ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেখ শহিদুল ইসলাম;###;প্রাক্তন শিক্ষক, বাংলা বিভাগ;###;মালিখালী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ;###;নাজিরপুর, পিরোজপুর

ধ্বনি পরিবর্তনের নিয়ম

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ধ্বনি পরিবর্তনের নিয়ম

১. আদি স্বরাগম: উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোন কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি এলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন- স্কুল-ইস্কুল, স্টেশন-ইস্টিশন। ২. মধ্য স্বরাগম: সময় সময় উচ্চারণের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জন ধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে তাকে মধ্য স্বরাগম বলে। যেমন- রত্ন-রতন, ধর্ম-দরম, গ্রাম- গেরাম। ৩. অন্ত্যস্বরাগম: কোন কোন সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে তখন তাকে অন্ত্যস্বরাগম বলে। যেমন- দিশ-দিশা, বেঞ্চ-বেঞ্চি, সত্য-সত্যি। ৪. অপিনিহিতি: শব্দের পরের ই-কার আগে উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন-আজি-আইজ, সাধু-সাউধ। ৫. অসমীকরণ: শব্দে একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে যখন স্বরধ্বনি যুক্ত হয় তখন তাকে অসমীকরণ বলে। যেমন- ধপ+ধপ= ধপাধপ, টপ+টপ= টপাটপ। ৬. স্বরসঙ্গতি: একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দের অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন- দেশি-দিশি, বিলাতি-বিলিতি, মুলা-মুলো। প্রগত: আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে প্রগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন- মুলা-মুলো, তুলা-তুলো। মধ্যগত: আদ্যস্বর ও অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন- বিলাতি-বিলিতি। পরাগত: অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তিত হলে পরাগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন- আখো-আখুয়া, দেশি- দিশি। ৭. সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ: দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য, মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনির লোপকে স্বরলোপ বা সম্প্রকর্ষ বলে। যেমন- বসতি-বস্তি, জানালা-জানলা। আদিস্বরলোপ: যেমন- অলাবু-লাবু-লাউ, উদ্ধার-উধার-ধার। মধ্যস্বরলোপ: অগুরু-অগ্রু, সুবর্ণ-স্বর্ণ। অন্ত্যস্বরলোপ: আশা-আশ, আজি-আজ, চারি-চার। ৮. ধ্বনি বিপর্যয়: শব্দের মধ্যে দুটি ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তন ঘটলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন- রিক্সা-রিস্কা, পিশাচ-পিচাশ। ৯. সমীভবন: দুটা সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে। যেমন- জন্ম-জম্ম, কাঁদনা-কান্না। ১০. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন: কখনও কখনও জোর দেয়ার জন্য শব্দের অন্তর্গত ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হলে তাকে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বলে। যেমন-পাকা-পাক্কা, সকাল-সক্কাল। ১১. ব্যঞ্জন বিকৃতি: শব্দ-মধ্যে কোন কোন সময় কোন ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি গঠিত হয় তাকে ব্যঞ্জন বিকৃতি বলে। যেমন- কবাট-কপাট, ধোবা-ধোপ, ধাইমা-দাইমা। ১২. ব্যঞ্জনচ্যুতি: পাশাপাশি সম-উচ্চারণের দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে তার একটি লোপ পেলে তাকে ব্যঞ্জনচ্যুতি বলে। যেমন- বউদিদি-বউদি, । ১৩. অন্তর্হতি: পদের মধ্যে কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্তর্হতি বলে। যেমন-ফাল্গুন-ফাগুন, ফলাহার-ফলার। ১৪. অভিশ্রুতি: বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন- শুনিয়া-শুনে, বলিয়া-বলে, হাটুয়া-হেটে। ১৫. র-কার লোপ: আধুনিক চলিত বাংলায় অনেক ক্ষেত্রে র-কার লোপ পায় এবং পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়। যেমন- তর্ক-তক্ক, করতে- কত্তে, করলাম-কল্লাম।
×