ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টাঙ্গাইলে চতুর্মুখী লড়াইয়ে জমজমাট নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

 টাঙ্গাইলে চতুর্মুখী লড়াইয়ে জমজমাট নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় বিএনপি প্রার্থীদের প্রচার তেমন না থাকলেও ভিন্ন চেহারা দেখা গেছে টাঙ্গাইল-৫ (টাঙ্গাইল সদর উপজেলা) আসনে। টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন সড়কজুড়ে নৌকার পাশাপাশি ধানের শীষ, লাঙ্গল ও মাথালসহ অন্য প্রতীকের পোস্টার দেখা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির প্রার্থীদের কোন নির্বাচনী ক্যাম্প না থাকলেও টাঙ্গাইল শহরের কয়েকটি জায়গায় ধানের শীষের প্রার্থীদের মাহমুদুল হাসানের নির্বাচনী অফিস দেখা গেছে। এখানে প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানই সবচেয়ে বেশি বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ ছানোয়ার হোসেন বর্তমান সংসদ সদস্য। এছাড়া আওয়ামী লীগের জোট শরিক জাতীয় পার্টির সফিউল্লাহ আল মুনির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে আছেন। তাদের সঙ্গে সমানতালে প্রচারে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সিদ্দিকী। তার প্রতীক মাথাল। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আবুল কাশেম সিংহ, ইসলামী আন্দোলনের খন্দকার ছানোয়ার হোসেন হাতপাখা, বিএনএফের মোঃ শামীম আল মামুন টেলিভিশন, খেলাফত আন্দোলনের সৈয়দ খালেকুজ্জামান মোস্তফা বটগাছ এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবু তাহের আম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচারে নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল ও মাথালের প্রার্থী অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। তবে ভোটের মাঠে মূল লড়াই ধানের শীষ ও নৌকার মধ্যে হবে বলেই তারা মনে করছেন। এ আসনের বারোটি ইউনিয়নের বেশিরভাগই উপজেলার পশ্চিমে চরাঞ্চলে পড়েছে। চরের ভোট পাওয়া, না পাওয়ার ওপর নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করে। প্রার্থীরাও চাইছেন, চরের ভোট আসুক তার বাক্সে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং টাঙ্গাইল পৌরসভা নিয়ে টাঙ্গাইল-৫ আসন। এই আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৮০ হাজার ৩৩৮ জন। নারী ভোটার এক লাখ ৯১ হাজার ৭৬৫ এবং পুরুষ ভোটার রয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ৫৭৩ জন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে গেছেন বিএনপির মাহমুদুল হাসান। জাতীয় পার্টির হয়ে ১৯৮৬ সালের উপনির্বাচনে ঢাকার ধানমন্ডি মোহাম্মদপুরের আসন এবং ১৯৮৮ সালে টাঙ্গাইল-৫ আসনে নির্বাচিত হন তিনি। পরে বিএনপির টিকেটে পঞ্চম থেকে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে একটানা তিনবার নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবুল কাশেমের কাছে হেরে যান সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। তবে ২০১২ সালে টেলিফোন বিল খেলাপের মামলায় আবুল কাশেমের সংসদ সদস্যপদ বাতিল হলে উপ-নির্বাচনে আবার সংসদ সদস্য হন তিনি। স্থানীয়রা বলছেন, টাঙ্গাইল শহর ছাড়াও ১২টি ইউনিয়ন বিশেষ করে চরাঞ্চলে মাহমুদুল হাসানের ‘ভোট ব্যাংক’ রয়েছে। তার বাড়িও চরাঞ্চলে। দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য থাকায় এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজের জন্যও তাকে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন বিজয়ী হয়েছিলেন। ‘পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক’ হিসেবে টাঙ্গাইল শহরের ছেলে ছানোয়ারের সুনাম রয়েছে। চরের ভোট টানতে তিনিও চরাঞ্চলে ‘ব্যাপক উন্নয়ন’ কাজ করেছেন। ফলে চরের ভোট পক্ষে টেনে তার জয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। সব পক্ষের প্রচার থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে বলে মনে করেন শহরের আদালতপাড়ার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তনয় রাশেদ। তিনি বলেন, ‘মূল লড়াই হবে টাঙ্গাইলের চারজন প্রার্থীর মধ্যে। বর্তমান এমপি ছানোয়ার আছেন। বিএনপির প্রার্থী মাহমুদুল হাসানেরও ফিল্ড ভাল। তবে ধারণা করছি, আওয়ামী লীগ জিতে যাবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মুরাদ সিদ্দিকী প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করেছেন। তিনি ফলাফলে ফ্যাক্টর হবেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী কিছু ভোট হয়ত পাবেন, কিন্তু সেটা খুব ফ্যাক্টর হবে না।’
×