ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানে ইসিকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানে ইসিকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এড়াতে নির্বাচন কমিশনকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সহনশীল রাজনীতির প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে নানা মত তুলে ধরেন। নির্বাচন কমিশনের শক্ত ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও বলেন বক্তারা। গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওছার বলেন, স্বাধীনতার পর এবারের নির্বাচন সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও অংশগ্রহণমূলক। আমাদের ভাল দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে। আমাদের দল সরকারে থাকলেও আমাদের নেতাকর্মীরা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরাই তত্ত¡াবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু এটি নিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা। আমরা চাই না একদিনের জন্যও অনির্বাচিত কেউ সরকারের দায়িত্বে থাকুক। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এ নির্বাচনে উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। বিয়ে বাড়িতেও ছোটখাটো সমস্যা হয়। এখন জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে, দেশ কীভাবে চলবে। আগামী প্রজন্ম সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কেমন হবে। ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং এ্যালায়েন্স (ফেমা)-এর সভাপতি মুনিরা খান বলেন, নির্বাচনের আর দুই দিন বাকি। এরমধ্যে যা হওয়ার, তা তো হয়েই গেছে। এখন নির্বাচনের দিন যেন শান্তিপূর্ণ হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হতে হবে। প্রার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন তাদের নেতা-কর্মীরা সহিংসতায় জড়িয়ে না পড়েন। সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সব কিছুতে নির্বাচন কমিশন এ্যাকাউন্ট্যাবল। যেন ইলেকশনের দিন কোন অঘটন না ঘটে। তিনি আরও বলেন, ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখালে অনেকে ভোট দিতে আসবেন না। ভোটের পরেও যেন সহিংসতা না হয়, সব দলের পোলিং এজেন্ট যেন ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ইলেকশন প্রোগামের সিনিয়র পরিচালক আবদুল আলীম বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে শান্তির একটি সম্পর্ক রয়েছে। আগে একটা সময় যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা দখল হতো। এটির পরিবর্তন হয়ে ইলেকশন এসছে, যেটি সভ্য প্রক্রিয়া। ইলেকশনের সঙ্গে ভায়োলেন্স শব্দটি যায় না। তারপরও নির্বাচনে ভায়োলেন্স হয়। কোন কোন দেশে নির্বাচন অভিশাপ। বাংলাদেশে ২০০৮ সালের নির্বাচনকে বেস্ট ইলেকশন বলা হয়, তারপরও সেই নির্বাচনে ভায়োলেন্স হয়েছিল। সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশনের জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন উল্লেখ করে আবদুল আলীম বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা রোধে তিনটি মডেল রয়েছে। একটি হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তার জন্য পরিকল্পনা ও কাজ। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে, নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেবে। আর শেষ পদ্ধতি হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে কাজ করবে। সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশনকে শক্ত বার্তা দিতে হবে। কেউ ভায়োলেন্স করলে যেন ছাড় পাবে না, এমন বার্তা নির্বাচন কমিশন থেকে প্রয়োজন। দৈনিক সমকাল ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, সহিংসতা রোধে সমাধানের পথ রাজনৈতিক দলগুলোকে খুঁজতে হবে। একটি কথা প্রচলিত আছে, ভোটের দিন জনগণ একদিনের বাদশা। এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের সব নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে। সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশনকে শক্ত মেসেজ দিতে হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তবে সহিংসতা যেন না হয় সেজন্য এখনও কমিশন কড়া বার্তা দিতে পারে বলেও জানান। এছাড়াও প্রার্থী বাছাইয়ে তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে। বর্তমানে তরুণ প্রার্থীদের অনেকেই পারিবারিক পরিচয়ের কারণে নির্বাচনে এসেছে এটি না হয়ে যারা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনা এবং রাজনীতি করে এসেছেন তাদের প্রাধান্য দেয়ার কথাও বলেন তিনি। ইনডিপেনডেন্ট টিভির বার্তা প্রধান আশিষ সৈকত বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সব প্রার্থীর এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে পাঠাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকলেই সহিংসতা দূর করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি। সামাজিক সংস্থা ডি নেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম সিরাজুল হোসেন বলেন, সহিংসতা দূর করতে হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ন্যায়বিচার না থাকলে শান্তি ফিরবে না। মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে সহিংসতা ছড়ানো হয়। মানুষের আবেগকে উসকে দেয় কারা? মানুষকে যেন কোনভাবে উত্তেজিত না করতে পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে। সবার সহ্য ক্ষমতা বাড়াতে হবে। আওয়ামী লীগের শিক্ষা কমিটির সদস্য শিউলি আফছার বলেন, সহিংসতা দূর করতে ভদ্র সংস্কৃতি দরকার। ইতোমধ্যেই সংসিহতা অনেকটাই দূর হয়েছে। আর রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য দেশপ্রেম দরকার বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চীফ অব পার্টি কেটি কো। আর সঞ্চালনা করেন প্রোগাম অফিসার আমিনুল এহসান।
×