ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার না পাওয়ায় ক্ষোভ!

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার না পাওয়ায় ক্ষোভ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দেশের স্বাধীনতার জন্য ফুটবল খেলে বহির্বিশ্বের জনমত আদায় এবং ফুটবল খেলে প্রাপ্ত অর্থ মুক্তিযোদ্ধাদের দান করার ঘটনা বিশ্বে বিরল এবং একটিই উদাহরণ আছে। আর সেই দৃষ্টান্ত একমাত্র স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কনফারেন্স রুমে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেয়া হয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহার তান্না, দলের প্রস্তাবক-খেলোয়াড় সাইদুর রহমান প্যাটেল, শেখ আশরাফ আলী, কে এন নওশেরুজ্জামান, সুভাষ সাহা, শেখ আব্দুল হাকিম, তসলিম উদ্দিন শেখ, আবদুস সাত্তার, ছিরু, আব্দুল খালেক (তার অনুপস্থিতিতে ছিলেন তার ছেলে আফজাল হোসেন মিঠু), মোজাম্মেল হক ও কাজী মোঃ সালাউদ্দিন প্রমুখ। এছাড়া অসুস্থ থাকায় এবং ইন্তেকাল করায় এই দলের অনেকেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। আসেননি দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, সহ-অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরাসহ আরও অনেকেই। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। এছাড়া পৃষ্ঠপোষক তমা গ্রুপ দলের সবাইকে একটি করে ব্লেজার এবং দশ হাজার টাকা করে প্রদান করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তমা গ্রুপের কর্ণধার আতাউর রহমান মানিক, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, বাফুফে সদস্য আব্দুর রহিম, শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, অমিত খান শুভ্র এবং বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। এই দলের যেসব সদস্য ইন্তেকাল করেছেন তাদের স্মরণে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উল্লেখ্য, এর আগে বাফুফে একই দলকে একবার সংবর্ধনা দিয়েছিল ২০০৯ সালের ৪ জানুয়ারি। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা দলের সদস্যদের মাত্র ১০ হাজার টাকা দেয়ায় এ নিয়ে প্রশ্ন ও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ আজ থেকে ৪৭ বছর আগে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ফুটবল খেলে অবদান রেখেছিলেন, যাদের অধিকাংশই আজ অসুস্থ ও দরিদ্র অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন, জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা-ফুটবলারদের মাত্র ১০ হাজার টাকা করে দেয়াটা একরকম অপমানেরই শামিল। এখানেই শেষ নয়, সংর্বধনা অনুষ্ঠানে যখন তান্না দলের সমস্যা-দারিদ্রতা-অসুস্থতার কথা বলছিলেন এবং মাস তিনেক আগে এ নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে গিয়ে আবেদন করেছিলেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, বীরেন আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন না করায় আক্ষেপ করছিলেন, তখন তার পাশেই বসা ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী জয়। জয় এই কথার প্রেক্ষিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে ‘ঘোষণাসর্বস্ব’ এই ক্রীড়া উপমন্ত্রীর আশ্বাস আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না এ নিয়ে ঢের সংশয় রয়েছে। কেননা অতীতে তিনি এরকম ‘ফাঁকা’ প্রতিশ্রুতি বহুবার দিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ জাতীয় অনুর্ধ-১৫ মহিলা ফুটবল দলকে দুটি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তার মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ লাখ করে দু’দফায় মোট দশ লাখ টাকা বোনাস পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও সেই পুরস্কারের একটি টাকাও বুঝে পায়নি বাংলার বাঘিনীরা। কাজেই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান তিনি কি করে করবেন সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে। তাছাড়া এই সংর্বধনা অনুষ্ঠানেও তিনি সময়মতো আসেননি। এসেছেন একেবারের শেষের দিকে। এসেই বলেন, তিনি খুব ক্ষুধার্ত, তাই এখানে এসেছেন দুপুরের খাবার খেতে। একজন ‘দায়িত্বশীল’ উপমন্ত্রীর মুখে এ ধরনের কথা শোভা পায় কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সালাউদ্দিন বলেন, ‘৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার সেই অমর ভাষণের জন্যই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। দেশ স্বাধীন না হলে আজ আমি বাফুফের সভাপতি হতে পারতাম না। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের আমিও একজন সদস্য ছিলাম। একাত্তরে আমরা একসঙ্গে লড়াই করেছিলাম ফুটবল মাঠে। আজ তাদের অনেকেই নেই। তারপরও এখানে যারা এসেছেন তাঁদের দেখতে পেয়ে খুবই আবেগে আপ্লুত হয়েছি।’ তান্না বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। বয়স ছিল ২০। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে উজ্জীবিত হই। মনে পড়ে আমরা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল খেলতে যেতাম ট্রেনের থার্ডক্লাস টিকেট কেটে। ৪৭ বছরেও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন স্বীকৃতি পায়নি, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পায়নি, এ নিয়ে আমাদের অনেক দুঃখ ও ক্ষোভ আছে।’ প্যাটেল জানান, ‘এই দলের ধারণা আমিই কলকাতায় বসে দিই। দলের প্রথম খেলোয়াড় ছিল আশরাফ। তারপর পাই আলী ইমাম, প্রতাপ, নুরুন্নবীকে। তারপর বাকিদের। তাজউদ্দিন আহমেদকে এই দল সম্পর্কে জানালে তিনি সানন্দে এই প্রস্তাব মেনে নেন এবং দল গঠনে আমাদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন। তারপর আমরা ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে খেলা শুরু করি। সবমিলিয়ে ১৬টি ম্যাচ খেলি। যার ১২টিতে জিতি, ৩টিতে ড্র এবং একটিতে হারি। সেই সময় ১৬ লাখ টাকা খেলার মাধ্যমে আয় করে সেই টাকা সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দান করে দেয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।’
×