ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শফিকুর রহমানকে বিজয়ী দেখতে দলমত নির্বিশেষে সবাই একাট্টা

ফরিদগঞ্জে এবার নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

ফরিদগঞ্জে এবার নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে

ফিরোজ মান্না, ফরিদগঞ্জ থেকে ॥ ডাকাতিয়া বিধৌত উপজেলা ফরিদগঞ্জ। ইতোমধ্যে ডাকাতিয়ার জল গড়িয়েছে অনেক। এ আসনে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার মওলানা মান্নান জিয়া-এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন। সেই কলঙ্কিত মান্নানের এলাকায় এবার নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে বেশ জোরেশোরেই। নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। নৌকার প্রার্থী মুহম্মদ শফিকুর রহমানের সভা সমাবেশে মানুষের ঢল ডাকাতিয়ার জলের মতোই গড়িয়ে যাচ্ছে। মিছিলে মিছিলে প্রতিটি জনসভা কানায় কানায় ভরে উঠছে। ফরিদগঞ্জের প্রবীণরা বলছেন, স্বাধীনতার পর ফরিদগঞ্জে নৌকার পক্ষে এমন জোয়ার এরাবই প্রথম। ’৭৩ সালে এ আসনে নৌকার মাঝি হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন এম শফিউল্লাহ। এরপর ’১৪ সালের নির্বাচনে শামসুল হক ভুঁইয়া নির্বাচিত হন নৌকার প্রার্থী হয়ে। মাঝখানে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আসনটিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এবার কলঙ্ক মুছে ফেলতে ফরিদগঞ্জবাসী এবার এক জোট হয়েছেন। তারা নৌকার প্রার্থী শফিকুর রহমানকে বিজয়ী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ফরিদগঞ্জ (২৬৩) হচ্ছে চাঁদপুর-৪ আসন। এ আসনে বিভিন্ন দলের মোট প্রার্থী ৮। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান। এ আসনে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জাপার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাইনুল ইসলাম মানিক, বাসদের আনিসুজ্জামান ভুঁইয়া রানা (মই), ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মোখবুল আহমেদ (হাতপাখা), মুসলিম লীগের মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া (হারিকেন), ইসলামী ফ্রন্টের গোলাম হোসেন মানিক মোমবাতি প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। জাকের পার্টির এক প্রার্থী রয়েছেন, যার নাম এলাকার অনেকের কাছে জানতে চাইলেও বলতে পারেননি। কিন্তু বুধবার উচ্চ আদালতের রায়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মাঠে নামেন লায়ন হারুন অর রশীদ। ২০০৮ সালেও একই কায়দায় ভোটের চার দিন আগে তিনি উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। এলাকার মানুষ বলেছেন, হারুন অর রশীদ টাকার কুমির। ২০০৮ সালে তিনি টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে অন্তর্কলহ সৃষ্টি করে অল্প ভোটের ব্যবধানে জিতে যান। এবারও তিনি একই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তিনি বৃহস্পতিবারও এলাকায় ঢোকেননি। তার কর্মীরা বুধবার রাত থেকে কয়েক জায়গায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। প্রকাশ্যে কোন বিএনপি নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। এ কারণে বিএনপির কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। অন্য ৬ প্রার্থীরও এলাকায় তেমন কোন প্রচার নেই। তাদের পোস্টার লিফলেট কিছুই চোখে পড়েনি। তবে হাতপাখার প্রচার রয়েছে। মাঝেমাঝে পোস্টার ব্যানার দেখা গেছে। এলাকার মানুষ অনেক প্রার্থীর নামও ঠিক বলতে পারেন না। অথচ তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। অনেকেই বলছেন এ আসনে ৮ প্রার্থীর মধ্যে বেশিরভাগই জামানত হারাবেন। এলাকায় কেবল নৌকার জয়-জয়কার। বৃহস্পতিবার বালুথুবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ে নৌকার প্রার্থী শফিকুর রহমানের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। বিদ্যালয়টি শফিকুর রহমান নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই তিনি দীর্ঘদিন অবৈতনিক প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত স্কুল মাঠের জনসভায় তিনি আওয়ামী সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরেন। তিনি জনসভায় প্রথমে শেখ হাসিনার পক্ষে সবার কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। এরপর নিজের জন্য ভোট চান। জোয়ারের মতো ছুটে আসা মানুষগুলো দুই হাত তুলে শফিকুর রহমানকে ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মানুষের এই উচ্ছ্বাস-আবেগে আপ্লুত তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে-মুক্তিযুদ্ধের ফরিদগঞ্জে কোন দালাল রাজাকারের স্থান হবে না। ফরিদগঞ্জবাসী তাদের স্থান দেবেন আস্তাকুঁড়ে। আমি এই মাটির সন্তান। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, কোন রাজাকারের পুনর্বাসনের জন্য নয়। আপনাদের ভালবাসা নিয়ে আমি যদি মহান সংসদে যেতে পারি আমি আমার সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করব।
×