ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যাদের হারিয়েছি

প্রকাশিত: ১৮:২০, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

যাদের হারিয়েছি

হালিমা খাতুন ভাষা সংগ্রামী ৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের আমতলার সমাবেশে ছাত্রীদের জড়ো করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৪৪ ধারা ভেঙে প্রথম বের হওয়া মেয়েদের দলের চার সদস্যে ছিলেন জুলেখা, নূরী, সেতারা ও হালিমা খাতুন। মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। পরে বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে নারীদের সংগঠিত করার দায়িত্বও কাঁধে তুলে নেন। ভাষা আন্দোলনে তার সাহসী ভূমিকা এবং সাহিত্যে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক ভাষাসৈনিক সম্মাননা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন সময় প্রায় ৩৪টি পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও জাতিসংঘের উপদেষ্টা হিসেবেও দুই বছর দায়িত্বপালন করেন তিনি। তারামন বিবি মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের মাসের প্রথম দিনেই চলে গেলেন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক তারামন বিবি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১১নং সেক্টরে নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলায় শংকর মাধবপুড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে রান্নার কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এরপর অস্ত্র চালনা শিখে সহ পুরুষযোদ্ধাদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেন। শুধু সম্মুখযুদ্ধই নয় নানা কৌশলে শত্রুপক্ষের তৎপরতা এবং অবস্থান জানতে গুপ্তচর সেজে যেতেন পাক বাহিনীর শিবিরে। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে তারামন বিবিকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়। ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী মুক্তিযোদ্ধা দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার ভূষিত মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পী, সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীকে আমরা হারিয়েছি এ বছরের ৬মার্চ। ৭১ সালে আক্টোবর মাসের শেষের দিকে ক্যাম্পে আটকে রেখে পাক পিশাচরা তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। দেশ স্বাধীন হলো। ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাব পেলেন। প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থেকেছেন। লড়াই করতে করতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়তেন মন খুলে দিতেন প্রকৃতিকে। গাছের গুঁড়ি, বাঁশ, নষ্ট হতে থাকা কাঠে তিনি তার কষ্টগুলো তুলে ধরতেন। তার এই শিল্পীস্বত্বাকে আবিষ্কার করেছিলেন শিল্পী এসএম সুলতান। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। ২০১০ সালে পান স্বাধীনতা পুরস্কার। রমা চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা জীবন যুদ্ধে চিরসংগ্রামী, অকুতোভয়, সাহসী এক সৈনিক রমা চৌধুরী। জীবনের প্রয়োজনে স্কুল শিক্ষিকা থেকে হয়েছিলেন বইয়ের ফেরিওয়ালা। ছিলেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম স্নাতকোত্তর নারী। ১৯৬২ সালে কক্সবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বদলে দেয় তার জীবন। যুদ্ধে পাক বাহিনীর কাছে সম্ভ্রম হারিয়ে হন বীরাঙ্গনা। একে একে তিন সন্তান হারানোর বেদনা, সামাজিক লাঞ্ছনা সবকিছু সহ্য করেও ছিলেন চির উন্নত শির। নিজের লেখা বই খালি পায়ে ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন তবুও সাহায্য বা অনুগ্রহের অপেক্ষায় থাকেননি কখনও। এ বছরের ৩ সেপ্টেম্বর আমরা তাকে হারালেও আত্মপ্রত্যয়ী মুক্তিযোদ্ধা রমা চৌধুরী বাংলার ইতিহাসে আত্মমর্যদাশীল, চির উন্নত শির এক মানবী হিসেবে অম্লান থাকবেন। কাঁকন বিবি মুক্তিযোদ্ধা ’৭১ এ পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেয়া নুরজাহান কাকন বিবির মৃত্যু হয় ৩ জুলাই। মাত্র ৩ দিন বয়সী মেয়েকে রেখে যুদ্ধে যোগ দেয়া কাকন বিবি পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন জুন মাসে। বাঙ্কারে সয়েছেন নির্মম নির্যাতন। ছাড়া পেয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি গুপ্তচরেও কাজ করেছেন। নবেম্বরে টেংরাটোলায় যুদ্ধে কয়েকটি গুলিবিদ্ধ হয় তার শরীরে। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে। ইউনি ম্যান্ডেলা মানুষের দাবি, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পৃথিবীর সবখানেই অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত এক নাম ইউনি ম্যান্ডেলা। তাকে পারি দিতে হয়েছে বন্ধুর পথ। জ্বলন্ত টায়ারের নেকলেস গলায় পরে তাকে ছিনিয়ে আনতে হয়েছিল স্বাধীনতা। নিজেকে তিনি স্থাপন করেছেন এমন এক উচ্চতায় যে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে ন্যায়ের সংগ্রামে ইউনি উচ্চারিত হবেন সাহসের আর এক নাম বলে। এ বছরের ২ এপ্রিল পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেলেও তার নেতৃত্ব, স্বজাতির প্রতি ভালবাসা আর সহসিকতার জন্য তিনি শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় নয় বিশ্বেও সব নারী পুরুষের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবেন চিরকাল। শ্রীদেবী অভিনেত্রী দুবাইয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি জীবনের ওপারে চলে গেলেন নন্দিত বলিউড অভিনেত্রী শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার আয়পান ওরফে শ্রীদেবী। ২০১৩ সালে ভারতের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’তে ভূষিত হন তিনি। অরিত্রী ছাত্রী ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনা ছুঁয়ে যায় প্রতিটি মানুষকে। শিক্ষকের নিকট নিজের এবং পিতা-মাতার অপমান সইতে না পেরে তার এই আত্মহত্যা। এতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কিছু অসঙ্গতির চিত্র উন্মোচিত হয়েছে।
×