ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহীন রেজা নূর

ড. কামাল ও তার রাজনীতি ॥ বর্ণচোরাদের বর্জন করুন

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

ড. কামাল ও তার রাজনীতি ॥ বর্ণচোরাদের বর্জন করুন

অবশেষে ড. কামাল হোসেনের আসল চেহারাটি বেরিয়ে পড়েছে। বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জামায়াতের সঙ্গে তার গাঁটছড়ার রহস্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করায় সাংবাদিকদের প্রতি তিনি যেভাবে হামলে পড়লেন তাতে স্পষ্ট হলো যে, তিনি ঘাতক-খুনী-লুটেরা-বাংলাদেশবিরোধী জঙ্গী, সন্ত্রাসী এবং পাকিস্তানবাদী রাজনীতির ধারক ও বাহক। তিনি প্রকৃত প্রস্তাবে জামায়াত ও তারেক জিয়ার পাকিস্তানী তথা প্রতিক্রিয়াশীল ধারার রাজনীতিকেই প্রতিষ্ঠিত করতে এবং বাংলাদেশকে পুনরায় তাদের ‘পিয়ারা পাকিস্তানে’ পরিণত করতে এক বিরাট নীলনক্সা নিয়ে এগুচ্ছেন। আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এ ব্যাপারে ‘গৌরী শিখরের তুহিন ভেদ করে সব্যসাচীর’ মতো জেগে উঠবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার পেছনে কাতারবন্দী হয়ে সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকে তাকে পুনরায় ক্ষমতায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করবে। লোকে অত্যন্ত সঙ্গত কারণেই বলছে যে, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ঘাতক ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত চক্রের সঙ্গে হাত মেলাবার ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে এক সময়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর চেতনা-আদর্শের ধ্বজাধারী ড. কামাল হোসেন যে অশালীন, অভব্য এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত স্পর্ধার স্বাক্ষর রাখলেন তাতে তার আসল নাড়ি যে পাকিস্তানে পোঁতা এতে আর সন্দেহের কোন অবকাশই রইল না। বিদেশী শক্তির ওপর ভর করে কামাল গংরা যে এজেন্ডা আজ বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নেমেছেন এবং যেভাবে একাদিক্রমে বলেই চলেছেন যে, ‘৩০ ডিসেম্বরের পর শেখ হাসিনার সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজবে’- তাদের এই আস্ফালনের পেছনে জনগণের কোন সমর্থন যে নেই তা তো খালি চোখেই দৃশ্যমান। তাহলে তাদের এই আস্ফালন ও বাগাড়ম্বরের উৎসটা কি তা গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট মহলকে খতিয়ে দেখতে হবে। নচেৎ, কোন্্ চক্রান্তের বেড়াজালে আটকা পড়ে যায় সব কিছু কে জানে! সম্প্রতি জনকণ্ঠে ড. কামালের ওপর প্রকাশিত সাবেক বিচারপতি জনাব মানিকের একটি নিবন্ধ পাঠ করে অনেকের মতো আমিও দারুণ হতাশ হয়েছি। ড. কামালকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু, মানিক মিয়া, সিরাজুদ্দীন হোসেনদের ধারায় নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি হিসেবেই এতকাল জেনে এসেছি। কিন্তু এখন দৃঢ়ভাবে মনে হচ্ছে যে, আমি ভুল জেনেছি। আজ তথাকথিত এক ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের রক্ত, অশ্রু, ঘাম এবং অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশটিকে খুনী, জঙ্গী, সন্ত্রাসী, বঙ্গবন্ধুর ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী এবং পাকিস্তানবাদী প্রতিক্রিয়াশীল অসৎ অপগ-দের হাতে তুলে দেয়ার যে দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাতে একজন শহীদ সন্তান হিসেবে তার প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধা বজায় রাখা সম্ভব নয়। আমি গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে বিশ্বাস করি যে, দেশের সকল শহীদ পরিবারের সদস্যও এই অপরিণামদর্শী ভূমিকার জন্য তার প্রতি ক্ষুব্ধ, বিরক্ত ও ব্যথিত। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত, শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য সর্বক্ষণ চক্রান্তে লিপ্ত আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে ধ্বংসের জন্য সদা তৎপর একটি অশুভ চক্রের নেতা সেজে নিজেকে ইতিহাসের আরেক মীরজাফর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন! সেদিন সুদূর নয় যেদিন দেশবাসী ড. কামাল হোসেন বলতে এ যুগের এক নব্য মীরজাফরকেই জানবে। তিনি এ দেশ ধ্বংসকারীদের কাতারে বসে যখন বারবার বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মাহাত্ম্য কীর্তন করেন, তখন তা যে কত ফাঁকা বুলি এবং বাঙালীকে বোকা বানাবার অপকৌশল হিসেবে প্রতিভাত হয় তা বুঝবার মতো কা-জ্ঞান বোধ করি তিনি খুইয়ে ফেলেছেন। আর তাই নিজের মনের ভেতরকার দুরভিসন্ধিটিকে ঢাকতে এত অবলীলায় বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করে চলেন। কিসের মোহে তিনি এমন অধঃপতিত হলেন? তাহলে কি আমরা বুঝে নেব যে, তিনি আসলে কখনই বাংলাদেশের শুভাকাক্সক্ষী ছিলেন না? যে সংবিধান প্রণেতা হিসেবে তার এত গর্ব, যে সংবিধানে জামায়াতকে নিষিদ্ধ এবং দালালদের বিচারের বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল, আজ তার এই ভূমিকা প্রমাণ করে যে, এগুলোর প্রতি তার কোন অঙ্গীকার ছিল না। মানুষের মনে আজ এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, একাত্তরের মার্চে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এক সেনা বাংলোতে লে. জেনারেল সাহেবজাদাহ ইয়াকুব আলী খান, মেজর জেনারেল মিঠ্ঠা খান প্রমুখের সঙ্গে ড. কামালকে একান্ত আলাপচারিতায় মগ্ন থাকতে দেখে একজন বাঙালী সেনা কর্মকর্তা এবং মুক্তিযোদ্ধার মনে তার আসল উদ্দেশ্য ও ভূমিকা সম্পর্কে যে প্রশ্ন জেগেছিল তার উত্তরে কামাল সাহেবের কি আদৌ কিছু বলার আছে? পঁচিশে মার্চ রাতে তাজউদ্দীন ও ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে গাড়িতে বহুক্ষণ বসিয়ে রেখে আর ফিরে না আসা এবং প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তাদের সঙ্গে ভারতে না যাওয়ার পেছনেইবা তার কি যুক্তি ছিল? অতঃপর নিজের শ্যালকের সহায়তায় পরিবার-পরিজন নিয়ে পাকিস্তানে তার আশ্রয় নেয়ার হেতু কি ছিল ঐ মহাসঙ্কটকালে? স্বাধীনতার পর সিমলায় তিন দেশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে ড. কামালের তেমন কোন জোরালো ভূমিকা না থাকারইবা কারণ কি ছিল? বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তার ভূমিকা নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারেও তাকে কোন প্রকার ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না দেখে জাতি যারপরনাই হতাশ হয়েছে। উপরন্তু তার জামাতা ডেভিড বার্গম্যানেরও এ বিষয়ক বিরোধিতাপূর্ণ ভূমিকা সকলকে তাজ্জব করেছে। সব কিছু ছাপিয়ে ড. কামালের সাম্প্রতিক তথাকথিত ‘জাতি উদ্ধারের’ কার্যকলাপ এক কথায় এক মারাত্মক ষড়যন্ত্রেরই ইঙ্গিত বহন করছে। তিনি খুনীদের রক্তমাখা হাত নিজের তালুবন্দী করে যা করতে বা যা অর্জন করতে চাইছেন তা এ দেশে সফল হবে না এ জন্য যে, তার এবং তার সঙ্গী-সাথীদের সবার দুরভিসন্ধি এখন সকলের কাছে দিবালোকের মতোই পরিষ্কার! সুতরাং, এই জাতির বৃহত্তর অংশ অতন্দ্র প্রহরীর মতো নিয়োজিত আছে ওই দুরভিসন্ধির মূলোৎপাটনের জন্য। ইনশাল্লাহ আগামী ৩০ ডিসেম্বর তারা তাদের সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত্রের সমুচিত জবাব পেয়ে যাবে জনগণের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে বরেণ্য কলামনিস্ট শ্রদ্ধেয় আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতেই হবে যে, তিনি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ড. কামাল গংয়ের অপতৎপরতা বিষয়ে সেই প্রথম দিন থেকেই সবাইকে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভাষায় এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে সঠিক ধারণাটি দিয়ে আসছিলেন। ড. কামালের পেছনের মূল খুঁটিটি যে বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে কুলাঙ্গার হিসেবে পরিচিত ও দ-প্রাপ্ত তারেক রহমান, সেটি গাফ্ফার চৌধুরী একেবারে ‘ডে ওয়ানে’ই শনাক্ত করতে পেরেছিলেন তার সুদীর্ঘ সাংবাদিকনিষ্ঠ ও অভিজ্ঞতার বদৌলতে। যা হোক, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হতে না হতেই দেশের বেশ কয়েকটি স্থান থেকে বিএনপি প্রার্থীদের গাড়ি বা গাড়িবহরের ওপর হামলার খবর প্রচারিত হচ্ছে। এই হামলা দলটির মনোনয়ন নিয়ে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পরিণতি কিনা সেটি সংশ্লিষ্ট মহলকে খতিয়ে দেখতে হবে। বিএনপির মাউথপিস মির্জা ফখরুল, রিজভী প্রমুখ এই সব ঘটনা আওয়ামী লীগ ঘটাচ্ছে এই কথাই যে তারস্বরে প্রচার করে বেড়াবে এতে বিস্ময়ের কোন কারণ নেই। এটিও বিএনপির একটি চক্রান্তমূলক কৌশল হয়ে থাকলে অবাক হওয়ার থাকবে না নিশ্চয়ই! নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং হেরে গেলে একটি এস্কেপ রুট তৈরি করে রাখার চক্রান্তমূলক কৌশল হিসেবে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দলে ভেড়া নব্য দেশবিরোধী ও পাকিস্তানীদের তল্পিবাহক ঐক্যফ্রন্ট এই জাতীয় হামলা এবং গোলযোগ একের পর এক সৃষ্টি করতে থাকবে এতে আর বিচিত্র কি! এরা কিন্তু ঠিকই জানে যে, ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’। তাই মাঠে-ময়দানে এবং নিজেদের কেনা গোলাম মিডিয়ায় নির্বাচনে ওদের পক্ষে ‘গণজোয়ার সৃষ্টি’ হয়েছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা যখন মিথ্যা বলে জাতির কাছে প্রমাণিত হবে তখন নির্বাচনে ‘ব্যাপক কারচুপি’, ‘জনগণকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি’ ইত্যাকার বানানো অভিযোগ তুলে দেশে-বিদেশে ধূম্রজাল সৃষ্টির রাস্তাটি সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিরন্তর অভিযোগ তুলে তৈরি করে রাখতে চাইছে তারা। বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে দেশে নির্বাচনী গণজোয়ার বইছে বলে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা যে প্রচারণা করে চলেছে তা কি আদৌ সত্য? দেশের ওয়াকিবহাল মহল একে সত্য বলে মনে করেন না। কারণ, বিগত বছরগুলোতে বিএনপি-জামায়াত যে রাজনীতি করেছে তা ছিল এতই ধ্বংসাত্মক ও গণবিরোধী যে, তাদের প্রতি মানুষের আস্থা শূন্যের কোটায় চলে গিয়েছিল। এবার ড. কামাল হোসেনের বদৌলতে তারা নির্বাচনকে ঘিরে আবার জনগণের সামনে আসতে পেরেছে। আর একেই তারা বিরাট ‘সাফল্য’ বা ‘বিজয়’ হিসেবে ধরে নিয়েছে। সব শেয়ালের যেমন এক-রা, তদ্রƒপ ঐক্যফ্রন্টের সকলেই সমস্বরে বলে ফিরছেন যে, ৩০ ডিসেম্বরে বর্তমান সরকারের পতন (নাকি) অনিবার্য! এসব আহাম্মকের ধারণাই নেই যে, এ দেশে সর্বদাই ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’। বিএনপির পাকিস্তানবাদী রাজনীতির স্বরূপ এখন দেশবাসীর কাছে স্ফটিকের মতোই পরিষ্কার। সুতরাং গোঁজামিল আর মিথ্যার বেসাতি গেয়ে দেশের মানুষকে আর ভোলানো সহজ নয়। এরা অবলীলায় কেমন মিথ্যচার করে ফেরে আ স ম রবের একটি বক্তব্যতেই তা প্রকটভাবে প্রকাশিত। তিনি বলেছেন, এই সরকারের আমলে দেশের কোথাও নাকি কোন উন্নয়নই হয়নি। যা হয়েছে তা কেবলি নাকি লুটপাট! গোটা দেশ এবং সমগ্র বিশ্ববাসী যেখানে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রযাত্রার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন কানাওলায় পাওয়া এসব নেতার চোখে তা পড়েই না! আসলে কাদের-রব-মান্নারা আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে নিজেদের বিএনপি-জামায়াতের চোরাগলিতে হারিয়ে ফেলেছে। পরিতাপের বিষয় এই যে, এরা জানে না এই পথ এমনি এক বিস্মৃতি ও বিস্মরণের পথ যে, এতে ঢোকা যায় বটে; কিন্তু এর থেকে বের হওয়া যায় না! ড. কামালসহ এরা সকলেই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে অচিরেই! নির্বাচনে জেতার জন্য এই অশুভ চক্রটি বিভিন্ন ফ্রন্ট খুলে আওয়ামী লীগকে ঘায়েলের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তন্মধ্যে মিথ্যা প্রচারণার জন্য একটি বলিষ্ঠ সেল, হানাহানি বা সহিংসতা চালানোর জন্য একাধিক টিম, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিথ্যা প্রতিষ্ঠায় লবিস্ট নিয়োগ, জঙ্গী ও উগ্র ধর্মান্ধদের নিয়ে দেশে ব্যাপক অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালানোর মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং একটি তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটাবার সর্বাত্মক প্রয়াস গ্রহণ করেছে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন এই অপশক্তি। বাংলাদেশে এখন স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ এই পোলারাইজেশনটি ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে পূর্ণতা পেল। অতএব, একাত্তরের রণাঙ্গনের যুদ্ধটি পুনরায় ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন রূপে আবার ফিরে এসেছে। এই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শস্নাত মানুষকে ঐ অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। শেখ হাসিনা দেশটিকে জিয়া-এরশাদ-খালেদার আমলের ধ্বংসাত্মক অবস্থা থেকে বের করে এনে অন্ধকার থেকে আলোয় পৌঁছে দেয়ার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে নিরবচ্ছিন্নভাবে লড়ে যাচ্ছেন। হারকিউলিসের মতো তিনি একাই ‘ধঁমরধহ ংঃধনষব’ সাফ করে চলেছেন। তাঁর এই নিরন্তর প্রয়াসের বিরুদ্ধে ‘নাগিনীরা চারদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশাস!’ ড. কামাল-মির্জা ফখরুল-কর্নেল অলি-আ স ম রব-মান্না-সুলতান মনসুর-কাদের সিদ্দিকী এবং জামায়াতীরা সবাই গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে সেঁটে আবার আমার-আপনার-সকলের সোনার বাংলাকে লন্ডভ- করার জন্য ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে একাত্তরের চেতনায় ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য গড়ার মাধ্যমে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে। এ ব্যাপারে এবার কোন প্রকার ভুল করা চলবে না। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা ‘তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশকে আজ বিশ্বে উন্নয়নের একটি রোল মডেলে পরিণত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে বাংলার মানুষের আত্মমর্যাদাবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সর্বোপরি জঙ্গী-সন্ত্রাসী-ঘৃণ্য মৌলবাদীদের পর্যুদস্ত করে বিশ্বে এক বিরল নজির স্থাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার মুকুটে এখন অসংখ্য হীরকখচিত পালক শোভা পাচ্ছে। এর মর্যাদা ধরে রাখা এ দেশের তরুণ ও প্রথম ভোটারসহ সকলের জন্য ইমানী দায়িত্ব। যা হোক, চারদিকে ক্রমান্বয়ে নির্বাচনী সহিংসতা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ও তাদের কাছ থেকে ভয়াবহ সব অস্ত্রপাতি উদ্ধার করা হচ্ছে তাতে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা চলে যে, ঐক্যফ্রন্ট মুখে ‘শেখ ফরিদ হলেও বগলে কিন্তু তারা ঝামা ইট’ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অর্থাৎ, নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা ক্ষমতারোহণের বিকল্প পন্থা হিসেবে এসব সহিংস কর্মকা-ের ব্যবস্থা রেখেছে। আর তাই ড. কামাল-আ স ম রব-মান্না-ফখরুলদের কণ্ঠে সর্বক্ষণ এত স্পর্ধিত হুমকি-ধমকি উচ্চারিত হতে শোনা যায়। নির্বাচনের প্রচারণা নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট প্রতিদিন প্রতিক্ষণে যে বাধা-বিপত্তি এবং তাদের কর্মীদের গড়পড়তা ধর-পাকড়ের বানোয়াট কাহিনী ফাঁদছে তাও কিন্তু তাদের ঐ বৃহত্তর চক্রান্তেরই অংশ মাত্র! নিজেরাই কোন এক সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা ঘটিয়ে সরকার উৎখাতের চেষ্টা তারা করতে পারে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সদাসতর্ক ও তৎপর থাকতে হবে। ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে বলে যে ঘোষণা তারা দিয়ে বেড়াচ্ছে এর রহস্য অবিলম্বে ভেদ করাটা যে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবিষয়ক গোয়েন্দা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মহলের আশু কর্তব্য এটা যেন তারা ভুলে না যান। যা হোক, ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নানাভাবে চক্রান্তের বেড়াজাল তৈরি করে চলেছে। তাদের এই সব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে চোখ-কান খোলা রেখে অতন্দ্র প্রহরীর মতো প্রস্তুত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সামান্য একটু গাফিলতিও মারাত্মক বিপর্যয়ের পথ তৈরি করতে পারে। এমন এক কঠিন সময়ে এবারের নির্বাচনে দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাসহ সকলকেই বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টের এই বর্ণচোরা স্বাধীনতার চেতনা আর মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারীদের চিরকালের জন্য বর্জন করতে হবে। অন্যথায়, অমানিশার ঘন কৃষ্ণ অন্ধকারে ছেয়ে যাবে দেশ। সকলের কণ্ঠে একাত্তুরের মতো ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হোক রণধ্বনি : ‘জয় বাংলা’, ‘জাগো জাগো বাঙালী জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
×