ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এই বাংলাদেশটা তোমাদের না, আমাদের!

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

এই বাংলাদেশটা তোমাদের না, আমাদের!

আজ নির্বাচন। আপনার সামনে যখন মেলে ধরা দৈনিক জনকণ্ঠের পাতায় এই লেখাটি, আপনি হয় এর মধ্যেই আপনার সাংবিধানিক অধিকারটি প্রয়োগ করে ফেলেছেন কিংবা প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভোট কেন্দ্রে যাবার। যদি আপনি প্রথম দলের হয়ে থাকেন আমি আপনার ওপর বিশ্বাস করতে চাই আপনি এই লেখাটি শেষ করে আমার সঙ্গে একমত হবেন, আর যদি আপনি এখনও ভোটটা না দিয়ে থাকেন, তাহলে অনুরোধ একটাই। আমি সুলেখক নই, লেখার প্রশংসা আমার প্রত্যাশায় নেই। তবুও কষ্ট করে একটু পড়ুন, তারপর ভোট কেন্দ্রের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ুন। নির্বাচনের প্রচারণা বেশ আগেই শেষ হয়েছে। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা, নতুন ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ, স্বাধীনতার স্বপক্ষের বাংলাদেশকে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করানো ইত্যাদি নানা বিষয় আলোচনায় এসেছে। আমি সেসব কোন বিষয়েই আলোচনায় আনব না। আমি আপনার দৃষ্টি একটি অন্য কারণে আকর্ষণ করতে চাই। সংখ্যাতত্ত্বের বিবেচনায় যারা সংখ্যায় কম তারাই সংখ্যালঘু। যেমন আমরা কথায় কথায় বলে থাকি ধর্মীয় সংখ্যালঘু। শব্দটি নিয়ে আমার আপত্তি অনেক। তারপরও বাস্তবতা এই যে, এদেশে যেসব ধর্মীয় গোষ্ঠী সংখ্যায় কম তাদের আমরা তো বটেই এমনকি তারা নিজেরাও সংখ্যালঘু হিসেবে শনাক্ত করেন। আমরা ভুলে যাই যেÑ সংখ্যার গুরুত্ব আর লঘুত্ব আপেক্ষিক একটি বিষয় মাত্র। আমাদের চারপাশে যে সীমানা তার ওপারে যে কোন দেশে আমরাই কিন্তু সংখ্যালঘু। আমরা শুধু এটুকুই ভুলে যাই না, বরং সুযোগ পেলেই আমরা ওদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেই ওরা সংখ্যালঘু। তাহলেও হয়ত চলত। আমাদের মধ্যে কেউ-কেউ আছেন যারা সীমানার ওপারে আমাদের সংখ্যালঘুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়ার বাসনায় এপারের সংখ্যালঘুদের ওপারে পাকাপাকিভাবে পাঠিয়ে দেয়ায় তৎপর থাকেন। তারা অবলীলায় এমন সব ঘটনার জন্ম দেয় যা জাতি হিসেবে আমাদের কলঙ্কিত করে। আর আমরা যে মানুষ তা নিয়েও আমাদের সংশয়গ্রস্ত করে তোলে। সিরাজগঞ্জে একজন পূর্ণিমার মা যখন দলবদ্ধ ধর্ষকদের অনুরোধ করেন তার শিশুকন্যার কাছে একে একে যাবার জন্য কিংবা গণধর্ষণের পর সাতক্ষীরার সমৃৃদ্ধ সরকারী বুলডোজার দিয়ে সমান করে যখন খেলার মাঠ বানানো হয় তখন ভাবতে বাধ্য হই জীব হিসেবে আমরা বিবর্তনবাদের সর্বশেষ ধাপে উপনীত হতে পেরেছি কি-না। আর এই ঘটনাগুলো বেশি-বেশি, বার বার ঘটেছে আজকের মতোই কোন একটি নির্বাচনের পরপরই। ঘটছে ’৯১-এ আর ২০০১-এ। ঘটেছে এমনকি নবনির্বাচিত সাংসদের উপস্থিতিতেই। বিশ্বাস না হলে ঘুরে আসুন ভোলার লালমোহনে। যেখানে নির্বাচিত সাংসদের উপস্থিতিতে পুকুরে আশ্রয় নেয়া সংখ্যালঘু নারীদের পুকুর থেকে উঠে আসতে বাধ্য করেছিল তাদের শিশুসন্তানদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে। সেখানে গেলে আজও শুনবেন ষাটোর্ধ বৃদ্ধার বিশ বছরের তরুণের হাতে ধর্ষিত হওয়ার আহাজারি। ঘটনাটি ঘটেছিল ওই আসনের নির্বাচিত সাংসদের উপস্থিতিতেই। এদেশে আরেক ধরনের সংখ্যালঘু আছে। এরা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি। ’৭০-এ এদের ভোট নৌকার বাক্সে ঢোকেনি। ’৭১-এর ৯টি মাসে এরা সর্বাত্মকভাবে এদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করেছে। এদের নির্মমতায় শহীদ হয়েছেন ৩০ লাখ মানুষ আর সম্ভ্রম হারিয়েছেন ২ লাখ অসহায় নারী। স্বাধীন বাংলাদেশেও এরা সমান তৎপর। বদলেছে এদের নাম আর প্রতীক। বদলায়নি এদের চরিত্র। এরাই মাত্র ৫টি বছর আগে আগুনের হোলি খেলায় মেতে উঠেছিল। পুড়িয়ে মেরেছে অসহায় শিশু আর অবলা পশু। এরা যে শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বার বার চোখে আঙ্গুল দিয়ে নিজ পরিচয় মনে করিয়ে দেয় তাই নয়, আমরা যারা সংখ্যাগুরু এরা বার বার আমাদেরও সংখ্যালঘু বানাতে চায়। এরা কখনও আমাদের বলে ভারতের দালাল তো কখনও ‘জয়বাংলা, জয় ধানের শীষ’ স্লোগানে। এরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। আজকে দিনটায় আমাদের একটা সুযোগ এসেছে, আমাদের সুযোগ এসেছে পাল্টা আঘাত হানার। এদের দু’চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়ার এরাই আসল সংখ্যালঘু। পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রার্থীরা যাদের ব্যালটে আর মননে, যারা আমাদের সংসদকে বানাতে চায় পাকিস্তানের কোন প্রাদেশিক সংসদ আর সাংসদদের বানাতে চায় ‘বাংলাস্তানের’ সাংসদ, আসুন আজ জন রায় দিয়ে ওদের বলে দেই এদেশটা তোমাদের না, এটা শুধুই আমাদের। এখানে কেউ সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে আর পরিচিত হবে না। আমরা সবাই বাঙালী আর বাংলাদেশটা আমাদের। আমাদের বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের কোন জায়গা নেই। লেখক : চিকিৎসক ও গবেষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×