ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সালতামামি ২০১৮

বছরজুড়ে আলোচনায় চার বীমা কোম্পানির মালিকানা বদল

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

বছরজুড়ে আলোচনায় চার বীমা কোম্পানির মালিকানা বদল

রহিম শেখ ॥ আশির দশকে যাত্রা শুরু করলেও এখনও সফল অর্থনৈতিক খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়নি দেশের বীমা খাত। বরং বিভিন্ন সময় গ্রাহক ভোগান্তি আর অর্থ আত্মসাতের কারণে বদনাম কুড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। এমন অবস্থার মধ্যেই ২০১৮ সালজুড়ে আলোচনায় ছিল দেশের বীমাখাত। বীমাখাতের চারটি জীবন বীমা কোম্পানিতে চলতি বছর মালিকানা বদল হয়। কেম্পানিগুলো হচ্ছে- ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা ইসলামী লাইফ ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। জানা গেছে, স্বাধীনতার পর সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা দিয়ে যাত্রা শুরু দেশের বীমা খাতের। পরে আশির দশকে শুরু হয় বেসরকারী খাতের বীমা কোম্পানির যাত্রা। কিন্তু গেল কয়েক দশকেও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি বীমা খাত। পাশের দেশ ভারতে জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান ৫-৬ শতাংশ হলেও, বাংলাদেশে তা ১ শতাংশের নিচে। এমন অবস্থায় নতুন করে অনুমোদন পায় আরও ১৬টি বীমা কোম্পানি। এগুলোসহ বর্তমানে দেশে সাধারণ ৪৫টি ও জীবন বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৩৩টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কোম্পানিগুলো নিজেরাই প্রস্তুতি নিতে না পারায় ভূমিকা রাখতে পারেনি এ খাতে। এমন অবস্থার মধ্যেই দেশের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে ভারতীয় কোম্পানি এলআইসি। ২০১৮ সালে বীমা খাতের চারটি বীমা কোম্পানিতে মালিকানা বদল হয়। এর মধ্যে গত নবেম্বরে একদিন আগে-পরে জীবন বীমা খাতের দুটি কোম্পানির মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। কোম্পানি দুটি হলো ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। কোম্পানি দুটির ১৪ জন পরিচালক একযোগে পদত্যাগ করেন। এর আগের মাস অক্টোবরে পদ্মা ইসলামী লাইফের বেশিরভাগ শেয়ার কিনে নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এরপর পরিবর্তন আসে ডেল্টা লাইফে। মনজুরুর রহমানের পরিবর্তে ডেল্টা লাইফের চেয়ারম্যান করা হয় সাবেক সেনাপ্রধান এম নূরউদ্দিন খানকে। জানা গেছে, ব্যাংক খাতে মালিকানা পরিবর্তনের পেছনে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিলেন বীমা খাতের পরিবর্তনেও তারাই রয়েছেন। এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বীমা খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক হওয়া সত্ত্বেও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এসব পরিবর্তনের ব্যাপারে অন্ধকারে রয়েছে। সূত্রে জানা যায়, ফারইস্ট ও প্রাইম লাইফ দুই কোম্পানিতেই পরিচালক হিসেবে রয়েছে সাইফ্যাং সিকিউরিটিজ যার প্রতিনিধিত্ব করছেন নাসির বিন জালাল নামের একজন। সাইফ্যাং সিকিউরিটিজের অন্যতম পরিচালক এম কামাল উদ্দিন। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) পরিচালক হিসেবে সাইফ্যাং সিকিউরিটিজের নাম রয়েছে। এম কামাল উদ্দিন মার্কেন্টাইল লাইফ ইন্স্যুরেন্সেরও চেয়ারম্যান। চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ এসআইবিএলের মালিকানায় আসার পর ব্যাংকটিতে এম কামাল উদ্দিন পরিচালক হিসেবে আসেন। এদিকে ফারইস্ট লাইফের পর্ষদ ২০ সদস্যের। এর মধ্যে গত ২২ অক্টোবর পদত্যাগ করেছেন ছয় পরিচালক। ছয়জনের মধ্যে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিদায়ী চেয়ারম্যান এম এ খালেকের পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্টই পাঁচজন। অন্যদিকে দুই স্বতন্ত্রসহ প্রাইম লাইফের পর্ষদ ১৭ সদস্যের। প্রাইম লাইফের পর্ষদ বৈঠকে নতুন আট পরিচালকের নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। তার আগে গত ২৩ অক্টোবর পদত্যাগ করেন চেয়ারম্যানসহ প্রাইম লাইফের আট পরিচালক। প্রাইম লাইফের চেয়ারম্যান ছিলেন এম এ খালেক। পদত্যাগকারী পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান এম এ খালেক, যিনি ম্যাকসন বে লিমিটেডের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। এম এ খালেকের স্ত্রী পরিচালক সাবিহা খালেক এবং মেয়ে সারওয়াত খালেদও পদত্যাগ করেন। কোম্পানিটিতে যারা নতুন আসেন তারা হলেন গোমতী টেক্সটাইলের এমডি মোঃ আখতার, আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য সাবেক জেলা জজ মোঃ ফজলুল করিম, মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান মজুমদার, এ টি এম এনায়েতুর রহমান এবং আরিফ হোসেন ওরফে রনি। বাকি চারজন নোমান কর্পোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে নোমান হাসান ভুঁইয়া, এসবি কর্পোরেশন নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী নাজমুল হাসান ভুঁইয়া, সাইফ্যাং সিকিউরিটিজের প্রতিনিধিত্বকারী নাসির বিন জালাল এবং স্বতন্ত্র পরিচালক এ টি এম এনায়েতুর রহমান। আগে পরিচালক ছিলেন এবং এখনও আছেন, তাদের মধ্যে দু’জন ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের আত্মীয়। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, জোর করে কাউকে সরিয়ে দেয়াটা বা নিজে থেকে সরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করাটাও কাম্য নয়। আমার বরং একটা প্রশ্ন রয়েছে ব্যাংক খাতে রাতারাতি যারা এসেছিলেন, বীমা খাতেও কী তারাই আসছেন? যদি তা-ই হয়, তাহলে তো বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। আমি মনে করি, পর্ষদে রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার বার্তাটি দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ।
×