ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডিমলায় পাথর উত্তোলনের ধুম ॥ পরিবেশ বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

ডিমলায় পাথর উত্তোলনের ধুম ॥ পরিবেশ বিপর্যয়

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদী ও এর আশপাশে অবৈধ বোমা মেশিন (ড্রেজার) দিয়ে অবাধে পাথর উত্তোলন চলছে। দিন-রাত ভারি মেশিন দিয়ে পাথর তোলা হচ্ছে। পাথর উত্তোলনকারীদের প্রভাবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আইন মানছেন না কেউ। দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকা ও নদীর বিভিন্ন স্থানে অনুমতিহীন অবৈধভাবে বোমা মেশিন বসিয়ে মাটির তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনে তিস্তা ব্যারাজ ও নদী সংরক্ষণের নির্মিত অবকাঠামো হুমকির মুখে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ডিমলার গোলাম মোস্তফা জানান, অবৈধভাবে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমি গত বছর হাইকোর্টে মামলা করি। হাইকোর্ট আমার মামলা আমলে নিয়ে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনে নিষেজ্ঞাধা জারি করে। কিন্তু এখন হঠাৎ কয়েকটি প্রভাবশালী মহল জোট বেঁধে পুনরায় বোমা মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন শুরু করেছে। যা উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশাচাপানী ইউনিয়নের তিস্তা নদী ও আশপাশের এলাকায় চলছে ভারি মেশিনে পাথর তোলার জমজমাট ব্যবসা। এলাকাবাসীর অভিযোগ শতাধিক বোমা মেশিন বসিয়ে চলছে পাথর উত্তোলন। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামে দেখা গেল, তিস্তা নদীর ধারে নৌকাবোঝাই পাথর নামানো হচ্ছে। সেখান থেকে ট্রাক্টরে করে ওই পাথর নেয়া হচ্ছে সুঠিবাড়ী বাজারের দিকে। যেখানে পাথর নামানো হচ্ছে, সেখান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নদীতে ছয় থেকে সাতটি ড্রেজার মেশিনে তোলা হচ্ছে পাথর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, দিন-রাত সব সময় ভারি মেশিন দিয়ে পাথর তোলা হচ্ছে। মেশিন ও ট্রাক্টরের শব্দে এলাকায় থাকা যাচ্ছে না। যারা তুলছেন, তারা ক্ষমতাধর হওয়ায় কেউ কিছু বলতেও সাহস পায় না। প্রভাবশালীদের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন প্রভাব বিস্তার করে তারা ডিমলার ইউএনও, থানার ওসিকে ম্যানেজ করে জোর করে পাথর তুলছে। এতে জমিও ভেঙ্গে যাচ্ছে। এক গৃহবধূ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাতে ঘুমাতে পারি না বোমা মেশিনে বিকট শব্দে। তিনি স্থানীয় ভাষায় প্রশ্ন তুলে বলেন, সরকার কি ওমাক (ওদের) কইছে পাথর তুলবার? ডিমলা উপজেলা চেয়ারম্যান তবিবুল ইসলাম বলেন, খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এখানে কোন কোয়াড়ি দেয়া হয়নি। অথচ ভারি মেশিন ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন চলছে। এতে করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে, হুমকির মুখে পড়েছে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। টেপাখড়িবাড়ি বোমা মেশিন মালিক আব্দুল খালেক বলেন, আমরা বিভিন্ন সাইড ম্যানেজ করে মেশিন বসিয়ে পাথর তুলছি। গয়াবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামছুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
×