাধীনতা, সেই শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করল একদল কাপুরুষ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেমে গেল সব। মাত্র আড়াই বছরের মাথায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো সব অর্জন। দেশ বিরোধীদের হাতে চলে গেল দেশ। পিতা হত্যার দায়, নারী ও শিশু হত্যার কলঙ্ক বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে ছোট করল। মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক দায়, রাষ্ট্রীয় মূল নীতি সব একে একে চুলোয় যেতে শুরু করল। সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার পাওয়ার কথা। পেল না। স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা পাকিস্তানী ভাবাদর্শ নিয়ে চলে এলো একেবারে সামনের কাতারে। এ অবস্থায় স্বাধীন দেশে নতুন এক যুদ্ধে নামতে হলো বাঙালীকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শুরু করতে হলো। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। একটু একটু করে সংগঠিত হতে হয়েছে। এগিয়ে যেতে হয়েছে। লড়তে হয়েছে ক্ষমতা লোভী সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, বহুকাল ধরে চলা ইতিহাস বিকৃতি, অপপ্রচার, প্রোপাগন্ডা সফল হয়েছিল। ১৯৯১ সালেও তাই ফেরা হয়নি কক্ষপথে। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। দেশ স্বাধীন করল যে দল সেই দল সরকার গঠনের সুযোগ পেল ২১ বছর পর। বাংলাদেশ জন্মের প্রকৃত ইতিহাস, লক্ষ্য উদ্দেশ্যগুলো নতুন করে সামনে এলো। দেখা গেল আলোর মুখ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু হলো। কিন্তু এত বাধা যে, বেশি দূর এগোনো সম্ভব হয়নি। আবারও পিছিয়ে পড়া। ভয়ঙ্কর পতন। এবার স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে তুলে দেয়া হলো শহীদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা! সে কী মর্মন্তুদ ইতিহাস। এই গøানি এই পরাজয় দেখতে হলো দেশবাসীকে। বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাস, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালানো হলো। সাহিত্য সঙ্গীত নৃত্য নাট্য চর্চায় বাধা এলো। বাহবা পেল ধর্ম ব্যবসা। ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে আমদানি করা হলো জঙ্গীবাদ। দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল। বিএনপির নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে চিনতে সহায়তা করল হাওয়া ভবন। এই কাশিমবাজার কুঠি থেকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র হলো। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যা করা হলো। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা রাজনীতিতে জন্ম দিল চির অবিশ্বাসের। অনাস্থার। পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হলো জনগণ। প্রতিবাদ করল। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি। এই শক্তির প্রধান প্রতিনিধি হলেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা এবার অনেক বেশি পরিপক্ব। একাত্তরের প্রত্যাশা পূরণে বদ্ধপরিকর। সোনার বাংলা গড়ার কাজে সর্ব শক্তি নিয়োগ করলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা দুই মেয়াদ পূর্ণ করলেন। এ সময়ের মধ্যে সর্ব সূচকে এগিয়ে গেল দেশ। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা হলো। উন্নয়ন অগ্রগতির রেকর্ড গড়ল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। একই সময় বিএনপি ও জামায়াত আঁকড়ে ছিল ধ্বংসের রাজনীতি। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারার নির্মম-নিষ্ঠুর রাজনীতি শুরু করে তারা। জলজ্যান্ত মানুষের গায়ে কেউ আগুন ধরিয়ে দিতে পারে? চিরচেনা এই বাংলায়, এই স্বজন সুহৃদের দেশে মানুষ হয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে কেউ? অথচ তাই হয়। যে জনগণের নামে রাজনীতি, সে জনগণকে পুড়িয়ে কাঠকয়লা করা হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে, আহা, কী পৈশাচিক হত্যাকান্ড চালানো হয় তখন! সাধারণ যাত্রীবাহী বাসে ছোড়া হয় পেট্রোলবোমা। চলন্ত বাস। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাড়ি ফেরার জন্য ব্যাকুল মানুষ। সবাইকে পুড়িয়ে মারা হয়। কর্মচঞ্চল যে মানুষটি সকালে সুস্থ, অফিস করতে বের হয়েছে, বিকেলে সে ভস্ম ছাই! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়ে ঘর থেকে বের হওয়া কলেজছাত্রীটি মুহূর্ত ব্যবধানে আর নিজেকে চিনতে পারে না। মিষ্টি মুখ পুড়ে প্লাস্টিকের মতো গলে যায়। এই নিরীহ নির্দোষ জনগণকে বাঁচাতে হিমশিম খায় সরকার। কিন্তু ‘জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ মানুষকে বাঁচানোর যুদ্ধে শেষতক জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয় না। আজ রবিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনও তো এক রকম যুদ্ধ। নষ্ট ভ্রষ্ট জামায়াতকে ধানের শীষ দিয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিএনপি। আদর্শহীন ও নড়বড়ে আদর্শের একদল নেতা ঐক্যফ্রন্ট নামে একত্রিত হয়েছেন। ইতিহাস বলছে, এখানে খুনী। এখানে রাজাকার। এখানেই মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতির নামে জায়গা করে নিয়েছে সুবিধাবাদ। তারা বলছেন, আসছে দেশে শুভ দিন/ধানের শীষে ভোট দিন। সত্যিই কি শুভ হবে আগামী? নাকি অশুভ অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে আবার? মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ টিকে থাকবে তো? স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের আস্ফালন, তাদের পতাকাবাহী গাড়ি দেখতে হবে? এত যে উন্নয়ন এগিয়ে যাওয়া, থেমে যাওয়ার জন্য? মৌলবাদ জঙ্গীবাদ অগ্নিসন্ত্রাস ফিরে আসবে আবার? অনেক প্রশ্ন। তবে প্রশ্নগুলোর মাঝেই উত্তর আছে। বাংলাদেশের মানুষ তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। ভাল কিছুরই আভাস সর্বত্র। জয় বাংলা বাংলার জয়/হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়ই...। আকাশে বাতাসে এক সুর। জনতার ঐকতান। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চাই। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন চাই। সুনির্দিষ্ট চাওয়ার ভিত্তিতে দেশজুড়ে দারুণ এক ঐক্য গড়ে উঠেছে। ঘরে ঘরে ডাক পাঠাও, তৈরি হও, জোট বাঁধ,/মাঠে কিষাণ, কলে মজুর, নওজোয়ান জোট বাঁধ...। জোট বেঁধেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। ঠিক বিপরীত ছবি বিএনপি শিবিরে। কোথাও নেই তারা। শুধু টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে বলছেন, ফেয়ার ইলেকশন হলে বিপুল ভোটে জিতবেন তারা। কিন্তু গত কয়েক দিন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে যে জবাব পাওয়া গেছে তাতে সত্যি আশাবাদী হতে হয়। তারা বলছেন, ‘ফেয়ার’ কিংবা ‘নিরপেক্ষ’ শব্দগুলোর অর্থ এখন আরও স্পষ্ট হয়েছে। এখন ‘নিরপেক্ষ’ কেউ আর থাকছেন না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণ নানা ভাব ও ভাষায় শেখ হাসিনার প্রতি আস্থার কথা জানিয়েছেন। কিছুকাল আগেও বলা হতো- আমার ভোট আমি দেব/যাকে খুশি তাকে দেব। এখন আরও সুনির্দিষ্ট করে বলা হচ্ছে- আমার ভোট আমি দেব/মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেব। তরুণ প্রজন্ম স্লোগান তুলেছে- প্রজন্মের প্রথম ভোট/মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক। শক্ত হাতে হাল ধরেছেন শেখ হাসিনাও। এ তরী বাইতে হবে/খেয়া পাড়ি দিতেই হবে/যতই ঝড় উঠুক সাগরে...। না, কোথাও কোন ঝড়ের পূর্বাভাস নেই। বরং সামনের দিকে তাকানোর আহŸান কানে আসছে। সমুখে এবার দৃষ্টি তোমার/পেছনের কথা ভুলো.../আলোর দুয়ার খোলো। আজ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আলোর দুয়ার খুলবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। ভোটের আগেই একটা জোয়ার দৃশ্যমান হয়েছে। এই জোয়ারে ভেসে যাক দেশবিরোধী অপশক্তি। এগিয়ে যাক আমার সোনার বাংলা। জয় বাংলার জয় হোক। জয় অবশ্যম্ভাবী।
×