ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যদি বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট ভোটের মাঝপথে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয় তবুও বিভ্রান্ত হবেন না। কেউ যেন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করুন দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করুন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ সব দলের প্রার্থীদের নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যদি বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটের মাঝপথে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয় তবুও আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। আওয়ামী লীগের ‘নিশ্চিত বিজয় জেনে’ কেউ যেন কোনভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে সেদিকেও দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি দলের প্রতিনিধি এবং নির্বাচনী এজেন্টদের প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত অবস্থান করারও আহ্বান জানান তিনি। শনিবার রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) দিনাজপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ মাহবুবুর রহমানকে দেখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। ডাঃ মাহাবুব বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে সিএমএইচএ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীসহ সব দলের প্রার্থীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি, বিএনপি-জামায়াতের একটি চরিত্রই রয়েছে নির্বাচনের মাঝপথেই তারা ঘোষণা দিতে পারে নির্বাচনে আমরা অংশ নেব না এবং আমরা নির্বাচন বয়কট করলাম। সেক্ষেত্রে আমি আমাদের প্রার্থী এবং অন্যদলের যারা রয়েছেন তাদের বলব নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট চালিয়ে যেতে। বিএনপি যদি মাঝপথে বলেও যে, ‘আমরা নির্বাচন প্রত্যাহার করলাম বা নির্বাচন করব না’, একথা বিশ্বাস না করার জন্য আমি বলব। কারণ এটাও তাদের একটা অন্য খেলা। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়েই হয়তো তারা বলে বসবে আমরা নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। তাদের (বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট) এ কথায় বিশ্বাস করবেন না। এটা তাদের আরেকটি গেম (খেলা)। এ নিয়ে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। যারা নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী, মহাজোটের প্রার্থী এবং এজেন্টবৃন্দ রয়েছেন তাদের আমি বলতে চাই- নির্বাচনের শেষ অবধি আপনারা ভোট কেন্দ্রে থাকবেন এবং রিটার্নিং অফিসার এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের স্বাক্ষর করা ভোটের ফলাফল নিয়ে তবেই বাড়িতে ফিরবেন। আওয়ামী সভানেত্রী দলের প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, ‘আমি সতর্ক করে দিচ্ছি। ওদের (বিএনপি-জামায়াত) একটি চরিত্র আছে ওইরকম, নির্বাচন চলাকালীন সময়ে হঠাৎ বলবে- আমি নির্বাচন করব না। আমরা প্রত্যাহার করে নিলাম। আমি বলব, যারা প্রার্থী, অন্যান্য দলের এবং আমাদের যারা প্রার্থী আছেন, তাদের নির্বাচনটা কিন্তু সম্পূর্ণ চালিয়ে যেতে হবে। ভোটের রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে থাকতে হবে। ’ আজ রবিবারের একাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যদি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করতে পারি, নির্বাচনের পর আমি আপনাদের এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, বাংলাদেশে আরও বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারব। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে পারব। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ায় তাঁর দৃঢ় আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আমরা চাইব নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হোক। আমার বিশ্বাস দেশের জনগণ আমাদের ভোট দিলে আমরা ক্ষমতায় থাকব, নচেৎ নয়। আমি এটা দেশের জনগণের ওপরই ছেড়ে দিলাম। প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা ক্ষমতায় থাকলেও বিএনপি-জামায়াত আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করছে। কিন্তু আমাদের দলের সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। কেননা আমরা জানি জনগণ আমাদেরই ভোট দেবে। সেটা আমরা নিজেরাই বুঝতে পারছি মানুষের ভেতরের যে আকাক্সক্ষা। দেশের জনগণ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কেউ যেন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের যারা দলের বা জোটের নেতাকর্মী আছেন বা প্রার্থী আছেন সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ৬ জন আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা এবং ৪৫০ জনের অধিক দলের নেতাকর্মীকে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে আহত করার কঠোর সমালোচনা করেন। নির্বাচনের আগে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর গোপন হামলা চালাচ্ছে। এখন ওরা চোরাগোপ্তা হামলা করছে। তারা একদিকে দেশে-বিদেশে আমাদের বিরুদ্ধে নালিশ করে বেড়াচ্ছে, উল্টোদিকে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। আমরা ক্ষমতায়, তবুও আমাদের দলের এতগুলো মানুষকে তারা হত্যা করেছে। তবুও আমাদের নেতাকর্মীদের সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে বলব। নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ তৈরি হয়নি- বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, লেভেল করা মানে তাদের (বিএনপি-জামায়াত) এমন একটা অবস্থা করে দেয়া হোক, অতীতে তাদের যেটা অভ্যাস ছিল তা হচ্ছে- একেবারে জিতিয়ে দিতে হবে। তখন তাদের কাছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে। কিন্তু প্রতিযোগিতা করে যে জিততে হবে এটা তাদের মধ্যে নাই। বিএনপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাদের (বিএনপি) সমস্যা তারাই সৃষ্টি করেছে। একেকটা নির্বাচনী এলাকায় চারজন/পাঁচজন করে তারা মনোনয়ন দেয়। এরপর সেটা ট্রেড (বাণিজ্য) করে, অনেকটা বলতে গেলে অকশনে (নিলাম) দেয়। কে কত বেশি টাকা দেবে সে প্রার্থী হতে পারবে। তারাই এই নির্বাচন বাণিজ্যটা করে। এই মনোনয়ন বাণিজ্য করার ফলেই তাদের অনেক ভাল ভাল ক্যান্ডিডেট (প্রার্থী) এবং পুরনো যারা অর্থাৎ এলাকায় যাদের ভাল যোগ্যতা আছে, তারা অনেকেই নমিনেশন (মনোনয়ন) পায়নি। যার ফলে তারা নিজেরাই ক্ষুব্ধ হয়। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যে চার-পাঁচজনকে মনোনয় দিয়েছিল, তাদের মধ্যে থেকে হয়তো একজন মনোনয়ন পেয়েছে। বাকিরা ক্ষেপে আছে। আসলে সংঘাতটা তাদের নিজেদের ভেতরে। কারণ যারা মনোনয়ন পায়নি তারা যে মনোনয়ন পেয়েছে তাকে এলাকায় যেতে দেবে না। তারাই মারপিট করে, তারাই তাদের অফিসে আগুন দেয়। কিন্তু তারা সবসময় দোষটা আমাদের ওপর ফেলে। মানে ‘উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে’ দেয়া- এটা তাদের একটা পুরনো অভ্যাস। এই করে তারা পানি ঘোলা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংগ্রাম করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা উন্নয়নের জন্য ‘একান্তভাবে’ দরকার। বাংলাদেশে সব জায়গায় দেখলেই বোঝা যাবে গত ১০ বছরে কত পরিবর্তন হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ আরও উন্নত-সমৃদ্ধ হবে। শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কালকে (রবিবার) নির্বাচন। আমি চাই, একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। একটা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক, সেটাই আমাদের কাম্য। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দিনাজপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং তাঁর চিকিৎসার সার্বিক খোঁজ-খবর নেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আহত মাহবুবের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন। তারা হামলার বিষয়টি সবিস্তারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বর্ণনা করেন।
×