ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট উৎসবের অপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ভোট উৎসবের অপেক্ষা

শাহীন রহমান ॥ অপেক্ষার পালা শেষ। রাত পোহালে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সারা জাতি এখন তাকিয়ে আছে ভোটের দিকে। শেষ সময়ে ভোটাররা হিসাব নিকাশ কষছেন ভোটের যোগ্য প্রার্থী কে। কাকে বিপদে আপদে পাশে পাওয়া যাবে। এদিকে নির্বাচন কমিশনও ভোটের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। রবিবার সকাল আটটায় শুরু হবে ভোটগ্রহণ, বিরতি ছাড়াই চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শেষে গণনা এবং ফল প্রকাশ শুরু হবে। নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদাও বলেছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। সব দল ও সবচেয়ে বেশি প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। উৎসবমুখর ভোট হবে। নির্বাচন নিয়ে আতঙ্কের বিষয়ে বিএনপির অভিযোগ ভুল প্রমাণ হবে। শুক্রবার সকালে নির্বাচন ভবনে ফল ঘোষণা কেন্দ্র ও গণমাধ্যম বুথ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত। ভোটাররা সবাই উৎসবমুখর এবং আনন্দঘন পরিবেশে ভোটে অংশগ্রহণ করবেন। কেএম নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচনের প্রচার শুক্রবার সকাল আটটা থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন প্রার্থী ও প্রার্থীর সমর্থক সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যার যার অবস্থান থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। কাউকে কোন ধরনের বাধা কেউ দিতে পারবেন না। যার যার ভোট তিনি দিতে পারবেন। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবার জন্য নিরাপত্তা, সবার জন্য নিরাপদ অবস্থান সৃষ্টি করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করব। যারা ভোটার, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সে আশাই করব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার পর্ব শেষে এখন শুধুই ভোটের অপেক্ষা। ১০ কোটির বেশি ভোটার এখন তাকিয়ে আছেন রবিবারের ভোটের দিকে। সেদিন সারাদেশের ভোটাররা যাদের পক্ষে রায় দেবেন তারাই দেশের সরকার গঠন করবে। পাঁচ বছরের জন্য তারাই ক্ষমতায় আসবে। আইন অনুযায়ী সরকার গঠন করতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে ৩শ’ আসনের মধ্যে ১৫১ আসন পেতে হবে। নির্বাচন শেষে জানুয়ারির ২৮ তারিখ থেকে দেশে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য গত ৮ নবেম্বর তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। প্রথম দফা তফসিলে ২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন ধার্য করা হলে রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদনের কারণে ১২ নবেম্বর পুনতফসিলে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন ধার্য করা হয়। প্রতীক বরাদ্দের পর গত ১০ ডিসেম্বর সারাদেশে আনুষ্ঠানিক ভোটের প্রচার শুরু হয়। প্রার্থীর প্রচার থেমে গেছে শুক্রবার সকাল ৮টায়। গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনার যে আবেদন নিবেদন জানিয়েছেন প্রার্থীরা, তারই প্রতিদান দেয়ার পালা আগামীকাল। ভোটের জন্য জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। রাজধানীর বাইরের ভোটাররা ভোট দিতে রাজধানী ছেড়ে চলে গেছেন ইতোমধ্যে। শনিবার রাত থেকেই সব ধরনের যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের দিন ইসির স্টিকারযুক্ত গাড়িই কেবল চলাচল করতে পারবেন। এর বাইরে অন্য সব ধনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। তবে সংবাদপত্রবাহী পরিবহন চলাচলে কোন বাধা নিষেধ নেই বলে ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়েছে। জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আশাদুল হক বলেন, যেসব গাড়ি পত্রিকা পরিবহনে নিয়োজিত থাকবে, সেসব গাড়ির সামনে সংবাদপত্রবাহী গাড়ি লেখা থাকলেই গাড়ি চলাচলে কোন বাধা নেই। এবারে নির্বাচনে ইসির নিবন্ধিত ৩৯ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এর বাইরেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন অনেক প্রার্থী। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন নির্বাচনে প্রতীকের পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজও ভোটারদের বিবেচনায় রয়েছে। দেশের ৩শ’ আসনের ভোটগ্রহণের তফসিল থাকলেও ভোটের শেষ পর্যায়ে এসে গাইবান্ধা-৩ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে এই আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। ফলে আগামীকাল ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। বাকি একটি আসনে ভোট নেয়া হবে ২৭ জানুয়ারি। ৩০ ডিসেম্বর রবিবার দেশের ২৯৯ আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। ভোটের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধিত ৩৯ দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে এবার এক হাজার আট শ’র বেশি প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন। এর মধ্যে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও জোটের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় ছড়িয়েছে উত্তাপ। ফলে এবারের নির্বাচনে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সিইসি জানিয়েছেন নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দেশ স্বাধীনের ৪৭ বছরে এখন পর্যন্ত দেশে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ১০ বার। আগামীকাল ১১ বারের মতো সরকার গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে ইসির নিবন্ধিত দল ও স্বতন্ত্র মিলে ১ হাজার ৮৪৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিকট অতীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের চেয়ে এবার রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৭৪৯ জন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৯৯ জন ভোটের মাঠে রয়েছেন। কোন দলের কতজন প্রার্থী ॥ এবারের নির্বাচনে ইসির নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে এলডিপি ৮ প্রার্থী, এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকে ৪, মহাজোটের শরিক জেপি ১১, এর মধ্যে মহাজোটের সঙ্গে ২ জন, সাম্যবাদী দল ২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৯ জন, (ধানের শীষে ৪), সিপিবি ৭৪, আওয়ামী লীগ ২৬১ (নৌকা ২৭৪), বিএনপি ২৭২ (ধানের শীষ ২৯৭), গণতন্ত্রী পার্টি ৬, ন্যাপ ৯, জাতীয় পার্টি ১৭৬ (মহাজোট ২৫), বিকল্পধারা ২৫ (নৌকা ৩), ওয়ার্কার্স পার্টি ৮ (নৌকা ৫), জাসদ ১২ (নৌকা ৩), জেএসডি ১৯ (ধানের শীষ ৪), জাকের পার্টি ৯০, বাসদ ৪৫, বিজেপি ৩ (ধানের শীষ ১), তরিকত ফেডারেশন ১৭ (নৌকায় ১), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ২৩, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ ৪৮, এনপিপি ৭৯, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম ৮ (ধানের শীষ ৩), গণফোরাম ২৭ (ধানের শীষ ৭), গণফ্রন্ট ১৩, পিডিপি ১৪, বাংলাদেশ ন্যাপ ৩, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১১, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১৮, কল্যাণ পার্টি ২ (ধানের শীষ ১), ইসলামী ঐক্যজোট ২৪, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২৯৮, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ২৫, জাগপা ৪, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২৮, খেলাফত মজলিস ১২ (ধানের শীষ ২), বিএমএল ১, মুক্তিজোট ২, বিএনএফ ৫৭ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতিহাসের নিরীখে সংসদ নির্বাচন ॥ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালে। এই সংসদে ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয় আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫টি। মোট ৫৪.৯ শতাংশ ভোটার এ নির্বাচনে ভোট দেয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৯৩ আসনে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। ২য় থেকে ৪র্থ এই তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সামরিক সরকারের অধীনে। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের ২য় জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০৭টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। অপর স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকরীর দল আওয়ামী লীগ পায় মাত্র ৩৯টি আসন। ২ এপ্রিল ১৯৭৯ সালে ২য় জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। ৭ মে ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ১৫৩ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে, আওয়ামী লীগ পায় ৭৬টি আসন। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ৪র্থ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৩ মার্চ ১৯৮৮ সালে। এ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসন পায়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অংশ নেয়নি। ৭৬টি অখ্যাত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত দুর্বল ও অনুগত নির্বাচনী জোট সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯টি আসন লাভ করে। দেশে ৫ম ও ৭ম থেকে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম সংসদ নির্বাচন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে রেকর্ডসংখ্যক ৭৬টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ১৪০টি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন লাভ করে। জামায়াতের সমর্থন নিয়ে এই নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করে। ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়। ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চের মাগুরা-২ আসনের উপ-নির্বাচনের পর থেকে এ সঙ্কট আরও তীব্র হয়। পরের পাঁচ উপ-নির্বাচন বয়কট করে বিরোধী দলগুলো। বিরোধী দলগুলো একযোগে ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। শূন্য হওয়া ১৪৭টি আসনে বন্যার কারণে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় ১৯৯৫ সালের ২৪ নবেম্বর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশে একতরফাভাবে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সংসদের স্থায়িত্ব ছিল ১২ দিন। বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে এ নির্বাচনে। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সীমিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের সময়ের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭ম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১২ জুন ১৯৯৬ সালে। এ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ২৮১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৮১টি দল থেকে মোট ২ হাজার ৫৭৪ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬ এবং জাতীয় পার্টি ৩২ আসনে জয় লাভ করে। ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিজেতা এবং বিজয়ী উভয় দলের জন্যই ছিল গাণিতিক ধাঁধাঁ। পরাজিত দল আওয়ামী লীগ ৪০.০২ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ২০.৬৬ আসন লাভ করে। বিএনপি একাই সংসদের ১৯২টি আসন লাভ করে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর তাদের পাঁচ বছর মেয়াদের শাসনকাল পূর্ণ করে। সাবেক প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক আন্দোলনের মধ্যে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১১ জানুয়ারি ঘটে যায় বড় পরিবর্তন। অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নির্বাচন বাতিল ও জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর অর্থনীতিবিদ ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান করে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি ও বিএনপি ৩০টি আসন পায়। ৩০ জুন ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হয়। সে কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দলীয় সরকারের অধীনে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেক দলই বর্জন করে এবং আওয়ামী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ১২টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এবারের নির্বাচন ব্যতিক্রম হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে গত দশ সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল বর্জন করলেও, সেই দলীয় সরকারের অধীনেই এবার সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তারা উল্লেখ করেন এখন দেখার বিষয় যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কতটা অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। কারণ এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে আগামীদিনে সব জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যত।
×