ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ সাইফুল আলম

হিম নিংড়ানো শীত সঙ্গে সাত রং চা

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

হিম নিংড়ানো শীত সঙ্গে সাত রং চা

ছুটির দিন ছিল বলে যানজট ছাড়া ঢাকা শহর পার হয়ে গেলাম। সকাল সাড়ে এগারোটার মধ্যে শ্রীমঙ্গলে এসে পৌঁছলাম। সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন আমাদের গাইড। শ্রীমঙ্গলে নেমেই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে কিছুটা ফ্রেশ হয়ে চা কফি পর্ব শেষ করতে করতে গাইডকে বললাম দাদা আমরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে থাকব এরই মধ্যে একটা পরিকল্পনা করুন, সময় নষ্ট না করে এখনই বেরিয়ে পড়ব। প্রথমেই তিনি শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত সাত রং চায়ের লোভ দেখালেন। দু’ধারে সমতল চা বাগানের মাঝ বরাবর রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলছি। মাত্র পনেরো মিনিটেই চলে এলাম নীলকণ্ঠ কেবিনে। এটা একটা সুন্দরভাবে গোছানো চা স্টল। এখানেই মিলবে সাত রঙের স্বাদ। অর্ডার দেয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হলো। বিভিন্ন রকম চা আছে - সাত রং, পাঁচ রং, তিন রং, স্পেশাল চা ইত্যাদি। দামের ক্ষেত্রেও মিল দেখলাম প্রতিটি রঙের জন্য দশ টাকা। তার মানে সাত রং চা সত্তর টাকা, পাঁচ রং চা পঞ্চাশ টাকা আর তিন রং চা ত্রিশ টাকা। বিচিত্র অভিজ্ঞতা। দলের একেক সদস্য একেক রকম চা পছন্দ করল। চা-পানের পর বুঝলাম দেরির জন্য এ চা পর্বটা এড়িয়ে গেলে ভুলই হতো। নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর সমতলে চা বাগানগুলো ছিল দিগন্তজুড়ে। যতটুকু দৃষ্টি যায় মনে হয় পুরোটাই সবুজ চাদরে মোড়ানো। বাগানের চা গাছগুলোকে রৌদ্রের উত্তাপ থেকে বাঁচাতে চা বাগানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি। উঁচু গাছগুলো বাগানে ছায়া দেয় বলেই এদের নাম শেড-ট্রি বা ছায়াবৃক্ষ। নানা প্রজাতির পাখিগুলো এক ছায়াবৃক্ষ থেকে আরেক ছায়াবৃক্ষে উড়াউড়ি করছে। চলার পথে বাগানের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ী ছড়ার দেখাও পেলাম। চা বাগানের এ নান্দনিক সৌন্দর্য যে কোন মানুষেরই মন কেড়ে নেবে। আমরা যাচ্ছি লাউয়াছড়া বনের দিকে, এটা জীববৈচিত্র্যে ভরপুর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক উদ্যান। শ্রীমঙ্গল থেকে রাস্তাটা লাউয়াছড়া বনের মধ্য দিয়ে চলে গেছে শমসেরনগরে। বনে ঢোকার জায়গাটার দুই পাশে সব বিশাল বৃক্ষ প্রাকৃতিক ফটক বানিয়ে যেন স্বাগত জানাচ্ছে। সারি সারি পাহাড়ের ওপর বড় বড় বৃক্ষরাজির ঘন বন। আবার কোথাও কোথাও পাহাড়ের ঢালে আছে সুসজ্জিত আনারস বাগান। ঘন জঙ্গলের বুকচিরে চলে গেছে আঁকা বাঁকা চমৎকার মসৃণ পিচঢালা পাহাড়ী রাস্তা। দুই পাশের সারি সারি সবুজ গাছের নিঃস্বর্গ ভরা মোহনীয় পরিবেশে যে কোন পর্যটককে আকৃষ্ট করবেই। সময়ের অভাবে বনে ঢোকার সিদ্ধান্ত না নিয়ে জঙ্গলের পাশে দশ মিনিটের জন্য গাড়ি থেকে নামলাম। বড় বড় গাছের মগডালে কিছু বানর আর হনুমানেরও দেখা পেলাম। ছায়া সুনিবিড় নির্জন পরিবেশে নানা জাতের পাখির কলরব আমাদের অন্য জগতে নিয়ে গেল। এরই মাঝে চলে এলাম উঁচু-নিচু পাহাড়ের বুকে সারি সারি চা বাগানের রাস্তায়। সারি সারি টিলা আর টিলার মাঝে উপত্যকায় চা গাছ। ছায়াবৃক্ষের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বিদায় বেলার সূর্য। পুরো পথের নৈস্বর্গ দৃশ্য দেখার সময় আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা ছিলাম। এক সময় বিস্ময়ে আর মুগ্ধতায় বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম। ধীরে ধীরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো, আর ততক্ষণে মৌলভীবাজার-ঢাকা হাইওয়েতে চলে এলাম। গাইডকে শ্রীমঙ্গলে নামিয়ে দিয়ে ঢাকার দিকে আমরা চলছি। গাড়িতে সবাই তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমি আর কষ্ট করে জেগে থাকব কেন? নিজে ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে ড্রাইভারকে না ঘুমানোর নির্দেশ দিলাম। সে বলল নো প্রবলেম বস।
×