ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এথিকের ‘আলোর অপেরা’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

 এথিকের ‘আলোর অপেরা’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময়টা বড্ড ধূসর। সমাজের অস্থিরতায় অন্ধকার নেমে আসে শিল্পচর্চায়। তাই বলে থেমে থাকে না শিল্পিত জীবন। ছুটে চলে আলোর সন্ধানে। সেই আলোর যাত্রায় নাটকের নাট্যকার বা নির্দেশককে ছাপিয়ে অভিনেতা খুঁজে নেয় নিজস্ব সত্তাকে। অন্ধকার পেরিয়ে স্বতন্ত্র স্বাধীনতার পথে ধাবমান অভিনয়শিল্পীর কথা বলা তেমনই নাটক ‘আলোর অপেরা’। প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে নাট্যদল এথিক। আর এথিকের পঞ্চম প্রযোজনাটির মাধ্যমে ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক। উৎপল দত্তের ‘টিনের তলোয়ার’ ও শম্ভু মিত্রের ‘চাদ বণিকের পালা’র নির্যাসে নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন অপু শহীদ। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে নাটকটির কারিগরি মঞ্চায়ন। নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীর আগে ছিল সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা। এ পর্বে প্রযোজনাটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সভাপতিত্ব করেন এথিকের সভাপতি রেজানুর রহমান। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক অপু শহীদ বলেন, প্রকৃত অর্থে এ নাটকটি হয়ে উঠেছে টিনের তলোয়ার ও চাঁদ বণিকের পালার মিথষ্ক্রিয়া। আলোর অপেরা শুরু হয় আলোর ফোয়ারা দিয়ে। ক্রমান্বয়ে আমরা যেতে থাকি অন্ধকারের দিকে। নাটকের শেষ দৃশ্যে এসে সবাই আলোর সন্ধান করে। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সবাই যেতে চায় আলোর সন্ধানে। এভাবেই বর্তমান সময়কে ধরতে চাওয়া হয়েছে প্রযোজনাটিতে। সালভাদর দালির ঘড়ির মতো সময় এখানে গলে গলে পড়ে না। তাই বলে সময় খুব একটা সুস্থিরও নয়। সব মিলিয়ে এই অস্থির সময়ের মাঝে আশা জাগানিয়া চিত্রভাষ্য মেলে ধরা হয়েছে এ নাটকে। আলোর অপেরার কাহিনীতে উঠে এসেছে নাটকের ভেতরে নাটক। নাট্যদলে বিরাজমান নানা সঙ্কট। অভিনেত্রী সঙ্কট থেকে মহড়া কক্ষ ও হল বরাদ্দের সঙ্কট। এর মাঝেই বারংবার পুরনো ধাচের নাটক সাগর সুন্দরীর প্রদর্শনী চালিয়ে যায় দলটি। পাশাপাশি শুরু করে চাঁদ বণিকের পালা নাটকের মহড়া। এরপর নাটকের ভেতর ঘটতে থাকে আরও নাটক। নাট্যতত্ত্বে স্নাতক সম্পন্ন করা অর্কিড খান চায় প্রথার বাইরে বেরিয়ে নাটকে নানান ভাংচুর করতে। কিন্তু দলে এসে তার মনে হয়, থিয়েটার মানে শুধু তত্ত্ব নয়। প্রয়োগে রয়েছে বহুমুখী জটিলতা। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায় সে। রূপসা নামের মেধাবী মেয়েটি অভিনেত্রী হতে চাইলেও পরিস্থিতির কারণে হয়ে ওঠে আলালের আশ্রিতা। এমন অগণিত সঙ্কটের কবলে পড়ে নতুন নাটক মঞ্চায়নে ব্যর্থ হয় দলটি। ক্ষুব্ধ দলের সদস্যরা হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। এমন পরিস্থিতিতে দলপ্রধান আবার সেই পুরনো নাটকের প্রদর্শনীর আয়োজন করে। কিন্তু পুরনো নাটকের মাঝে চলে আসে নতুন নাটকের নির্যাস। মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনয়শিল্পীরাই হয়ে ওঠে সর্বেসর্বা। সাগর সুন্দরী নাটকে অভিনয় করতে অভিনেতারা ঢুকে পড়ে চাঁদ বণিকের পালা নাটকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন নাট্যকার বা নির্দেশক। সকল শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তির পথ খুঁজে নেয় অভিনেতারা। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন মিন্টু সরদার, মনি কাঞ্চন, ইমতিয়াজ আসাদ, রাতুল মীর, এনামুল মীর, ইমতিয়াজ আসাদ, হাসনে আরা ডালিয়া, রবিউল হাসান রুবেল, সুকর্ণ হাসান, সাবা নূর. রুবি খান, উম্মে হাবীবা, সবুজ রহমান প্রমুখ। ঠান্ডু রায়হানের আলোক পরিকল্পনায় মঞ্চ ও পোশাক পরিকল্পনা করেছেন ফয়েজ জহির। অনিকেত পালের কোরিওগ্রাফিতে আবহসঙ্গীতে ছিলেন শিশির রহমান।
×