ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বছর ঘুরে বছর জুড়ে ফ্যাশন ভাবনা

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

বছর ঘুরে বছর জুড়ে ফ্যাশন ভাবনা

দিন ক্ষণ মাস গুনতে গুনতে শেষ হয়ে এলো একটি বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে উদগ্রীব সবাই। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা পুরনো গ্লানি মুছে সবকিছু যেন নতুন হয়ে ধরা দেয় সবার কাছে। দূর হয়ে যাক সব অপশক্তি ও জরাজীর্ণতা। পুরনো বছরে যা অর্জিত হয়নি তা যেন নতুন বছরে এসে পূর্ণতা পায় সে প্রত্যাশাতেই দিন গুনছে সবাই। জীবন থেকে একটি বছর চলে গেলেও নাড়া দিয়ে যায় জীবনকে। প্রতিটি ঘাত-প্রতিঘাতে যে শিক্ষা অর্জিত হয় তা সামনের জীবনের জন্য বছরের জন্য পাথেয় হয়ে থাকে। বছরের প্রতিটি দিন ক্ষণ থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে থাকে সবাই। বছরের শেষ প্রান্তে এসে মূল্যায়ন করার চেষ্টা চলে কি পেলাম আর কি পেলাম না। তবে না পাওয়ার হতাশায় পোড়ার চেয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে তা অর্জন করার নামই জীবন। এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। একটি বছরে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কিংবা খেলায় যে পরিবর্তনের ধারা লক্ষ্য করা যায় তেমনি কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ফ্যাশন ট্রেন্ডেও লক্ষ্য করা যায়। বলা যায় ২০১৮ সালটি ঘটনাবহুল একটি বছর ফ্যাশন ট্রেন্ডের জন্য। অনেক অর্জন এবং বর্জনের বছর হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়। অর্থাৎ প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির মিশেল। তেমনি কিছু উপাত্ত তুলে ধরা হলো। ছেলেদের পোশাক গতানুগতিক ধারাতে থাকলেও কিছুটা ব্যতিক্রম এবারে ছেলেদের পোশাকে লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে ক্যাজুয়াল ওয়েস্টার্ন ফিটে। পাশ্চাত্য ঢঙের পোশাকগুলো চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে টি-শার্ট, জিন্স এবং স্লিমফিট শার্টে ছিল বৈচিত্র্য। স্লিমফিট শার্টের ক্ষেত্রে ফ্লোরাল ডিজাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। বড় বড় ফুলের ছাপা প্রিন্ট শার্ট তরুণদের পছন্দের শীর্ষে ছিল। সামনের বছররেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হয়। অফিসিয়াল বা কর্পোরেট শার্টের ক্ষেত্রে চেক বা স্ট্রাইপের চেয়ে এক কালারের শার্ট প্রাধান্য পেয়েছে। এ ছাড়া পাঞ্জাবিতেও ছিল বৈচিত্র্য। ফ্যাশন ট্রেন্ডে পুরনো অনেক ফ্যাশন ঘুরে ফিরে ট্রেন্ডে যোগ হয়ে সৃষ্টি করে নতুন মাত্রা। এক সময়ে কলার ছাড়া পাঞ্জাবি এবং টপ ফোল্ড পাঞ্জাবির বেশ চল ছিল । কিন্তু মাঝে তেমন চাহিদা সৃষ্টি করেনি। তবে এ বছর সে ডিজাইনগুলোই আবার জায়গা করে নিয়েছে। স্যুট-ব্লেজার রাউন্ড স্যুটের প্রচলন গত বছর থেকে শুরু হলেও এ বছরেও এর ব্যাপক চাহিদা ছিল। দুই বোতামের রাউন্ডসেপ স্যুট সব বয়সীদের জন্যই বেশ মানানসই ছিল। এ ছাড়া ক্যাজুয়াল ব্লেজার, ডেনিম ব্লেজার, হাই নেক ব্লেজারের বেশ রমরমা ব্যাপার ছিল এ বছরটাতে। তবে সেই পুরনো ধাঁচে নতুন করে এসেছে সাফারি। আগে সাফারি মধ্য বয়সীদের বেশি পরতে দেখা যেত। কিন্তু এ বছরে সাফারি তরুণদের পোশাক হিসেবেও ঠাঁই করে নেয়। শাড়ি-সালোয়ার কামিজ ও ওয়েস্টার্ন ফিট মেয়েদের পোশাকের বৈচিত্র্য সব সময়ই চোখে পড়ার মতো। যদিও এবার পাখি ড্রেসের মতো কোন ভাইরাল হওয়া ড্রেসের প্রভাব ছিল না। তার পরেও প্রচুর পরিমাণে ভেরিয়েশন ছিল। শাড়ির ক্ষেত্রে জামদানি শাড়ি এবার অনেকটাই এগিয়ে। দেশীয় ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে এটা একটা সুখকর বিষয়। এ ছাড়া শিফন জর্জেট কিংবা কারচুপি কাজের শাড়িও ছিল পছন্দের তালিকার শীর্ষে। গরমের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় কটন ও তাঁতের শাড়ির চাহিদাও ছিল লক্ষণীয়। কাজিজের ক্ষেত্রে এ বছরেও লনের প্রভাব ছিল বেশ। সেই সঙ্গে জামদানি থ্রি পিস সালোয়ার কামিজও নজর কেড়েছে। কুর্তা, কটন টপস্ এবং তাগা তরুণীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তবে ভারি কাজের সালোয়ার কামিজের প্রাধান্য ছিল কম। এ জায়গা দখল করেছে লেহাঙ্গা। যে কোন পার্টিতে তরুণীদের প্রথম পছন্দ ছিল লেহাঙ্গা। কনভার্স, ¯িœকার ও কর্পোরেট সু স্যান্ডেল বা স্যান্ডেল সুয়ের তুলনায় কনভার্স কিংবা ¯িœকার এবার বেশ জনপ্রিয় ছিল। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই কনভার্সগুলো ছিল বেশ মানানসই। এ বছরের কনভার্স ও ¯িœকারে ছিল রঙের বৈচিত্র্য। কমেছে কেডস এর প্রচলন। এ ছাড়া ফিতা বিহীন সু সবার পছন্দের তালিকায়। তবে কর্পোরেট সুতে এসেছে নানা ধরনের ডিজাইন। রং কালো এবং চকোলেটের মধ্যে ঘোরাঘুরি করলেও কর্পোরেট সুর নিত্যনতুন ডিজাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। ফ্যাশনের আনুষঙ্গিক দিন যত গড়িয়েছে মানুষ ততই ফ্যাশনসচেতন হয়ে উঠেছে। নিত্যদিনের পোশাক আশাক ছাড়াও ফ্যাশনের অন্যান্য আনুষঙ্গ যেমন, সানগ্লাস, বেল্ট, হ্যাট, ক্যাপ, ব্রেসলেট, লকেট কিংবা মাফলার এ ছিল বৈচিত্র্যতা। পোশাকের পাশাপাশি এসবের বাজার ছিল বেশ রমরমা। সাজসজ্জা একটা সময় ছিল বিয়েশাদি কিংবা বড় ধরনের কোন পার্টি ছাড়া মানুষ তেমন একটা পার্লারে যেত না। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে মানুষ এখন অনেকটাই রূপ সচেতন। নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখতে বা ফিট থাকতে এখন প্রতিনিয়ত ছেলেমেয়ে সবাই জেন্টস কিংবা লেডিস পার্লারে ভিড় জমায়। বিয়ের সময় মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও বড় একটা সময় পার্লারের পেছনে ব্যয় করে থাকে। ভেরিয়েশন এসেছে হেয়ার স্টাইল এবং সাজসজ্জায়। সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা গেছে পার্টি মেকআপে। এ ছাড়া ব্রাইডাল সাজেও এসেছে নতুনত্বতা। ক্রেতাদের চাহিদা ও রুচি মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে মানুষ খুব সহজেই জেনে যাচ্ছে কোন দেশে কখন কোন ফ্যাশন ট্রেন্ড চালু হয়েছে। কখন কোন ধরনের ড্রেসের চল খুব বেশি। সে কারণেই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের ফ্যাশন ট্রেন্ডকেও। তবে এ বছর একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দেশীয় ব্যবসায়ীদের মনে। বর্তমানে অনেক ক্রেতাই প¦ার্শবর্তী দেশগুলোতে যাচ্ছে শপিং করতে। কারণ হিসেবে জানা যায় একই ধরনের পণ্য ওসব জায়গায় নাকি অনেক কম দামে পাওয়া যায় এবং গুণগত মানও নাকি ভাল এবং দামের তফাত নাকি দ্বিগুণেরও বেশি। যে কারণে অনেকেই সে সব দেশে গিয়ে শপিং করতে কমফোর্ট ফিল করছে এবং দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখনও সময় আছে পণ্য ও দামের সমন্বয় করে দেশীয় পোশাক শিল্পের পরিবর্তন ও পরিমার্জন সাধন করা। প্রয়োজন হলে সরকারের সহায়তা নেয়া উচিত। তা না হলে অচিরেই দেশীয় ক্রেতাদের বড় একটি অংশ হারিয়ে যেতে পারে। অনলাইন শপিং বছরজুড়ে অনলাইন শপিং সাইট বেশ বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করেছে ফ্যাশন ট্রেন্ডে। অনেকেই এখন ঘরে বসে কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যার ফলে প্রচুর অনলাইন সাইট তৈরি হয়েছে। তবে এর পরিমাণ এত বেশি হয়েছে যে অনেক ক্রেতা তাদের মাধ্যমে প্রতারিতও হয়েছেন। এর লাগাম এখনই টেনে ধরা উচিত। না হলে ক্রেতারা বিমুখ হতে পারে। সময়ের পরিক্রমায় সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের ফ্যাশন ট্রেন্ড। এ সমৃদ্ধতা ধরে রাখার দায়িত্ব সবার হলেও ব্যবসায়ীদের একটু বেশিই সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশের বড় একটা সমস্যা হলো ক্রেতাদের চাহিদা, রুচি ও মননকে প্রাধান্য না দিয়েই ¯্রােতের টানে গা ভাসিয়ে দিয়ে ফ্যাশন ট্রেন্ডে কিছু চাপিয়ে দেয়া। যার প্রভাব ক্রেতাদের দেশান্তরী হওয়া। ক্রেতারা এখন অনেক সচেতন। যেনতেন বুঝিয়ে তাদের আর বোঝানো যাবে না। তাই দেশীয় ঐতিহ্য এবং ফ্যাশন ট্রেন্ডকে মজবুত রাখতে সচেতনতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। তবেই দিনে দিনে সমৃদ্ধ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু হোক আমাদের ফ্যাশন ট্রেন্ডের সে প্রত্যাশাই রইল।
×