ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছেনতুন ভোটাররা

মাদারীপুরের তিন আসনেই শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

মাদারীপুরের তিন আসনেই শক্ত  অবস্থানে আওয়ামী লীগ

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুরের তিন আসনই নৌকার শক্ত ঘাঁটি ও আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। রাত পোহালেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে নতুন ভোটাররা। তাই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে খোশ মেজাজে রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন ভোটারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে জেলার তিন সংসদীয় আসন আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বিজয়ের প্রতীক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৌকার জয় জয়কার জেলার সর্বত্র। কারণ ১০ বছর প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে বিষয়টি নির্বাচনে ইতিবাচক সাড়া জাগিয়েছে। তাই এ অঞ্চলের প্রবীণ ও নবীন ভোটারদের মন জয় করতে নৌকার প্রার্থীদের তেমন বেগ পেতে হয়নি। মাদারীপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ। জাতীয় পর্যায়েও তাদের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে এবং তারা প্রভাবশালী নেতা। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীরা সংসদ নির্বাচনে নতুন মুখ হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে তারা ততটা পরিচিত হয়ে উঠতে পারেননি। তবে মাদারীপুরের তিন সংসদীয় আসনের বিএনপি প্রার্থীরা ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। মাদারীপুর-১ আসনে শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচারে প্রায় ৯০ ভাগ এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূর-ই-আলম লিটন চৌধুরী। মাদারীপুর-২ আসনে নৌপরিবহনমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান ৯০ থেকে ৯২ ভাগ এবং মাদারীপুর-৩ আসনে নতুন মুখ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবাহান গোলাপ ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ এগিয়ে আছেন প্রচারে। এবারের নির্বাচনে কোন আসনে ব্যক্তি নয়; বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকাই মূল বিষয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার তিন আসনে ভোট কেন্দ্র ৩৭৬ এবং ভোট কক্ষ ১ হাজার ৭৫১। মোট ভোটার ৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৮৬ জন এবং মহিলা ভোটার ৪ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৮ জন। এর মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৬৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৩১ জন। মাদারীপুর-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৯ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪৭ জন। মাদারীপুর-৩ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৩৫ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৩০৮ জন। মাদারীপুর-১ (শিবচর) ॥ শিবচর পৌরসভাসহ ১৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-১ আসন। পৌরসভা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের পরিসংখ্যানে এটি আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা। এ আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১৭ হাজার ৮২৫ জন। এ আসনের নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম লিটন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই মরহুম ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (দাদা ভাই’র) বড় ছেলে। তিনি এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। শিবচরের উন্নয়নে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন তথা বহু সেতু-কালভাট, রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা চিকিৎসা কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নসহ শিবচরকে একটি আধুনিক উপজেলায় রূপান্তরিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে বহু ভাস্কর্য নির্মাণ করে ইতোমধ্যে শিবচরকে লাল-সবুজের জনপদে রূপান্তরিত করে সকলের মনে স্থান করে নিয়েছেন। দেশের বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু, রেললাইন, ছয় লেন মহাসড়ক, অলিম্পিক ভিলেজ, পদ্মাপাড়ে অর্থনৈতিক জোন, বেনারশি পল্লীসহ বহু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নূর-ই-আলম লিটন চৌধুরীর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিশেষ করে নতুন ভোটারদের মাঝে। এ আসনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী। মাদারীপুর-২ (সদরের একাংশ এবং রাজৈর) ॥ মাদারীপুর পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ১০টি ও রাজৈর পৌরসভাসহ রাজৈর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে মাদারীপুর-২ আসন গঠিত। জেলার মধ্যে মাদারীপুর-২ আসনটি সবচেয়ে বড়। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩ হাজার ২৬১ জন। নৌ-পরিবহনমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। তিনি এ আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও রাস্তা-ঘাট, ইকোপার্ক, রিভার ওয়াকওয়ে, মেরিন একাডেমি, হর্টিকালচার সেন্টার, ফোরলেন সড়ক, বড় বড় সেতু নির্মাণসহ মাদারীপুর শহরকে উন্নয়ন করে একটি আধুনিক টাউন হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তার এসব কর্মকা-ের জন্য তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন। এ আসনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিল্টন বৈদ্য ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী আল-আমিন মোল্লা। মাদারীপুর-৩ (মাদারীপুর সদরের একাংশ এবং কালকিনি) ॥ মাদারীপুর সদরের পাঁচ ইউনিয়ন, কালকিনি পৌরসভাসহ উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন নিয়ে মাদারীপুর-৩ আসন গঠিত। ভোটার ২ লাখ ৮৩ হাজার ২২৩ জন। এ আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবাহান গোলাপ। রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি নতুন মুখ এবং আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কেন্দ্রীয় বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সহ-সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার। এ আসনে তৃণমূল পর্যায়ে তিনি সাড়া ফেলেছেন। তাকে খাটো করে দেখার কিছু নেই। তিনি নির্বাচনী প্রচারে সাধারণ ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছেন। চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধে রয়েছেন মাদারীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূর-ই-আলম লিটন চৌধুরী, বিএনপি’র সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির জহিরুল ইসলাম মিন্টু ও জাকের পার্টির শাহ নেওয়াজ। মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাজাহান খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আল-আমিন মোল্লা, বিএনপি’র মিল্টন বৈদ্য, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লোকমান হোসেন জাফরী ও জাকের পার্টির আসাদুজ্জামান আকন এবং মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. আব্দুস সোবাহান গোলাপ, বিএনপি’র আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন।
×