বিভাষ বাড়ৈ ॥ গত দশ বছরের মজবুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ ধরে আবারও ক্ষমতায় আসছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এবারের নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক সব জরিপের ফল, প্রভাবশালী গণমাধ্যম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে এমন আভাসই মিলেছে। সর্বশেষ দিন শনিবার পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সব প্রতিষ্ঠানই দিয়েছে প্রায় অভিন্ন অভিমত। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়েও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রায় প্রতিটি জরিপ ও রিপোর্টে বলছে, বড় জয় নিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসছে আওয়ামী লীগ।
আজ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনের ফল কী হতে যাচ্ছে? দেশী ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রশ্নের উত্তর কয়েক মাস আগেই দেয়ার চেষ্টা করেছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফের ক্ষমতায় আসছে আওয়ামী লীগ। এ মাসেই এক জরিপে জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ ধরে আবারও ক্ষমতায় আসছে আওয়ামী লীগ-ইআইইউ ॥ শেখ হাসিনা সরকার আমলের মজবুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি পুনরায় ক্ষমতায় আসার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের বিশেষ অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তার প্রতিবেদনে একই সঙ্গে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের জনপ্রিয়তা, অভাবনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন ও বিরোধীদলগুলোর দুর্বলতার কারণেই ফের ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
ইআইইউ বিশ্বব্যাপী জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিগত ৬০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশের ব্যবসার উন্নয়ন, অর্থনীতি ও রাজনীতির ট্রেন্ড, সরকারের নীতি নির্ধারণ এবং কর্পোরেট প্রাকটিস বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ৪ ডিসেম্বর নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তাদের বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিবেদন অনুসারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশের মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করবে। আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি বেড়ে গড়ে ৭ দশমিক ৭ করে থাকবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সার্বিক বিনিয়োগে স্থিতাবস্থা থাকবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় বেশ কিছু অভিমত জরিপে শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে বিরোধী দলের পিছিয়ে থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আর সে কারণেই বিএনপি বা আরও বড় পরিসরে দেখলে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইআইইউ বলছে, নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিবেশ নির্ধারিত হবে আগামী ২০১৯-২৩ সালের মধ্যকার সামাজিক অস্থিরতার সম্ভাবনা ঘিরে। এর পাশাপাশি রয়েছে সন্ত্রাসীদের হামলার আশঙ্কা, বিরোধীদলের বিক্ষোভ ও ভাংচুর। এসবে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জনগণ নতুন সরকার নির্বাচনে ভোট দেবে। বিরোধীদলীয় বিক্ষোভ ও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় এখনই দেশজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইআউইউ প্রত্যাশা করে, ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার আসন্ন নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করবে। তবে এর আগ পর্যন্ত দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা বজায় থাকবে।
প্রতিবেদনে নানা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, চলমান ও আসন্ন রাজনৈতিক ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে সন্ত্রাসী হামলা। এতে ব্যাপক আকারে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বা প্রধান শহরগুলো টার্গেট করবে। এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে ও জাতীয় নিরাপত্তার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে আস্থাশীল অধিকাংশ মানুষ ॥ গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিক ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) জরিপে উঠে এসেছিল বাংলাদেশের রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য নানা দিক। আইআরআইর এ গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইনসাইড এ্যান্ড সার্ভের জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বিশ^াস করেন দেশ সঠিক পথেই আছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে আস্থাশীল অধিকাংশ মানুষ। তারা সন্তুষ্ট দেশের গনতন্ত্র, নিরাপত্তা, বিদ্যুত, যোগাযোগ ব্যবস্থায়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি আশানুরূপ ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের ৬২ ভাগ নাগরিক মনে করে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬৯ ভাগ নাগরিক। জরিপের ফলাফলের চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, ৬২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন দেশ সঠিক পথেই আছে। ৬৯ শতাংশ মানুষ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর সন্তুষ্ট। ৬৮ শতাংশ মানুষ দেশের বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর সন্তুষ্ট। ৫৭ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন আগামী দিনগুলোতে দেশ আরো নিরাপদ হবে। ৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
এছাড়া অধিকাংশ মানুষ আস্থার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের ওপর। ৬৬ শতাংশ মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থাশীল, ৬৪ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর আস্থাশীল, ৪৯ মানুষ তাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী। ৫১ শতাংশ মানুষ দেশের গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্ট। বর্তমান সংসদের ওপর আস্থাশীল ৫১ শতাংশ মানুষ। তবে ৪৯ শতাংশ মানুষ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থাশীল। ৬৭ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সন্তুষ্ট। ৬৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সন্তুষ্ট ৬১ শতাংশ মানুষ। আর ৮১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
এর আগে আইআরআইর গবেষণা প্রতিবেদনেও কাছাকাছি ফল পাওয়া গিয়েছিল। তাদের প্রকাশিত গবেষণা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রায় ৭৩ ভাগ নাগরিক দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার পক্ষে ‘ভাল মত’ প্রকাশ করেন। এই প্রতিবেদনেই ২৬ দশমিক ৬ ভাগ নাগরিক দেশ পরিচালনায় খালেদা জিয়ার পক্ষে ‘ভাল মত’ প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালে আইআরআই প্রকাশিত অপর এক জরিপ অনুসারে, ৬৭ ভাগ নাগরিক দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখেন। আইআরআইয়ের জরিপ রিপোর্ট শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কারণেই দল জনপ্রিয় বলে মত দেয়া হয়। এছাড়া বলা হয়, ক্ষমতায় থাকাকালে স্বৈরশাসন এবং ধর্মীয় চরমপন্থার জন্য আসন্ন সংসদ নির্বাচনে পিছিয়ে থাকবে বিএনপি ও জামায়াত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থানে তারেক রহমান।
মহাজোট ২৪৮, ঐক্যফ্রন্ট ৪৯ আসন-আরডিসি জরিপ ॥ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৪৮ আসনে জয়ী হতে পারে। এছাড়াও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৪৯ এবং স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য প্রার্থী তিনটি আসনে জয়ী হতে পারে। গত বুধবার রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (আরডিসি) এক জরিপে এসব পূর্বাভাসই দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে ৯ থেকে ১৬ ডিসেম্বর দেশের ৫১ সংসদীয় আসনে ২ হাজার ২৪৯ ভোটারের ওপর জরিপ চালিয়ে তারা এ পূর্বাভাস পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ভোটারদের ৬০ শতাংশ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। আর বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে ভোট দিয়েছে ২২ শতাংশ ভোটার। জাতীয় পার্টির পক্ষে ভোট পড়েছে ৪ শতাংশ। এই ভোটে ১০ শতাংশ মানুষ কাকে ভোট দেবেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি। আর ৩ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে অস্বীকৃতি এবং ১ শতাংশের কম ভোটার ভোট দেয়ার অনিচ্ছা জানিয়েছে।
জরিপের ফলে আওয়ামী লীগকে ভাল বলেছে, ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এবং খারাপ বলেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। বিএনপিকে ভাল বলেছে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এবং খারাপ বলেছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। জাতীয় পার্টিকে ভাল বলেছে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং খারাপ বলেছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির এক জরিপে বলা হয়েছিল, ২০০৮ সালের নির্বাচনের চেয়েও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশি ব্যবধানে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে ১৬৮ থেকে ২২০ আসনে জয়লাভ করবে।
বলা হয়েছিল, গড়ে আওয়ামী লীগের জন্য সমর্থন ৬৬ শতাংশ মানুষের, বিএনপির জন্য ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটার সিদ্ধান্ত নেননি। যারা সিদ্ধান্ত নেননি তাদের থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থনের ব্যবধান অনেক বেশি। আরও গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হচ্ছে কোন আসনেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সমর্থনের পার্থক্য ১০ শতাংশের মধ্যে নেই। শুধু ২টি আসনেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সমর্থনের পার্থক্য ২০ শতাংশ।
এর মধ্যে ২৮টিতে, অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি জরিপকৃত আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সমর্থনের পার্থক্য ৫০ শতাংশের বেশি। সমর্থনের পার্থক্য ১০ শতাংশের এর বেশি হলেই দ্বিতীয় দলটির জন্য তা পার করা মোটামুটি অসম্ভব হয়ে যায়, আর ২০ শতাংশ এর বেশি পার্থক্য থাকলে একাধিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দ্বারাও তা টপকানো সম্ভব হয় না।
প্রশংসা ও জয়ের আভাস আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যমে? ॥ নির্বাচনের দুদিন আগে ফল নিয়ে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছে প্রভাবশালী মার্কিন ম্যাগাজিন টাইম। টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের মাধ্যমে রেকর্ড চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। দুই মেয়াদে তার সরকারের ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞের ফলে এবারের নির্বাচনেও ভোটাররা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকেই বেছে নেবে।
এশিয়ার প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিকেই এশিয়ান রিভিউ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি কভারেজ দিয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর গণমাধ্যমটি এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়েও সমৃদ্ধিও পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে একটি ট্র্যাজেডির দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে এ দেশের মানুষের লড়াই অনেক আগে থেকে হলেও সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কটের সঙ্গে লড়াই করেছে দেশটি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ প্রবাসে থাকে যাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশটির অন্যতম মূল চালিকা শক্তি। ’১৮ সালের হিসাব নাগাদ বার্ষিক আয়ের প্রায় ১৮ শতাংশ রেমিটেন্স থেকে আসে যার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু শেখ হাসিনা জানে প্রবাসীদের পাশাপাশি দেশের শিল্পকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই তিনি দেশের রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ী নেতাদের রেমিটেন্স এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর খুব বেশি নির্ভর না করে কম মূল্যে পণ্য উৎপাদন করার তার যে ইচ্ছা সেটির কথা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক নিবন্ধে বলেছে, শেখ হাসিনা সরকারের আবার ক্ষমতায় আসার ইঙ্গিত দিয়েছে। সাংবাদিক মানস ঘোষ ‘ব্যাটল ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে লেখায় বলেছেন, এই নির্বাচন গত এক দশক ধরে শেখ হাসিনা যেসব নীতি ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে চলেছেন, সেগুলোর জন্য এক লিটমাস টেস্ট। তাঁর মতে, ‘শেখ হাসিনার এসব কর্মসূচীর ইতিবাচক প্রভাবই পড়া উচিত নির্বাচনে, কিন্তু ‘এন্টি ইনকামবেন্সি’, অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ, বিশেষ করে তার দলের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি তার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বেলায় তার বিরোধী পক্ষ বিএনপির ভাবমূর্তি আরও বেশি খারাপ।’ মানস ঘোষ আরও লিখেছেন, ‘বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সাংগঠনিকভাবে তারা একেবারেই ছত্রভঙ্গ। একটি নির্বাচনমুখী দল হয়েও বিএনপি যে ’১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল, সেটি ছিল তাদের জন্য আত্মহত্যার শামিল।
লন্ডন ভিত্তিক লেখক সলিল ত্রিপাঠীর একটি বিশ্লেষণ ছেপেছে ভারতের বিজনেস ওয়েবসাইট দ্য মিন্ট। সলিল ত্রিপাঠী লিখেছেন, ‘একমাত্র জ্যোতিষী আর জরিপকারীরাই নির্বাচনের ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং প্রায়শই তারা ভুল প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে বসে ভোট নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা আমার কাজ নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় ফিরে না আসে, সেটা বেশ অবাক করা ব্যাপার হবে।’ তিনি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশী গল্পগাথায় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নাকি আলোর পথের শক্তি, তারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দল আর তাদের বিরোধীরা নাকি অন্ধকারের শক্তি।
টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার বিষয়ে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ভারতের আনন্দবাজার ডিজিটালকে গত বুধবার এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরাই আসছি। কারণ, মানুষ আমাদেরই চাইছেন।’ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার বিপুল আস্থা। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হব।’
শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচনটা আগের মতো অত চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরিতার পরিবেশও নেই। বরং আমাদের পক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ্য করতাম। এবার কিন্তু একচেটিয়াভাবে সকলের সমর্থনটা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সেটা টেরও পাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতাসীন হচ্ছে- এতটা নিশ্চিত কিভাবে হচ্ছে- এমন প্রশ্ন শেখ হাসিনা বলেছেন, দশম সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে সহিংসতায় প্রায় ৬শ’ স্কুলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল, প্রিসাইডিং অফিসার হত্যা করা হয়েছিল, তৈরি করা হয়েছিল ব্যাপক জনদুর্ভোগ। সেসব কথা ‘মানুষ ভুলে যায়নি’। সে সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং তারাই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই জনগণ আবার তাকে ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ সভাপতিকে উদ্ধৃত করে আনন্দবাজার লিখেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরে সহিংসতার জন্য বিএনপি জনসমর্থনহীন হয়ে পড়ে। আর তাতেই আওয়ামী লীগের ফের সরকার গঠনের সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।