ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

দু’শ’ বছরের পুরনো ‘কড়ৈতলী জমিদারবাড়ি’

প্রকাশিত: ০৮:০২, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

দু’শ’ বছরের পুরনো ‘কড়ৈতলী জমিদারবাড়ি’

কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা। সকালে ঘাসের ওপর শিশির বিন্দু আর পাখপাখালির কলকাকলী শুনতে হলে আপনাকে ছুটে যেতে হবে মাটির টানে গ্রামে। কিন্তু যারা ভ্রমণ করতে ভালবাসেন তাদের সব সময়ই কৌতূহল থাকে পুরনো কোন স্থাপত্যশৈলী কিংবা জমিদারবাড়ি নিয়ে। এক সময় আমাদের দেশে জমিদারদের আধিপত্য বিরাজ করলেও এখন আর জমিদারদের অস্তিত্ব নেই আমাদের সমাজে। তাদের অস্তিত্ব না থাকলেও তাদের রেখে যাওয়া স্থাপত্যশৈলী নজর কারে আমাদের মতো ভ্রমণপ্রিয়সী মানুষদের। তেমনই এক জমিদারবাড়ি চাঁদপুর জেলার ‘কড়ৈতলী জমিদারবাড়ি’। ‘নেই জমিদার, নেই জমিদারিও, আছে শুধু তাদের রেখে যাওয়া স্থাপত্যশৈলী।’ অনেকটা এমন যে, ‘রাম নেই, নেই রাজত্ব’ এটি একটি বাংলা প্রবাদ হলেও আসলেই কালের বিবর্তনে আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে গেছে জমিদারদের অস্তিত্ব। হাতি, ঘোড়া, পাক-পেয়াদা না থাকলেও ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে জমিদারদের রেখে যাওয়া স্থাপত্যশৈলী। পোড়া ইট-পাথরের দেয়ালে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন রকমের উদ্ভিদ আর শেওলা। ইতিহাস, ঐতিহ্যম-িত এ জমিদার বাড়িটি আজও নিজের অবস্থানে অটুট আছে; যদিও জমিদার কেউই এখন সেখানে নেই। দৃষ্টিনন্দন এ জমিদার বাড়িটির সৌন্দর্য দিন দিনই কমতে শুরু করেছে। এক সময়ের কারুকার্য খচিত দালান এখন লতাপাতার দখলে। বিভিন্ন লতাপাতা মোড়ানো উদ্ভিদ এখন সেখানে একক আধিপত্য বজায় রেখেছে। শেওলারাও যেন বাসা বাঁধার একমাত্র নীড় খুঁজে পেয়েছে পরিত্যক্ত এ জমিদার বাড়িটিতে। কিন্তু তার পরও বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ জমিদার বাড়িটি দেখতে ছুটে আসেন এখানে। স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘১২২০ বঙ্গাব্দ হরিশ চন্দ্র বসুর হাত ধরে জমিদারদের কড়ৈতলীতে প্রত্যাবর্তন। ১৯৫১ সালে শেষ জমিদার ‘গোবিন্দ চন্দ্র বসু’র হাত ধরে সমাপ্তি ঘটে রাজপরিবারের। প্রায় তিন শ’ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত জমিদার বাড়িটির অস্তিত্ব এখন সামান্য জায়গা নিয়ে। তার ওপর যা আছে তা ও যথাযথ পর্যবেক্ষণ এর দরুন বিলুপ্ত হতে চলেছে। লোকমুখে শোনা যায়, সেখানকার জমিদাররা অনেক আগেই গ্রাম থেকে চলে গেছে। তাদের বংশের কেউই এখন আর খবর নিতে আসেন না। জমিদার বাড়িটি ‘বাবুর বাড়ি’ নামে সকলের কাছে পরিচিত। বাবুরবাড়ি বললেই এক নামে চিনে এলাকাবাসী তথা উপজেলাবাসী। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে জমিদার বাড়িটিতে দাঁড়িয়ে আছে দুর্গা মন্দির, রয়েছে জরাজীর্ণ লতাপাতা মোড়ানো বিধ্বস্ত প্রাসাদ, অট্টালিকা। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাছারিঘর, সুড়ঙ্গ পথ। এ ছাড়া বাবুর দীঘি নামে বিশাল এক দীঘিও রয়েছে। কড়ৈতলী বাজারে রয়েছে জমিদারদের ‘শ্মশানকালী মন্দির’; তবে সেখানে এখন আর নেই কোন পূজার ব্যবস্থা। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় জমান জমিদার বাড়িটি দেখতে। বাবুর বাড়িটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জমিদারি স্থাপত্যশৈলীর ব্যাপারে জানতে আগ্রহী হয়ে ছুটে আসেন এখানে। প্রতিদিনই জমিদার বাড়িটিতে লোকারণ্য দেখা যায়।’ এলাকাবাসী মনে করেন প্রশাসন যদি জমিদার বাড়িটিকে পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তোলে তবে পর্যটন স্থান হিসেবে যেমন জমিদার বাড়িটি আরও প্রচার পাবে; তেমনি প্রাণ ফিরে পাবে উক্ত এলাকার পর্যটন খাত। অর্থনীতির দিক থেকেও এগিয়ে যাবে গ্রামটি। কীভাবে যাবেন : চাঁদপুর শহর থেকে ২০ কিমি দূরত্বে গ্রাম কড়ৈতলী। ঢাকার সদরঘাট প্রতিদিন ও রাতে ছেড়ে আসে চাঁদপুরগামী বহুসংখ্যক লঞ্চ। ঢাকা থেকে আসা যাত্রীরা লঞ্চে করে আসলে ভাড়া পড়বে ডেক যাত্রী ১০০ টাকা, প্রথম শ্রেণী ২৩০ টাকা। এ ছাড়া সিঙ্গেল কেবিন ৪০০ টাকা এবং ডবল কেবিন ৮০০ টাকা সেখান থেকে সিএনজিযোগে পৌঁছানো যাবে কড়ৈতলীতে, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
×