ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আসছে দেশে শুভ দিন। সত্যিই কি শুভ হবে আগামী? নাকি অশুভ অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে আবার? মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ টিকে থাকবে তো? স্বাধীনতা বিরোধী যোদ্ধাপরাধীদের আস্ফালন, তাদের পতাকাবাহী গাড়ি দেখতে হবে? এত যে উন্নয়ন এগিয়ে যাওয়া, থেমে যাওয়ার জন্য? মৌলবাদ জঙ্গীবাদ অগ্নিসন্ত্রাস ফিরে আসবে আবার? অনেক প্রশ্ন। এইসব জরুরী প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হবে আগামী রবিবার। এদিন অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার আগে সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকায়ও চলছে প্রস্তুতি। সংসদ সদস্য প্রার্থীরা টানা কয়েকদিন ধরেই ভোট প্রার্থনা করছেন। বৃহস্পতিবার প্রচারণার শেষ দিনে সবচেয়ে বড় মিছিল বের করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে রাজপথে নেমেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। ঢাকা ১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার সমর্থনে বের হওয়া মিছিল দেখে অনেকেরই চোখ কপালে উঠেছে। বিজয় সরণি থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত দীর্ঘ শোভাযাত্রা। নির্বাচনী প্রতীক নৌকা হাতে নিয়ে মিছিল করতে করতে এগিয়ে যান কর্মীরা। সাবের হোসেন চৌধুরী, ফারুখ, কামাল আহমেদ মজুমদার, ইলিয়াস মোল্লাসহ অন্যদের পক্ষ থেকেও বিশাল বিশাল মিছিল বের করা হয়। জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত ছিল এসব মিছিল। সেইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে স্বাধীন বাংলা বেতারের গান বাজানো হয়। এভাবে একাত্তরের চেতনার পক্ষে জোট বাঁধার আহ্বান জানান প্রার্থীরা। ভয় ভীতির বাইরে একটা উৎসবের আমেজও ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য বিএনপি জামায়াতের পক্ষে তেমন কোন প্রচারণা চোখে পড়েনি শেষ দিনেও। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা সীমিত পরিসরে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। ‘নীরব বিপ্লব’ আশা করছেন তারা। এই বিপ্লবের আসল মানে কী? ভোটের দিন কী ঘটাতে চান তারা? অনেকেই জানতে আগ্রহী। বিষয়টি নিয়ে ঢাকার অলিতে গলিতে আলোচনা চালু আছে। কেউ কেউ কিছুটা আতঙ্কিত বলেও মনে হচ্ছে। তাদের বক্তব্যÑ বিএনপি জামায়াত বিগত দিনে ভয়ঙ্কর অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিল। সেই বিভীষিকা কোনদিন ভোলার নয়। নির্বাচনের দিন তারা তাদের আদিরূপ দেখাবে না তো? কিছুটা আশঙ্কা থেকেই যায়। এ অবস্থায় ভোটারদের কথা বলতে হবে নিজের সঙ্গে। প্রচার শেষ। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। প্রয়োজনীয় সবগুলো প্রশ্ন মাথায় রেখে ভোট দেবেন ঢাকার ভোটাররা। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেয়ার লক্ষ্যে ভোট দেবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই একটি মাত্র চাওয়া এখন সচেতন মানুষের। ঢাকার বিভিন্ন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেও এমন চাওয়ার কথা জানাচ্ছেন সংগঠকরা। শাহবাগে স্থাপিত বিজয় মঞ্চের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। উদ্যোগটি সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের। গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে সঙ্গীত নৃত্য কবিতা পথনাটকে মুখরিত এই মঞ্চ। এখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির জন্য ভোট চাওয়া হচ্ছে। আয়োজকরা বলছেন: আমার ভোট আমি দেবো, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেব। এ স্লোগান ধারণ করেই চলছে বিজয়মঞ্চের কর্মসূচী। সঙ্গীত নৃত্য হচ্ছে। নাটক হচ্ছে। উৎসবমুখর আয়োজনে চাওয়া হচ্ছে ভোট। এদিকে, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শেষ হয়ে এলেও আবহটা রয়ে গেছে। জাতীয় জাদুঘরে এখন চলছে মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ প্রদর্শনী। একাত্তরের মিত্রবাহিনীর ব্যবহার করা অস্ত্র, প্রকাশিত পুস্তিকা, আলোকচিত্র নিয়ে আয়োজন করা প্রদর্শনী চলবে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত। শিল্পকলা একাডেমিও মেতেছিল বিজয়ের মহোৎসবে। একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে গত ২১ ডিসেম্বর উৎসবের আয়োজন করা হয়। স্লোগান ছিল- অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শিল্প নিয়ে পৌঁছে যাব আমরা উন্নতির শিখরে। প্রতিদিন বিকেলে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী দিয়ে উৎসব শুরু হয়। আরও ছিল নাটক, পালা, সঙ্গীত, নৃত্য, এ্যাক্রোবেটিকসহ নানা পরিবেশনা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলা উৎসব থেকে বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। বহু কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতা ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এসবের বাইরে মঙ্গলবার ছিল বড়দিন। নানা আয়োজনে ঢাকায় দিবসটি উদ্যাপন করা হয়। গির্জাগুলোতে ছিল বহুবিধ আনুষ্ঠানিকতা। বাসা বাড়িতে বিশেষ খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হয়। মূলত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও, সব ধর্মের মানুষ মিলে মিশে উদ্যাপন করেছেন। আবারও প্রমাণিত হয়েছে- ধর্ম যার যার/উৎসব সবার।
×