ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফোনালাপ ফাঁস

তারেক মওদুদরা ভোট বর্জনের পক্ষে, ফখরুল মিন্টুরা বিপক্ষে ॥ নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপিতে ভাঙ্গনের সুর

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

 তারেক মওদুদরা ভোট বর্জনের পক্ষে, ফখরুল মিন্টুরা বিপক্ষে ॥ নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপিতে ভাঙ্গনের সুর

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ভোট গ্রহণের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে নির্বাচন বর্জন ইস্যুতে চরম বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া ইস্যুতে নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। দল ভেঙ্গে যাওয়ার ইঙ্গিতও দিচ্ছেন অনেকে। শুক্রবার বিএনপির শীর্ষ কয়েক নেতার টেলিফোন আলাপ ফাঁসে বেরিয়ে এসেছে দলের বিরোধের চিত্র। তারেক রহমান, মওদুদ আহমেদসহ এক পক্ষ এখন নির্বাচন বর্জন করে দলের ৩০০ প্রার্থী নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে বসে পড়ার পক্ষে। তবে মহাসচিব মির্জা ফখরুল, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ আরেক পক্ষ নির্বাচন বর্জনের বিপক্ষে। মওদুদের ফোনও রিসিভ করছেন না ফখরুলসহ অন্যরা। এদিকে নির্বাচনে গেলে জামায়াত-শিবির নেতাদের এজেন্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচনের পক্ষে থাকা বিএনপি নেতারা। তারা টেলিফোন আলাপে বলেছেন, আমাদেরগুলো (নিজ দলের নেতাকর্মী) ভীতু। শিবির নেতাদের এজেন্ট কর। নির্বাচন বর্জনের পক্ষে থাকা নেতাদের অবস্থান সম্পর্কে জানা গেছে, বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আশা করেছিলেন, নির্বাচনের আগেই তাদের পক্ষ নিয়ে সারাদেশে জনগণ রাস্তায় নেমে আসবে। নির্বাচনে সরকার শক্ত অবস্থান নিলেও রীতিমতো গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। তবে কর্মীদের জাগাতে পারছেন না বিএনপি নেতারা। নেতারা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে বলেছেন, কর্মীদের সকাল থেকে একসঙ্গে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। নেতার বলেছেন ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে। কিন্তু ভোটের সময় যতই এগিয়ে আসছে ততই কর্মীরা গর্তে ঢুকে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মীরা বলছেন, নেতারা তাদের আগুনে ঝাঁপ দিতে বলছেন, কিন্তু রক্ষার পথ বাতলে দিতে পারছেন না। এভাবে লক্ষ্যহীনভাবে তারা আর আত্মঘাতী হতে রাজি নন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নানা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, ক’দিন পরেই সব বদলে যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পরেই প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন নিরপেক্ষ হয়ে যাবে। কর্মীরা বলছেন, ড. কামালের আশ্বাসে কর্মীরা মাঠে নেমে এখন বেকুব বনে গেছেন। বড় বড় নেতারা ঘর থেকে বের হন না বলেও আপত্তি উঠেছে। এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, সেনা মোতায়েন হলেই পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যাবে। তার ভাষায়, ‘আওয়ামী লীগ ভয়ে পালাবে’। বিএনপি আশা করেছিল সেনাবাহিনী তাদের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নেবে। কিন্তু সেটাও হয়নি। সেনাবাহিনী নিরপক্ষে অবস্থানে থাকায় বিএনপি নেতারা এখন বলছেন, সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থতি বিএনপি কর্মীদের জন্য আরও খারাপ হয়েছে। ঠিক এমন এক অবস্থায় হতাশ বিএনপির একপক্ষ নির্বাচনে গেলে সরকারকে বৈধতা দেয়া হবে বলে ধরে নিয়ে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলছেন। এ পক্ষ বলছে, এভাবে নির্বাচনে গেলে সরকারকে কেবল বৈধতাই দেয়া হবে। নিজেরা ১৫ থেকে ২০টির বেশি আসন পাবে না। তারেক রহমানের কাছে এ পক্ষটি ফখরুলসহ অন্যদের ষড়যন্ত্রকারী বলেও আখ্যা দিয়েছেন। বিএনপির বিরোধের কথা এতদিন নানা সূত্র থেকে গণমাধ্যমে এলেও নেতারা কিছু বলতে রাজি হচ্ছিলেন না। তবে শুক্রবার দলটির অন্যতম নেতা মওদুদ আহমদের এক দীর্ঘ টেলিফোন আলাপে বেরিয়ে পড়েছে বিরোধের ভয়াবহ চিত্র। সামাজিক মাধ্যমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের অডিও কল ফাঁস হয়েছে শুক্রবার সকালে। যেখানে তাকে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ফাঁস হওয়া অডিও কলে মোবাইলের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে বুলু নামে সম্বোধন করেছেন মওদুদ। কিন্তু তার কোন পরিচয় সেই ফাঁস হওয়া মোবাইল কল থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দলটির সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি নেতা বরকতউল্লাহ বুলু হতে পারেন এ নেতা। ফাঁস হওয়া অডিও কলে বিএনপির মহাসচিবকে নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন ব্যারিস্টার মওদুদ। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। ১০ মিনিট ১২ সেকেন্ডের সেই অডিও কলে বিএনপির বর্তমান পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন মওদুদ। যেখানে তারেক জিয়া থেকে শুরু করে ড. কামালদের নাম উঠে এসেছে। প্রথমেই কথা বলেন বুলু। তিনি বলেন, মওদুদ ভাই আসসালামু আলাইকুম। মওদুদ: হ্যাঁ বুলু, বল ভাই। বুলু : এখন কি করার, ২৮ তারিখ টাকা খরচ করে এখন বসে থেকে লাভ কি? ৩০০ আসনে আমরা ইয়ে করে দেই। মওদুদ : এখন শোন, তুমি ত জানো, এটা নিয়া আমি গত ১৫ দিন যাবৎ বলে আসতেছি। এর কথা শোনে না। এখন তোমার মহাসচিব আমার টেলিফোন ধরে না। বুলু : মহাসচিব আপনার টেলিফোন ধরে না। মওদুদ : টেলিফোন ধরে না। বুলু : মহাসচিব কি সাপের ঠেঙ দেখছে কি না ... মওদুদ: হ্যাঁ, সারাদিন আমার টেলিফোন ধরে নাই কালকে। রাত্রে বেলা তারেক রহমান আমাকে ফোন দিল, আমি তাকে বললাম, ঐ মহাসচিব ফোন কেন ধরে না তা নিশ্চয়ই তিনি জানেন। মহাসচিবকে আমে লাস্ট যেবার টেলিফোন করেছি, খুব কড়া ভাষায় কথা বলেছি। হ্যাঁ, খুব কড়াভাবে বলেছিলাম। সে গত দিন না পরশু দিন স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে ... হ্যাঁ পরশু দিন. মিটিং ডাকছিলো। আমি বলেছি, মিটিংয়ে আমি যাবো না। আমি বলেছি, আমার মতামত ত আমি দিয়েই দিয়েছি। মহাসচিব তোমাকে পরে মনে হয় বলছে, অল্প কয়েক জন এসেছে, বেশি ভাগ আসেনি। যাই হোক। তারেক রহমানকে আমি এটা পুরাটা বলেছি। বলেছি, দেখেন ইলেকশন ত আমাদের করার কথা ছিলো আন্দোলনের জন্য। ত আপনাদের আন্দোলনের ইস্যুটা কী? আন্দোলনের ইস্যু কোথায় তৈরি করছেন আপনারা? আমরা বারবার বলেছি যে ৩০০ ক্যান্ডিডেটকে যদি ঢাকায় ডাকা হইত। আর ঢাকায় আমরা যদি ৩০০ ক্যান্ডিডেট যেখানে ইচ্ছা বইসা যাইতাম, এটা দুনিয়া কাঁপায়া দিত একদম। আমরা বলতাম, আমরা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করব না। ফিনিশ। নাহলে বলতাম, ২০ দিন ১৫ দিন নির্বাচন পিছায়া দাও। এখনো টাইম আছে। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করো। গত ৮-১০ দিনে যত মামলা হইছে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং যত জনকে জেলে নেয়া হইছে তাদের মুক্ত করতে হবে। এগুলো জেনুইন কেস। এগুলো জেনুইন ডিমান্ড কিন্তু। বুলু: হ্যাঁ হ্যাঁ। মওদুদ : কিন্তু করে না ত। কি বলব? তারেক রহমান বলল আপনারা সিনিয়াররা বইসা আপনারা বলেন। আমি বললাম, সিনিয়ারদের করার কি আছে এইখানে। সিনিয়াররা ... একটা মিটিং পর্যন্ত সে করল না, মহাসচিব। একটা সে কি বলে ... ঐটা সংবাদ সম্মেলন করে। আরে ড. কামলা হোসেনের সংবাদ সম্মেলন কইরা কি আমাদের আন্দোলন হবে নাকি? তুমি যদি নির্বাচন এভাবে ...। বুলু : সবচাইতে বড় হাতিয়ার, আমরা ৩০০ জন যাই, গিয়া নির্বাচন কমিশনের সামনে বইসা যাইতে হবে। ডিমান্ড ফিল কর (দাবি পূরণ কর) না হলে আমরা নির্বাচন করব না। এটাইত আন্দোলন। মওদুদ : হ্যাঁ, এটাইত আন্দোলন হইত। বিরাট একটা আন্দোলন। তারপরও যদি ৩০ তারিখ নির্বাচন করত, তারপর ত আমাদের এই আন্দোলন কন্টিনিউ করত। বুলু : হ্যাঁ হ্যাঁ। মওদুদ: এখন ৩০ তারিখে এই নির্বাচন যদি একবার হয়ে যায়। আমি বললাম তারেক রহমানকে। যে ৩০ তারিখে ঘোষণা দিয়ে দিবে, যে নির্বাচন সুষ্ঠু হইছে। নির্বাচনে কোন অসুবিধা হয় নাই। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। নৌকার জয়জয়কার হয়েছে এবং দেশের মানুষের আমাদের ওপর কনফিডেন্স আছে। এইসব বইলা টইলা আমাদের আন্দোলন করার আর কোন সুযোগ থাকবে না তখন। বুলু :না থাকবে না। মওদুদ : তা উনি বললেন যে, হ্যাঁ, এটা ঠিক বলেছেন। কিন্তু আপনারাই ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, যাবেন নির্বাচনে ... (আমি বললাম) হ্যাঁ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নির্বাচনে যাব আন্দোলনে যাওয়ার জন্যে। বুলু : হ্যাঁ, আমরা ত আন্দোলনের একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করলাম। কিন্তু বাকিটা ত কার্যকর করতে হবে। মওদুদ : এক্সেক্টলি, এক্সেক্টলি। ত এইটা বলেছে। যাই হোক অনেকক্ষণ কথা বলেছে। আমার যা বলার ছিলো সব বলে দিছি। বুজছ। আজকে ত দেখ, কালকে আমার গাড়ি ভাঙ্গল। বুলু : আমি ত বের হই নাই। আমার এখানেও ত ঐ অবস্থা। আমি ছিলাম, অ্যাডভোকেট রহিম ছিলো ... এমন অবস্থা .. গুলি ... ইট ... লাঠি পিটা, মানে জঘন্যভাবে। মওদুদ : তারপরে সেনাবাহিনী আসার পরে। অবস্থা আরো অবনতি হয়েছে। বুলু : জি, আরো অবনতি হইছে। মওদুদ : আমার এখানে ত সেনাবাহিনী আসা পরে, কালকে নামছে, কালকেই আমার গাড়ি ভাংচুর হইছে। আমি উনাদের অফিসারদেরকে ফোন করছিলাম। ফোন করে সব বলেছি। কর্নেল মনির হোলেন তোমাদের নোয়াখালীর ইনচার্জ। লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ভালো মানুষ। উনাকে বললাম। উনি সব শুনলেন। বললেন, ঠিক আছে আমি দেখব। রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করলাম। আমি বললাম আমার জীবনের নিরাপত্তা নাই। আমার জীবনের নিরাপত্তা নাই, কি নির্বাচন, প্রার্থীর জীবনের নিরাপত্তা নাই যেখানে সেখানে ভোটারদের জীবনের নিরাপত্তা আসবে কোথা থেকে? এইগুলা ধাপ্পাবাজ। ওরাও বলে যে, আমি দেখছি। আপনার জীবনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব। আমি বলেছি, আমার জীবনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা যতক্ষণ না করবেন ততক্ষণ আমি নির্বাচনী প্রচারণায় যাব না। আমার লাইফ সিকিউর ফার্স্ট। কিন্তু কি আছে এইগুলা বইলা। কোন লাভ আছে? রিটার্নিং অফিসার বল, পুলিশ বল আর ইয়ে বল- সবই একই। বুলু : এখন আমাদের ত ঐ সিদ্ধান্তটাই নেয়া উচিত ছিলো যে ঢাকায় গিয়া আমরা বসে যাইতাম। এখানে ত অনেকটা আমরা সাকসেসফুল হইতে পারতাম। এখন মহাসচিব ত ...। মওদুদ : আমি কি বললাম, কালকে সারাদিন আমি তাকে ফোন দিয়ে, শুধু তাকে কেনো, তার পিএসকেও ফোন দিয়ে ...। বুলু : জি ফোন ধরে না। না না আমাদেরও ফোন ধরে না। মওদুদ : ফোন ধরে না। সে ফোন ধরে না। কালকে মিন্টু সাহেব ও আমার ফোন ধরেন নাই। রাত্রে নাকি ফোন করছিলো আমারে। যাই হোক। বুলু : আমিও ফোন করে পাইতেছি না। মওদুদ : মহাসচিবকে ফোন করে দেখ পাও কিনা। বুলু : না, ধরে না। মওদুদ : ফোন ধরে না। তারা কি স্বপ্ন দেখতেছে আমি জানি না। তারা কি এটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে কিনা আমি জানি না। কামাল হোসেন সাহেব যেই ভদ্রলোক মানুষ। কামাল হোসেন সাহেব এই গভমেন্টকে লিজিটিমাইজড করবে। তাদেরকে লিজিটিমাইজড করবে। তাদেরকে দিবে। আর এর মধ্যে ফাঁকেফোকে যারা আসবে না। এই ২০, ২২, ২৩ ফাঁকেফুকে নাম্বারিংয়ে তাদের জান শেষ করে দিবে। টুকরা টুকরা করে দিবে নির্বাচনের পর। মামলা মোকদ্দমা দিয়া, এইটা দিয়া সেইটা দিয়া। একটাও টিকতে দিবে না। এই যে পৌর মেয়রদেরকে কী দিছিলো? বুলু : না। মওদুদ : পৌর যে ৪ জন মেয়র ইলেক্টেড হইছিলো একজনকেও কী কাজ করতে দিছে? বুলু : না। মওদুদ : এই এমপিদেরকে, যারা এমপি হয়ে আসবে এবার। যদি আমরা নির্বাচনে ... কি বলে ... হোয়াটএভার উইল বি রেজাল্ট। আমরা যদি আন্দোলন সৃষ্টি করতে না পারি। তাহলে ... এই মেম্বাররা একজনও ফাংশন করতে পারবে না। বুলু : যাই হোক, ব্যবস্থা একটা ত খুঁজে বাইর করতে হবে। এর ত কোন বিকল্প নাই। ফারুকের অবস্থাও ত কালকে দেখি, খোকনের ঐখানে, আজিম ভাইয়ের ঐখানে হইছে। এ্যানীর ঐখানে হইছে। মওদুদ: এ্যানীর হাত ভেঙ্গে গেছে। বুলু : মানে মিছিলে হামলা হয়। কিন্তু প্রার্থীর ওপরে হামলা হয়, সিনিয়র নেতাদের ওপর হামলা হয়, এই ঘটনা এইবারই আমরা ... এটা নজিরবিহীন। মওদুদ : (হাসতে হাসতে) নজিরবিহীন আরকি। বুলু : একটা রাস্তা বাইর করেন। দেখেন বলে। তারেক সাহেবরেও বলেন। মওদুদ : কোন ব্যবস্থা না নিলে কি করব বল। বুলু : তারপরও শেষ ভরসা, আজকে রাত্রে একবার তারেক রহমান সাহেবরে ফোন দিয়েন। আমাদের সবার কথা বলবেন যে এই সিদ্ধান্ত। মওদুদ : ঠিক আছে বলব আজকে। আচ্ছা। বুলু : আমাদের অ্যাডভোকেট রহিম সাহেব আপনাকে সালাম দিবে। রহিম -আসসালামু আলাইকুম। মওদুদ: রহিম, কি, তোমরাও গণসংযোগ বন্ধ কইরা দিছ নাকি? রহিম: স্যার আমাদের উপর খুব আক্রমণ করতেছে। অভিযান আছে আমাদের উপরে। মওদুদ: আমার ত গাড়ি ভেঙ্গে দিল ভাই। রহিম : আর আমি ছিলাম মিটিংয়ে ইট পাথর মারি ... কোন রকমে বাইচা আসছি। আমরা তিনটা মিটিং ডাকছিলাম, এখন তিনোটার কাউন্টার মিটিং ডাকছে, এখন টিএনও ১৪৪ ধারা দিয়ে দিছে। বলে দুই পক্ষ মিটিং দিছে এ জন্য ১৪৪ জারি করছে। মওদুদ: কিন্তু আচরণ বিধিতে আছে যারা আগে আবেদন করবে তাদের অনুমতি দেবে। রহিম : এখন আচরণ বিধি মানে ন স্যার। মওদুদ: হ্যাঁ, ওরা ঐভাবে বলে। এখন কিছু করার নাই। রহিম: আর্মি আইলে আমরা মনে করছি উন্নতি হইব। এখন ত দেখি ... । মওদুদ: নাহ, কিচ্ছু না, কিচ্ছু না, কিচ্ছু না। সব আই ওয়াশ। ভালো থাকো ভাই, ভালো থাকো। সালামালাইকুম। ফোন ধরে না মহাসচিব আর মিন্টু। চাই ওয়াক আউট, ফখরুলের না। মওদুদের ফোন ধরে না মহাসচিব আর মিন্টু। এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এতে তাকে দলীয় কর্মী মোহাম্মদ শফিকুল হকের সঙ্গে কথা বলতে শোনা গেছে। নির্বাচনে গেলে জামায়াত-শিবির নেতাদের এজেন্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি নেতা। টেলিফোন আলাপে বলেছেন, ‘আমাদেরগুলো (নিজ দলের নেতাকর্মী) ভীতু। শিবির নেতাদের এজেন্ট করো।’ মেজর হাফিজ : হ্যালো। মোহাম্মদ শফিকুল হক: স্লামালিকুম। মেজর হাফিজ: তোমাদের আমিররে ফোন করি, ফোন ধরে নাতো... । শফিকুল হক: ওহ, হের তো মা মারা গেছে কাল রাতে। মেজর হাফিজ : আচ্চা। শফিকুল হক: হে গোপনে, অনেক কৌশলে গেছে, কাল মাটি দিয়ে আসছে, আবার আজকে গেছে। মেজর হাফিজ: ওওও, এরে একটু আসতে বলো দেখা করার জন্য, আর এজেন্ট দেয়ার ব্যবস্থা কর তুমি, শিবিরের ছেলেদের এজেন্ট দিবো। শফিকুল হক: রাত্রে যোগাযোগ করব না সকালে? মেজর হাফিজ: সকালে ব্যবস্থা করো। কাল সারা দিনে আইডি কার্ড আর ছবি দিয়া... শিবির যত এজেন্ট দিবে... সবগুলো আমরা নিয়ে নিবো। বুঝছ? শফিকুল হক: জি, আর ওখানে আপনার, আজকে বের হওয়া যাবে? মেজর হাফিজ: না না, বের হওয়া যাবে না তো... একেবারে নির্বাচনের দিনেই। শফিকুল হক: সেদিন কী বাইর হইতে দিবে?। মেজর হাফিজ: জানি না। দিলে দিবে। আমরা আমাদের এজেন্ট ঠিক করতে হবে তো। শফিকুল হক: আচ্চা, ঠিক আছে জি। মেজর হাফিজ: এজেন্টগুলার ব্যবস্থা কর তুমি। আইডি কার্ড লাগবে আর একটা স্টাম্প সাইজ দুই কপি ছবি লাগবে। শফিকুল হক: আচ্ছা ঠিক আছে। জি জি। মেজর হাফিজ: আচ্চা।
×