ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিকেলে ঘোষণা দিয়ে রাতেই সংশোধন করলেন এরশাদ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

বিকেলে ঘোষণা দিয়ে রাতেই সংশোধন করলেন এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে দেয়া ঘোষণা রাতেই আবার সংশোধন করেছে জাতীয় পার্টি প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সিঙ্গপুর থেকে দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের সিদ্ধান্তের বাইরে জাতীয় পার্টি থেকে আলাদাভাবে যেসব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন, তাদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। তবে রাতেই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এরশাদ বলেন, এ ধরনের ঘোষণা তিনি দেননি। মহাজোটের বাইরে থাকা জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচন করবেন। রাত সোয়া ৯টার দিকে এরশাদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য ভুলভাবে প্রচারিত হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। মহাজোট ব্যতীত জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মুক্তভাবে নিজ নিজ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। বিবৃতিতে এরশাদ আরও বলেন, কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। তাদের নির্বাচনের মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হলো। বিবৃতিতে এরশাদ আগের বক্তব্য সংশোধন করতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বারিধারার নিজ বাসা প্রেসিডেন্ট পার্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ এর ঠিক উল্টো কথা বলেছিলেন। এ সময় দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এরশাদের সংবাদ সম্মেলনের পর পরই কাকরাইল জাপা কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন আসনে প্রতিদ্ব›দ্বী জাপা প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তবে কথা বলে সেই কথা বদলে ফেলার ঘটনা এরশাদের জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও বহুবার তিনি এক কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরে ভিন্ন কথা বলেছেন। অসুস্থতা নিয়ে নাটকীয়ভাবে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পর সেখান থেকে ফিরে তিনি এরশাদ বলেন, আমার বোন শেখ হাসিনাকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। আমি নির্বাচনে বোন শেখ হাসিনাকে সর্বোত সহযোগিতা করব। সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ জানান, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মহাজোটের সিদ্ধান্তই মেনে চলবে। তিনি নিজেও ঢাকা-১৭ আসনে ভোট করা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তিনটি আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত একটি আসনে লড়বেন সাবেক সেনা প্রধান এরশাদ। এবারের নির্বাচনে মহাজোট থেকে ২৯টি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ২৬টি আসনের কথা। এর বাইরে আলাদাভাবে আরও ১৪০টি আসনে উন্মুক্ত প্রার্থী রাখার কথা জানায় জাতীয় পার্টি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নৌকা নয়, ধানের শীষ ঠেকাতেই এই প্রার্থী দেয়া হয়েছে। জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছিলেন, সব মিলিয়ে ১৭৪টি আসনে তাদের প্রার্থী রয়েছে। তবে গেল ১০দিনে বিভিন্ন আসনে ১০ জনের বেশি প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে মহাজোটের বাইরে আলাদা প্রার্থীদের বিষয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘মহাজোট মনোনীত যেসব প্রার্থী আছে, তারা ছাড়া অন্যদের সরে যেতে হবে। মহাজোটকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। মহাজোট সরকার উন্নয়নের রোল মডেল একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে মহাজোটই জিতবে। কারণ বিএনপির অতীত ইতিহাস ভাল নয়। নৌকা নয়, ধানের শীষ ঠেকাতে জাপার আলাদা প্রার্থী দেয়া হয়েছিল। আমি সবাইকে সড়ে দাঁড়ানোর আহŸান জানাই। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার কবি মানুষ, এ কারণে উল্টাপাল্টা বকছে। লেভেল প্লেয়িং কী জিনিস? যারা লেভেল প্লেয়িং নিয়ে কথা বলছে, তারা কি আদৌও এর অর্থ জানে?।’ সাংবাদিকদের তিনি জানান, জাতীয় নির্বাচনে ঢাকায় জাতীয় পার্টির দুই জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। তারা হলেন, আবু হোসেন বাবলা ও কাজী ফিরোজ রশীদ। এদের জেতার সম্ভাবনা কম বলেও মন্তব্য করেন এরশাদ। রংপুরের একটি আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন এরশাদ। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি রংপুরে এতদিন যেতে পারিনি। তবে রংপুরে যাব। রংপুরের মানুষ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আশা করি, রংপুরবাসী এবার এই আসনটি মহাজোটকে উপহার দেবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আরও বলেন, জনগণ এই সরকারের পক্ষে আছে। ভোটের যে পরিবেশ বজায় রয়েছে, তাতে আমরা খুশি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তবে আমার শরীরটা ভাল না। আমার বোন শেখ হাসিনার জন্যই আমি দেশে ফিরে এসেছি। আমি ঢাকা-১৭ আসনটি ছেড়ে দিয়েছি। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফারুককে সমর্থন দিয়েছি।’ মহাজোটের বাইরে নিজ দলের আলাদা প্রার্থীদের বিষয়ে এরশাদ বলেন, মহাজোট মনোনীত যে সব প্রার্থী আছে তারা ছাড়া অন্যদের সরে যেতে হবে। মহাজোটকে বিজয়ী করার জন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘জনগণ এই সরকারের পক্ষে। আমি আশাবাদী একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এদিকে এরশাদ দেশে ফেরার পর তার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফারুক বলেন, এরশাদের সমর্থন পেয়েছি। তার এই অবদান কোনদিন ভুলব না। নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীক একই এরশাদের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এখন এই আসনে নৌকার পক্ষে কাজ করবেন জাপা চেয়ারম্যান আমাকে এ আশ্বাস দিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন এরশাদ। ২০১৪ সালে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান তিনি। এবারের নির্বাচনে আবারও ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী হন সাবেক এই সামরিক শাসক। কিন্তু মহাজোটে তাকে শুধুমাত্র রংপুরের আসনে সমর্থন দেয়া হয়। কিন্তু তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। তার পক্ষে প্রচার চালান দলের নেতাকর্মীরা। এই প্রেক্ষাপটে দেশে ফিরে তিনি ঢাকা-১৭ আসন ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিলেন। পাশাপাশি নির্বাচনকে ঘিরে আসন বণ্টন ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ৪০ আসন নিয়ে বিরোধী দলে থাকা জাপা এবারের নির্বাচনে ৭০টি আসন দাবি করেছিল। কিন্তু এবারে মহাজোটের পরিধি বাড়ায় জাপা আসন পায় ২৯টি। এতে ক্ষুব্ধ হন এরশাদ। রহস্যজনক কারণে তাকে ভর্তি করা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখান থেকে ১০ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুর চিকিৎসার নামে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার অনুপস্থিতিতে দলের পক্ষ থেকে অন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে জাপা প্রার্থীরা লাঙ্গল প্রতীকে প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনা ছিল, জাপার প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সর্বশেষ এরশাদ দেশে ফিরে ঘোষণা দিলেন দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াতে। নির্বাচনকালীন সহিংসতা নিয়ে এরশাদ বলেন, এটা তো বাংলাদেশের রীতি। প্রতি নির্বাচনে সহিংসতা হয়। মানুষ হত্যা করা হয়। এটা বরাবর হয়ে আসছে। সবার সমান সুযোগ নিয়ে বিএনপির অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও নীরব থাকেন এরশাদ।
×