ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেমিটেন্স প্রেরণে নগদ প্রণোদনার সুপারিশ মন্ত্রণালয়ের

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

রেমিটেন্স প্রেরণে নগদ প্রণোদনার সুপারিশ মন্ত্রণালয়ের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈধ চ্যানেলের তুলনায় অবৈধ চ্যানেলে ডলারের বিনিময় হার বেশি থাকায় কাক্সিক্ষত রেমিটেন্স আসছে না বলে মনে করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। রফতানির মতো রেমিটেন্সের ওপর নির্ধারিত হারে প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের চেয়ে অবৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার কিছুটা বেশি থাকায় সামান্য লাভের আশায় অনেকে সেদিকে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে রফতানির মতো করে রেমিটেন্সে নগদ প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। তবে রফতানির মতো নগদ সহায়তা দেয়ার পক্ষে নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব রৌনক জাহান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের ১৬৫টি দেশে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশী কর্মরত। ২০০৯ সালে ৪ লাখ ৭৫ হাজার কর্মী বিদেশে যান। গত বছর গেছেন ১০ লাখের বেশি। বিদেশে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হচ্ছে, বৈধ রেমিটেন্স প্রবাহে তা পুরোপুরি প্রতিফলিত হচ্ছে না। ব্যাংকের চেয়ে অবৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার কিছুটা বেশি থাকায় সামান্য লাভের আশায় অনেকে সেদিকে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে রফতানির মতো করে রেমিটেন্সে নগদ প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি বেশি রেমিটেন্স আসে এমন দেশে ব্যাংকের কালেকশন বুথ বাড়ানো এবং ছুটিসহ সপ্তাহের যে কোন দিন রেমিটেন্স পাঠানোর পর দ্রুত তা সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা, বিদেশী এজেন্সির সঙ্গে মূল ব্যাংকের নিয়মিত হিসাব সমন্বয় এবং রেমিটেন্স আহরণে উদীয়মান ফ্রান্স, মিসর, লিবিয়া, লেবানন, মরিসাস ও গ্রিসের মতো দেশে ব্যাংকের এজেন্সি বাড়ানো উচিত। মালদ্বীপে ক্রমবর্ধমান হারে জনশক্তি রফতানি বাড়লেও দেশটি থেকে রেমিটেন্স কমার কারণ বের করার অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। তবে রফতানির মতো নগদ সহায়তা দেয়ার পক্ষে নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা এমন হলে এক শ্রেণীর দুষ্টচক্র উল্টো দেশ থেকে হুন্ডি করে ডলার বাইরে নিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে আবার দেশে এনে প্রণোদনা নেবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রণোদনা দেয়া সরকারী সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে প্রবাসীদের অর্থ বৈধ চ্যানেলে দেশে আনতে বন্ডে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ সুদ এবং দ্রুততম সময়ে সুবিধাভোগীর টাকা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এসব সুবিধা কিভাবে আরও বাড়ানো যায় তা ভাবা যেতে পারে। জানা গেছে, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রেমিটেন্স বাড়ানোর উপায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, রেমিটেন্সে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া যাবে না। কারণ তাতে দ্বৈত মুদ্রা বিনিময় হার হয়ে যাবে। তাই পাঠানোর খরচ কমাতে হবে। কিভাবে তা করা যায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশ করতে বলা হয়। এরপর রেমিটেন্স আহরণকারী শীর্ষ ২০ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে বলা হয়, রেমিটেন্স আনতে অধিকাংশ ব্যাংক চার্জ নেয় না। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ থেকে ৪ শতাংশ হারে চার্জ নেয়। ফলে রেমিটেন্স পাঠানোর ব্যয় কমাতে ব্যাংকের করণীয় নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকলেও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছন্দপতন হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরের এক হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার থেকে রেমিটেন্স আড়াই শতাংশ কমে নেমে আসে এক হাজার ৪২৩ কোটি ডলারে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর আবার বেড়ে হয় এক হাজার ৫৩২ কোটি ডলার। দেশের ইতিহাসে যা ছিল সর্বোচ্চ। এর পর টানা দুই অর্থবছর রেমিটেন্স ব্যাপক কমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলারে নামে। গত অর্থবছর আবার ১৭ শতাংশের বেশি বাড়লেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পর্যায়ে আসেনি। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন পর্যালোচনায় রেমিটেন্স কমার অন্যতম কারণ হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে হুন্ডির বিষয়টি উঠে আসে। হুন্ডি ঠেকাতে মানি লন্ডারিং আইনের শক্ত প্রয়োগ, সন্দেহজনক বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট বন্ধ, লেনদেনসীমা কমানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান রয়েছে।
×