ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি তেলের দাম

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

জ্বালানি তেলের দাম

জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে কি শুধু তেলের দামই বাড়ে! সেই সঙ্গে বেড়ে যায় আরও অনেক কিছু। একটির সঙ্গে আরেকটি বিষয় এমন ওতপ্রোতভাবে যুক্ত যে এই একটি পণ্যের দাম বাড়ার ফলে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির ঘটনা ঘটতে পারে। বিশ্বব্যাপী তাই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে শেল অয়েলের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও উৎপাদন সংকোচনের পরিস্থিতি তৈরি করছে। এর বিপরীতে চীন-ভারতের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোয় জ্বালানি তেলের চাহিদা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে উর্ধমুখী হয়ে উঠছে জ্বালানি তেলের দাম। অক্টোবরের শুরুর দিকেই প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৮৬ ডলারে উঠেছিল। আগামী বছরের শেষ নাগাদ তা ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। ওপেক (অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ) সদস্য দেশ ও ওপেকের বাইরে থাকা দেশগুলো নতুন বছরের চাহিদা অনুযায়ী তেলের উৎপাদন না বাড়ানোর কারণে আগামী বছর তেলের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা চোখ রাঙাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে চাপ পড়বে দেশের অর্থনীতিতে, তা বলাই বাহুল্য। বর্ধিত দামের কারণে আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়ও বাড়বে। বিদেশী মুদ্রার আয় না বাড়ার কারণে তা গিয়ে চাপ তৈরি করবে রিজার্ভের ওপর। এর ফলে টাকার মানও কমে যেতে পারে। অর্থনীতির ওপর এর চেয়ে বড় ধাক্কা আর হতে পারে না। তেলের দামের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে পরিবহনের ভাড়া। পরিবহন ভাড়া শুধু যে যাত্রী পরিবহনে বাড়বে তা নয়, পাশাপাশি পণ্য পরিবহনেও ভাড়া বাড়বে। সেই বর্ধিত ভাড়া তুলে নেয়া হবে বিক্রীত পণ্য থেকে। আবার উৎপাদন খাতে এই বর্ধিত মূল্য ফেলবে নেতিবাচক প্রভাব। আর অবধারিত ফল হিসেবে বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে বাড়বে মূল্যস্ফীতি, বাড়বে জনদুর্ভোগ। এই মূল্যস্ফীতি কমাতে গিয়ে আবার যদি টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য সরকারকে তাই আগাম উদ্যোগ নিতে হবে। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের ওপরে ছিল। পরবর্তী সময়ে তা কমতে থাকে এবং ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারের নিচে নেমে আসে। গত বছরের নবেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অন্যতম জোগানদাতা ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে শেল অয়েলের উৎপাদন কমে যাওয়া দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। উৎপাদন কমিয়ে পণ্যটির দাম বাড়াতে চাইছে জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকও। এরই মধ্যে এর ফলাফলও দেখা যাচ্ছে। গত অক্টোবরেই প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ৯০ ডলারের কাছাকাছি চলে যায়। বাংলাদেশ জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই এই খাতে দেশের খরচও বেড়ে যাবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। করণীয় নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে কালক্ষেপণের কোন সুযোগ নেই। অর্থনীতিকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার চাপ সামাল দেয়া কঠিন হবে না।
×