ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নৌকা এগিয়ে, মরিয়া বিএনপি

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

নৌকা এগিয়ে, মরিয়া বিএনপি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ এবারও লক্ষ্মী আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে উঠবে বলে ধারণা করেছেন পর্যটন শহরের মানুষ। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করবে বলে আশাবাদী সৈকত রাণীর বাসিন্দারা। স্থানীয় মুরব্বিদের কাছে উখিয়া-টেকনাফ আসনটি ‘লক্ষ্মী’ আসন হিসেবে পরিচিত। ওই আসনটি যে দলের প্রার্থীর ভাগ্যে যায়, ওই দলই সরকার গঠন করে থাকে। প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, উখিয়া-টেকনাফের লক্ষ্মী আসনটি নিজ নিজ দলীয় ঘরানায় আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষে যে হারে ডাকঢোল পিটিয়ে কর্মীরা প্রচার চালাতে চেয়েছিল, মাঠে ব্যাপক জনসমর্থন না দেখে সেই আশা পূরণ হচ্ছে না তাদের। বর্তমানে আওয়ামী লীগের নারী প্রার্থী শাহীন আক্তারের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই এখন উন্নয়নের প্রতীক নৌকার জন্য ভেদাভেদ ভুলে কাজ করছেন। তাতে কপাল খুলেছে বদিপত্নী। বিএনপির টিকেটে চারবার নির্বাচিত সাংসদ হেভিওয়েট প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের টিকেটে নতুন মুখ নারী প্রার্থী শাহীনা আক্তারের কাছে ধরাশায়ী হলে আফসোস করা ছাড়া কিছুই থাকবে না বলে জানিয়েছেন এ আসনের প্রবীণ ভোটারগণ। ভোটাররা বলেন, শাহীন আক্তার সীমান্ত এলাকার গরিবের বন্ধু খ্যাত এমপি বদির স্ত্রী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে আবদুর রহমান বদি এমপির সাপে-নেউলে সম্পর্কে বরফ গলে যাওয়া ও নৌকার বিজয়ের প্রশ্নে মান-অভিমান ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়া মানেই নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার যে হারে এলাকার উন্নয়ন করেছে, তার অনেকগুলো দৃশ্যমান। ওই ১০ বছরে এমপি বদি তার নির্বাচনী এলাকায় প্রতিটি গ্রাম, পাড়া-মহল্লা ইত্যাদিতে বসবাসকারী মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে জনগণের সঙ্গে বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর গ্যাপ তৈরি হয়। ওই গ্যাপটি কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে স্বামীর ব্যাপক জনপ্রিয়তার প্রভাব কাজে লাগিয়ে আসনটিতে শাহীন আক্তার নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে জয়ী হতে সক্ষম হবেন বলে স্থানীয়দের ধারণা। ভোটারদের অবস্থা বুঝতে পেরে বিএনপি প্রার্থীর বহু কর্মী বাড়ি বাড়ি ভোট প্রার্থনা থেকে বিরত রয়েছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজার-১ চকরিয়া-পেকুয়া আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাফর আলম বিএনপির দুর্গে আঘাত হানতে চেষ্টার কমতি রাখছেন না মোটেও। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত একটি বারের জন্যও এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে আনা সম্ভব হয়নি। এবারে আসনটি ছিনিয়ে আনতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জাফর আলম। তারপরও স্থানীয় ভোটারগণ বিএনপির ভোট ব্যাংক নিয়ে সন্দিহান। কেননা চকরিয়া-পেকুয়ায় বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে মরিয়া হয়ে কাজ করছে হাজারো ভোটার। তাদের রয়েছে বিশাল নীরব ভোটব্যাংক। এক্ষেত্রে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী বিএনপি প্রার্থী এ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ প্রচার ও জয়ের পথে এগিয়ে রয়েছেন বলে ধারণা স্থানীয় ভোটারদের। দেশের উন্নয়ন দেখে এবারে হাজার হাজার নবীন ভোটার নৌকায় ভোট প্রদানের অঙ্গীকার করে চলেছেন। জেলার চারটি আসনের মধ্যে অপর তিনটি আসনে নৌকা প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত ধরে নিলেও চকরিয়া-পেকুয়া আসনে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে। কক্সবাজার-২ মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে প্রথমে সন্দেহ থাকলেও বর্তমানে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আশেক উল্লাহ রফিকের নৌকা প্রতীক জয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা বেশি বলে স্থানীয় ভোটারদের ধারণা। তারা বলেন, প্রথমে জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদই ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। তখন বিএনপি-জামায়াত সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একক প্রার্থীর পক্ষে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে বিএনপি নেতা সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মাঠে নামলে বিভক্ত হয়ে পড়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এতে ফাটল ধরেছে বিএনপির দুর্গে। এখন তারা নিজ নিজ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তবে একতাবদ্ধ হয়ে আছে নৌকার ভোটাররা। এ ক্ষেত্রে সুবিধা অবস্থা রয়েছেন আওয়ামী লীগরে প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক এমপি। কক্সবাজার-৩ সদর-রামু আসনে এবারও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল জয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন মুরব্বিরা। যেহেতু পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজারের উন্নয়নে এমপি কমলের ব্যাপক অবদান রয়েছে। এছাড়াও বিএনপি সরকারের আমলে এ আসনে বড় বড় হোটেল ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা (চাঁদা) হাতিয়ে নিত বিএনপি নেতারা। আওয়ামী লীগের আমলে তা হতে পারেনি। এ কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত খুশি এমপি কমলের (নৌকা) ওপর। তাই কক্সবাজার-রামু আসনে প্রতিটি কেন্দ্রে বেশির ভাগই ভোট পড়বে নৌকা প্রতীকে। কক্সবাজারের চারটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে ভোটার বেশি এ আসনে। জেলার মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ জন। তন্মধ্যে ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৫ জন সদর-রামু আসনে। রামুর প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমপি কমলের সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার এ আসনের আনাচেকানাচে যে উন্নয়ন করেছে, তা দেখে মন জুড়ে যায়। তাই আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে আগ্রহী তারা।
×