ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের অসাম্প্রদায়িক মাটি যেন কলঙ্কিত না হয়

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

দেশের অসাম্প্রদায়িক মাটি যেন কলঙ্কিত না হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ৩০ ডিসেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে চলা উগ্র-সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীকে ভোট দেয়ার মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক মাটি যেন কোন অবস্থাতেই কলঙ্কিত না হয়’ এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, আর কখনই বাংলাদেশকে আক্রমণের শিকার হতে দেয়া যাবে না। তাই ভোটে মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে ভোট অনুষ্ঠান উৎসবমুখর করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ভোটকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত ও উগ্রবাদী গোষ্ঠী যেন কোন অবস্থাতেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করতে না পারে এজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বক্তারা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও পাকিস্তানী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে পারলে শঙ্কাহীন উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কারণ দেশের মানুষ ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষায়। সারাদেশে বইছে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘পথ হারাবে না বাংলাদেশ’ শিরোনামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ধারাবাহিক কর্মসূচী চালিয়ে আসছে সামাজিক সংগঠন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গাহি সাম্যের গান’ স্লোগানে ‘শঙ্কাহীন উৎসবমুখর নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। এতে দেশের বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। নির্বাচনে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও অভিনেতা পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এবারের নির্বাচনে কেউ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা যে কোন মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকেরই মনে রাখতে হবে সবাই দেশের নাগরিক। এখানে সবার অধিকার সমান। সংখ্যালঘু বলে কাউকে দুর্বল ভাবা কিংবা এ সম্প্রদায়ের মানুষদের দুর্বল চিন্তা করার কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিসর্জন দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এবার ২৫ জামায়াত নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। চেতনার জায়গায় দাঁড়িয়ে তাদের আমরা বিজয়ী হতে দিতে পারি না। ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিজয়ী করে জাতীয় সংসদে যেতে দিতে পারি না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ যেন কোন অবস্থাতেই আক্রমণের শিকার না হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অশুভ শক্তিকে পরাজিত করার অঙ্গীকার থাকলে আমরা নিশ্চিত ভোট উৎসবমুখর হবে। অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, দেশপ্রেমের চিন্তা থেকে আমাদের এক মিনিটের জন্য সড়ে গেলে চলবে না। তাহলে অশুভ শক্তি বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারে। জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে রুখে দিতে পারলে কোন অবস্থাতেই বাংলাদেশ পথ হারাতে পারে না। আমাদের সকলের জন্য নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ হলো এই শক্তিকে প্রতিহত করা। নির্বাচনের জামায়াতে ইসলামীকে বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেছেন, ‘ইসলামের দুশমন, সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনাকারী জামায়াতে ইসলামীকে বর্জন করতে হবে। এরা যে কোন প্রতীকেই নির্বাচন করুক না কেন তাদেরকে প্রতিহত করা ঈমানের দাবি’। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের দোসরদের ভোট দেয়া মানে ইসলাম, দেশ ও মানবতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা। একাত্তরের পরাজিত শক্তি সহজ-সরল সাধারণ মানুষদের সহযোগিতা নিয়ে আবারও তারা নির্বাচনে জয় তুলে নিতে ভোটে দাঁড়িয়েছে। এদেরকে ভোটের মতো আমানত দেয়া যাবে না। এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। সংসদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌঁছাতে দেশবিরোধীদের সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকুন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক কামাল হোসেনকে বাংলাদেশের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, এবারের নির্বাচনে কামাল হোসেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে সহযোগিতা করছেন। তার উদ্দেশে সাম্প্রদায়িক ও মুক্তযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া। পুলিশ বাহিনীকে জানোয়ার বলায় কামাল হোসেনের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারেকের নির্দেশে বিএনপি হাজার-হাজার কোটি টাকা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লন্ডনে বিলাসবহুল জীবন-যাপনের জন্য এসব টাকা পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ভোট দিতে প্রস্তুত। ২০০৮ সালের চেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের নির্বাচন হবে এমন আশার কথা জানিয়ে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ জামায়াত-বিএনপি-ধর্মান্ধ-উগ্রবাদের রাজনীতি চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমার বিশ^াস। তিনি বলেন, আমি বিশ^াস করি সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে মানুষ নৌকার পক্ষে ভোট দেবেন। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ড. এম এ হাসান বলেন, এবারের নির্বাচনে দুটি পক্ষ একেবারেই স্পষ্ট। এর একটি হলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্যটি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ’৭১-এর ঘাতকদের সমর্থক ও পাকিস্তানীদের প্রতি নমনীয়। তিনি বলেন, তরুণ ভোটারদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ভোট অনুষ্ঠান উৎসবমুখর হতে পারে। তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে কেন্দ্রে এনে ভোট নিশ্চিত করতে হবে তরুণ সমাজের প্রতিনিধিদের। সবাই যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো বলি পথ চলায় কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে। তিনি বলেন, ’৭১-এর অপশক্তি ও তাদের সমর্থকদের নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে বর্জন করতে হবে। তাহলে আমরা প্রত্যেকেই নিশ্চিত হবো দেশ সঠিক পথে চলবে। কোন সময় পথ হারাবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত করতে সবার ভূমিকা দরকার। মানবাধিকার কর্মী এ্যারোমা দত্ত বলেন, আমাদের সবার সতর্ক থাকতে হবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি যেন আর কখনও মাথাচড়া দিয়ে ওঠতে না পারে। আমাদের অসাম্প্রদায়িক মাটি যেন কোন অবস্থাতেই কলঙ্কিত না হয় সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক উত্তম বড়ুয়া, রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক মোঃ আলাউদ্দিন, গবেষক সাজেদুল আওয়াল, ডাঃ কে সি গাঙ্গুলি প্রমুখ।
×