ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট সন্ত্রাস রুখতে

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ভোট সন্ত্রাস রুখতে

অবাধ নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। থাকতে পারে না। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাস, হানাহানি, হাঙ্গামা ছড়িয়ে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করার জন্য সন্ত্রাসীদের তৎপরতাও থাকে, থাকতে পারে। তাই ‘ভোটের দিন কেন্দ্র দখল’ বা ভোট কেন্দ্র পাহারা’ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যারা ইতোমধ্যে তারা সন্ত্রাসবাদকে লালন-পালন করেন বলেই ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন শুধুই নয়, ভোট ভ-ুল করতে চান। নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি বহন করার চেয়ে বানচাল করে দেয়াই উত্তম বলে তারা যদি মনে করে থাকেন, তবে তা ভুল। দলীয় সরকারের অধীনে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন যে সম্ভব তা তারা ভুল প্রমাণ করতে চায় বলেই তফসিল ঘোষণার পর থেকে অদ্যাবধি নানা হুমকি-ধমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে যেমন, তেমনি নানা স্থানে হাঙ্গামা, পেট্রোল বোমাবাজি, সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। অতীতে বোমা মেরে বাস পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছে যারা, গণরোষের ভয়ে তারা প্রচার কাজে নামতে পারছে না। পুলিশকে ধন্যবাদ দিতে হয় যে, বোমা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে তারা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বোমা সন্ত্রাস কোন রাজনৈতিক কর্ম নয় এবং জড়িতরাও নয় রাজনৈতিক কর্মী। এদের একমাত্র পরিচয়, এরা সন্ত্রাসী, গণদুশমন। দেশের মানুষকে হত্যা করে দুর্নীতিবাজ নেতা-নেত্রীকে মুক্ত করা এখন তাদের লক্ষ্য হলেও ক’বছর আগেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভন্ডুল, কারাগারে আটকদের মুক্ত করার জন্য নাশকতার পথ বেছে নিয়েছিল। এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের দন্ড প্রদানের বিরুদ্ধে হরতাল, অবরোধ, বোমাবাজিসহ মানুষ হত্যা করেছে। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতসহ অন্য সন্ত্রাসীদের সরকারী প্রশাসনে বসিয়ে দেশটাকে ধ্বংসকরণের জন্য নির্বাচনী ইশতেহারে যে কোন বয়সে সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বিধান করার কথা বলেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখার পক্ষে নেই তারা। তবে তাদের সহযোগী ফ্রন্ট এই বিচার অব্যাহত রাখার কথা বললেও সেই যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে ঐক্যও করেছে। জামায়াত-বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে খুনী মুশতাক গঠিত ডেমোক্র্যাটিক লীগও রয়েছে। এরা অর্থের বিনিময়ে ভোট ক্রয় করার জন্য সচেষ্ট। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই অতীতেও দাবি করেছে যে বিএনপি-জামায়াতকে নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য শত শত কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিশ্বখ্যাতি সহ্য করতে পারছে না পাকিস্তান। তাদের প্রধানমন্ত্রী খেদোক্তিও করেছে এই উন্নয়নে। তাই বাংলাদেশকে পর্যুদস্ত করতে চায় পাকিস্তান বিএনপি জামায়াতের সহায়তায়। এবারের নির্বাচনে আইএসআইসহ অন্যান্য সূত্র থেকে আসা অর্থ দিয়ে সন্ত্রাস, হানাহানি ছড়ানো ছাড়াও ভোটার ও রাজনৈতিক কর্মীদের প্রলুব্ধ করার অনেক তথ্য প্রচার হয়েছে ইতোমধ্যে। নির্বাচন যাতে কোনভাবেই সুষ্ঠু হতে না পারে, সে জন্য নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এইসব ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে গিয়ে ফ্রন্টের প্রধান নেতা তথা আইনের শাসনের দাবিদারজন সবকিছু ‘লেজে গোবরে’ করে ফেলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে শুধু নয়, দুর্নীতি ও হত্যাযজ্ঞে দন্ডিত ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে তিনি পেশি শক্তি প্রদর্শনে সোচ্চার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশন, সাংবাদিক, সরকারী প্রশাসনকে যখন ‘দেখে নেব, চিনে রাখলাম, খামোশ, জানোয়ার’ ইত্যাকার কদাকার ভাষায় হুমকি-ধমকি প্রদান করেন, তখন স্পষ্ট হয় ষড়যন্ত্রের অভিভাবক সে যে তিনি শুধু শেখ হাসিনার বিনাশ নয়, পুরো দেশেরই বিনাশ চান। আগামীকাল ত্রিশে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ভন্ডুল করতে বা গোলযোগ তৈরিতে যারা মাঠে নামবে তাদের রুখতে হবে। জনগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া। স্মরণ রাখা সঙ্গত, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যেমন যাবে না, তেমনি কারও ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেয়াও যাবে না। সন্ত্রাস রোধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবেই।
×