ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চলচ্চিত্রের জন্য বছরটি সুখকর ছিল না

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

চলচ্চিত্রের জন্য বছরটি সুখকর ছিল না

গৌতম পান্ডে ॥ দেখতে দেখতে আরও একটি বছর শেষ হতে চলেছে। আর কয়েকদিন পরেই ২০১৮ সালকে বিদায় জানিয়ে ২০১৯ সালকে বরণ করে নেবে বিশ্ববাসী। বাংলাদেশের মানুষও এই ইংরেজী বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণে বিশ্ববাসীর মতো অংশ নেবে। কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য বছরটি তেমন ভাল যায়নি। বিনোদন অনুসঙ্গ বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্রও তেমন ছাপ ফেলতে পারেনি দর্শক হৃদয়ে। বাংলা চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণার পরও কেন সেই শিল্প দর্শক হৃদয়ে তেমন স্থান করে নিতে পরলো না এ নিয়ে নানা মহলে নানা প্রশ্ন। বলতে গেলে এক কথায় ব্যবসায়িক দিক দিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এটি ছিল বিপর্যয়ের বছর। ফ্লপ চলচ্চিত্রের হিড়িক পড়ে গেছে বছরটিতে। সেখানে হিট, সুপারহিটের কোন চলচ্চিত্রের কথা বলাবাহুল্য। চলচ্চিত্র শিল্পে হতাশার পাল্লা ভারি হতে চলেছে বছরের পর বছর। চলতি বছরেও হতাশা কমেনি চলচ্চিত্র শিল্পে। হিসেব করে দেখলে সেরা দশটি চলচ্চিত্রও ব্যবসায়িক তালিকায় খুঁজে পেতে কষ্ট হবে। অবশ্য ভাল কিছু ছবিও দর্শক প্রেক্ষাগৃহে পেয়েছে। তবে বছরজুড়ে সেই সংখ্যাটা ছিল অনেক কম। ২০১৭ সালে মোট ৬৩টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও এ বছর এ পর্যন্ত যৌথ, আমদানি, দেশীয় সবমিলে মোট ৫৬টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। বছরজুড়ে আমদানিতে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে ১০টি। যৌথ প্রযোজনায় ৩টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বছরের শেষ সপ্তাহে আরও ২-১টি দেশীয় চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে পারে। তবে আসন্ন নির্বাচনের কারণে তা হয়ে ওঠেনি। এ বছর আলোচিত দর্শকপ্রিয় দেশীয় চলচ্চিত্রের তালিকায় আছে ‘পোড়ামন টু’, ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়া’, ‘সুপার হিরো’, ‘দেবী’ ও ‘দহন’। এ ছাড়া ‘স্বপ্নজাল’, ‘জান্নাত’, ‘ক্যাপ্টেন খান’, ‘কমলা রকেট’, ‘সুলতান’, ‘বিজলী’ নামের চলচ্চিত্রগুলো মোটামুটি দর্শকরা গ্রহণ করেছে। যৌথ প্রযোজনায় মুক্তি পায় ‘স্বপ্নজাল’, ‘নুরজাহান’ ও ‘তুই শুধু আমার’ নামে তিনটি চলচ্চিত্র। আমদানি করা চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘জিও পাগলা’, ‘ইন্সপেক্টর নটিকে’, ‘ভাইজান এলো রে’, ‘সুলতান’, ‘ফিদা’, ‘পিয়া রে’, ‘নাকাব’, ‘আমি শুধু তোর হলাম’, ‘গার্লফ্রেন্ড’, ‘চালবাজ’ ও ‘ভিলেন’ নামের চলচ্চিত্রগুলো দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এর মধ্যে শাকিব খান অভিনীত ‘ভাইজান এলো রে’ চলচ্চিত্রটি দর্শকরা গ্রহণ করে। শাকিব খান অভিনীত এ বছর মোট ৮টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এবারও জনপ্রিয়তা এবং চলচ্চিত্র মুক্তির দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন এই তারকা। বুবলী অভিনীত ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়া’ ও ‘সুপার হিরো’ চলচ্চিত্র দুটি থেকে সাড়া পান। এরপরই বলতে হয় নতুন মুখ সিয়াম ও পূজা চেরির নাম। জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় এই জুটির ‘পোড়ামন টু’ ও ‘দহন’ চলচ্চিত্র দুটি দর্শক মোটামুটি গ্রহণ করে। সিয়াম সম্প্রতি বিয়ের পিঁড়িতেও বসেন। সিয়ামের স্ত্রীর নাম অবন্তী। এ ছাড়া জয়া আহসান, চঞ্চল ও শবনম ফারিয়া অভিনীত ‘দেবী’ চলচ্চিত্রটি দর্শকরা বছরের শেষদিকে এসে গ্রহণ করে। বিশেষ করে সিনেপ্লেক্সের দর্শকরা চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য ভিড় জমায়। তবে অতিমাত্রায় ধূমপানের দৃশ্যের কারণে বছরে শেষ দিকে চলচ্চিত্র ব্যাপক সমালোচিত হয়। প্রিয়দর্শিনীখ্যাত মৌসুমী এবং ওমর সানী অভিনীত ‘আমি নেতা হবো’ চলচ্চিত্রটি দর্শকরা মোটামুটি গ্রহণ করে। এ ছাড়া মৌসুমী ফেরদৌসের বিপরীতে ‘পবিত্র ভালবাসা’, ‘লিডার’, ‘পোস্টমাস্টার ৭১’, অমিত হাসানের বিপরীতে ‘নায়ক’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় ছিলেন। ববি অভিনীত ‘বিজলী’, আরিফিন শুভ অভিনীত এবং চিত্রনায়ক আলমগীর পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’, মিমের ‘পাষাণ’, ‘সুলতান’, সাইমন ও মাহির ‘জান্নাত’, জাকিয়া বারী মম ও আনিসুর রহমান মিলনের ‘আলতাবানু’, ‘স্বপ্নের ঘর’, বাপ্পি ও অধরার ‘নায়ক’ চলচ্চিত্রগুলো কিছুটা আলোচনায় ছিল। চলতি বছর বড় পর্দায় অভিষেক হয় দীপা খন্দকার, সিয়াম, পূজা, রিপন গাজী, ফারজানা রিক্তা, শাহেন খান, মুন্না, রোকন, টয়া, শবনম ফারিয়া, শানু, গোলাম ফরিদা ছন্দা ও অর্ষার। চলতি বছর মিশা সওদাগরের পাশাপাশি খল চরিত্রে অভিনয় করে অমিত হাসানও বেশ প্রশংসা পেয়েছেন। এদিকে চলচ্চিত্রাঙ্গনে বছর শেষে বরেণ্য নির্মাতা আমজাদ হোসেন ও নির্মাতা সাইদুর আনাম টুটুলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
×