ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হতদরিদ্র জিহাদ এখন কৃষকের অনুপ্রেরণা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

হতদরিদ্র জিহাদ এখন কৃষকের অনুপ্রেরণা

খেয়ে না খেয়ে এইচএসসি পাস করলেও শেষ পর্যন্ত স্নাতক পরীক্ষা দিতে পারেননি। জাতীয় শিশু-কিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় ১৯৯১ সালে খুলনা বিভাগে ২য় হয়েও গানের জগতে থাকা হয়নি। গীতিকার ও সুরকার মিল্টন খন্দকারের তত্ত্বাবধানে বিটিভিতে একাধিক অনুষ্ঠানে গান গেয়েও ঢাকায় থাকা হয়নি। নিদারুণ অর্থ কষ্টে গ্রামের বাড়িতেই ফিরে আসতে হয়েছে জিহাদকে। অথচ সেই জিহাদই এখন কৃষকের অনুপ্রেরণা। বিষ বা কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ এবং পান চাষে তার সাফল্য ঈর্ষণীয়। গুটি ইউরিয়া ও কেচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে তিনি প্রায় দ্বিগুণ ফসল উৎপাদন করছেন। বিষমুক্ত খামারের ওপর গবেষণাকারী একজন সফল ও শিক্ষিত চাষী জিহাদ। ভোক্তাদের কাছে তার উৎপাদিত ফসলের চাহিদাও বেশ। বাগেরহাটের যাত্রাপুরের চাঁপাতলা গ্রামের হতদরিদ্র আব্দুল গনি শেখের ছেলে জিহাদ শেখ (৩৫)। ৫ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে জিহাদ তৃতীয়। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে জর্জিত যুবক জিহাদ এক পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে তিন বিঘা জমি লিজ (ভাড়া) নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম আর মেধা খাটিয়ে তিনি রাসায়নিক সার বা কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষে সাফল্য অর্জন করেন। ধান, পান, ঢেঁড়স, কচু, কলা, শাক, সিম, বরবটি, বেগুন, আলু ইত্যাদি সবজি জাতীয় ফসল উৎপাদন করে জিহাদ এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন। জয় করছেন দারিদ্র্যতাকে। বাম্পার ফলনের জন্য ইউএসএআইডি, ইস্পাহানী এসিআইও ফসল এ্যাগো এবং জেলা প্রশাসন কর্তৃক তিন তিন বার তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। বিনয়ী স্বভাবের জিহাদ শেখ জানান, কৃষি বিভাগের সহায়তায় মাটি পরীক্ষা করে তিনি জমিতে কমপোস্ট সার, সবুজ সার ব্যবহার করেন। তার মতে, রাসায়নিক বা কৃত্রিম সারের চেয়ে গোবর, জৈব, কম্পোস্ট সার ব্যবহারে অধিক ফলন পাওয়া যায়। বাজারে বিষমুক্ত উপায়ে উৎপাদিত ফসলের চাহিদাও ব্যাপক এবং ভাল দাম পাওয়া যায়। সম্মনিত বালাই ব্যবস্থনা পদ্ধতি (আইপিএম) অনুসরণ করলে ফলন ভাল হয়। ওয়াল মার্ট ও আইএফডিসিএর বাগেরহাটের প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন বলেন, গুটি ইউরিয়া ও কেঁচো সার পরিকল্পিত মাত্রায় ব্যবহার করলে যে কোন ফসল দ্বিগুণ হয়। ‘বিশেষ করে পান সারা মৌসুমে ফলন দেয়।’ যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমএ মতিন বলেন, বিনয়ী অথচ কঠোর পরিশ্রমী কৃষক জিহাদ শেখ চাষাবাদে অনুকরণীয় সাফল্য অর্জন করছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্চয় কুমার জানান, কৃষি ক্ষেত্রে যাত্রাপুর এলাকায় ব্যাপক সাফল্য রয়েছে। জিহাদ শেখ একজন পরিশ্রমী এবং মেধাবী কৃষক। স্থানীয় সুধী বাচ্চু বেগের ভাষায়, জিহাদ কৃষি ও কৃষকবান্ধব ব্যক্তি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অমিত কুমার বলেন, জিহাদ কৃষকদের সামনে চলার আলো। কৃষি কাজের পাশাপাশি সঙ্গীতের প্রতি তার রয়েছে অদম্য আগ্রহ। জিহাদ বলেন, সোনার বাংলা গড়তে কৃষকেরা শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। চাষাবাদে সাফল্য দিয়ে সহজে দারিদ্র্যতা জয় করা সম্ভব। কৃষি ক্ষেত্রে সার, বীজ, অনুদান ও প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য তিনি বর্তমান সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং অভিন্দন জানান। -বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে
×