ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নয় কিমিজুড়ে সেতুর কর্মযজ্ঞ ॥ পদ্মায় সাফল্যের ঝিলিক

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

 নয় কিমিজুড়ে সেতুর কর্মযজ্ঞ ॥ পদ্মায় সাফল্যের ঝিলিক

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল বসে গেছে ছয়টি। এর মধ্যে টপ সেকশন পর্যন্ত হয়েছে একটি। বাকি পাঁচটির বটম সেকশন সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বে প্রথম বারের মতো পদ্মায় ট্যাম পাইল স্থাপনের সাফাল্যই নয় এখন পদ্মায় পুরো সেতু প্রকল্প এলাকায় সাফল্যের ঝিলিক। প্রায় ৯ কিলোমিটার প্রকল্প এলাকার সবখানেই এখন সেতুর অগ্রযাত্রার নিদর্শন চোখে পড়ে। কত বড় স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে সাদা চোখেই বোঝা যাচ্ছে। প্রকল্পে কর্মরত দেশী বিদেশী প্রকৌশলী ও শ্রমিকদেরও এই সেতুর সাফল্যগাথা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। সব আলোচনায়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। পদ্মা সেতুতে তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন হুমায়ুন নামের একজন দায়িত্বশীল। তিনি পুরো প্রকল্পের নানা ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, বাঙালী হিসেবে আমরা গর্ব করতে পারি যে শেখ হাসিনার মতো একজন লিডার আমাদের আছে। শুধু পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই বহির্বিশ্বে বাঙালী অবস্থান অনেক শক্ত হয়েছে। এছাড়াও তার সাহসী ও মানবিক নানা ঘটনা বাংলাদেশের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এদিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণে থাকা দুই হাজারেরও বেশি জনবল এখন রবিবারের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে। যাদি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল ক্ষমতায় আসতে পারে তবেই সেতুর বাকি কাজও সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্তি ঘটবে। স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন হবে। আর তা না হলে কি হবে এই নিয়েও কারও কারও মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। তবে সকলেই প্রার্থনা করছে নির্বাচনের ফল যেন এমনটাই হয়, যাতে বাঙালীর এই সাফাল্যে কোন বাধা সৃষ্টি না হতে পারে। কারণ ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন। কিন্তু বাকি ৮ বছরে কিছুই হয়নি। বরং মাওয়া থেকে এই সেতু সরিয়ে নেয়ার নানা অপচেষ্টা চালিয়েছে। রাজনীতির নানা নোংরা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে আবার পদ্মা সেতু বাস্তায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু সেখানে নানা বাধা আর ষড়যন্ত্র। বিশ্ব ষড়যন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে সেতু তৈরি করে চলেছেন। নিজস্ব অর্থায়নের এই সেতু এখন গোটা জাতির গর্ব। মোঃ হুমায়ুন এসব কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হলেন। বললেন, দেশকে এগিয়ে নিতে যারাই অবদান রাখছেন জাতি তাদের ভুলবে না। উত্তাল পদ্মায় সেতুটি নির্মাণে নানা রকমের কঠিন চ্যালেঞ্জ এখন। পদ্মা স্রোতে যেমন বৈচিত্র্যতা মাটির তলদেশও বৈচিত্র্য। তাই প্রায় সাড়ে ৪শ’ ফুট গভীর পর্যন্ত পাইল স্থাপনের পরও নানান রকমে প্রযুক্তি এবং ডিজাইনেও বৈচিত্র্যতা আনতে হচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে মূল সেতুর ৪২ খুঁটির ২২টিরই নক্সায় পরিবর্তন আনতে হয়। বৃদ্ধি করতে হয় ২২টি পাইল। প্রথম ডিজাইনে নদীর ভেতরে ৪০টি খুঁটিতে ৬টি করে পাইল স্থাপনের ডিজাইন ছিল। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে মাটির তলদেশের মাটি নরম থাকায় ২২টি খুঁটিতেই ৭টি করে পাইল বসাতে হচ্ছে। শুধু সেখানেই ক্ষ্যান্ত নেই। আবার ১১টি খুঁটিতে বিশ্বের প্রথম খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল স্থাপন শুরু হয়েছে। পুরো সেতুর ৭১ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছর সেতুর কাজ হয় ২৩ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তে এই সেতু ঘিরে বাঙালীদের বিশেষ সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের মর্যাদা বিশে^র বিশেষ উচ্চতায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির অপবাদ শুধু মুছে যায়নি, বাঙালীর বীরত্বগাথা এখন জ্বলজ্বল করছে। সেতুটি চালু হলে দেশের যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নতুন দিগন্ত রচনা ছাড়াও গোটা দেশে এর প্রভাব পড়বে। দেশের জিডিবি প্রায় সোয়া শতাংশ বেড়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তাই এই পদ্মা সেতুকে ঘিরে জাতীয় নির্বাচনেরও প্রভাব পড়ছে। প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে পদ্মা সেতু। এদিকে পদ্মা সেতুকে ঘিরে দু’পারের জনপদের চেহারা পাল্টে গেছে। নতুন নগরীতে এখন রূপান্তর হয়েছে। নতুন নতুন বসতি এবং স্থাপনা ও হাট-বাজারেরও চেহারা পাল্টে গেছে। দেশী বিদেশী নাগরিকদের বসবাসের কারণে বিশেষ এখন পরিবেশ বিরাজ করছে এখানে।
×