ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২-১ হেরে রানার্সআপ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র

স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস

রুমেল খান ॥ গত ২৩ নবেম্বর ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ঢাকা আবাহনীর কাছে হেরে প্রথম শিরোপা জেতার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল দলটি। ২৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে এবার আর শিরোপাজয় থেকে বঞ্চিত হতে হয়নি নবাগত বসুন্ধরা কিংসকে। অবশেষে সুপ্রসন্ন হলো তাদের শিরোপাভাগ্য। বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের দশম আসরের ফাইনালে ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা ২-১ গোলে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রকে হারিয়ে এই আসরের নতুন দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়। ম্যাচের প্রথমার্ধের স্কোরলাইন ছিল ১-১। খেলা দেখতে গ্যালারিতে উপস্থিত হাজার দুয়েক দর্শকের অধিকাংশই ছিল বসুন্ধরার। তাদের পরনে ছিল বসুন্ধরার জার্সি। তবে পিঠে লেখা ছিল ‘চ্যাম্পিয়ন’ শব্দটি। বসুন্ধরা চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে তাদের এই বিশেষ জার্সি পরে আসাটা বৃথা যায়নি। খেলা শেষ হতেই সেই বিশেষ জার্সি পরে মাঠে ঢুকে পড়েন বসুন্ধরার তিন বিদেশী নারী সমর্থক। তাদের দেখা যায় বসুন্ধরার তিন বিদেশী খেলোয়াড় ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেস, বখতিয়ার ও মার্কোসকে জড়িয়ে ধরতে, অভিনন্দন জানাতে এবং তাদের সেই বিশেষ জার্সিটি উপহার দিতে। জানা যায়, ওই তিন বিদেশী নারী সমর্থক ছিলেন এই তিন ফুটবলারের গার্লফ্রেন্ড। রেফারি সুজিত ব্যানার্জী চন্দন খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনকে ছুটে গিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন দলটির পাঁচ-ছয় কোচিং স্টাফ। কিছুক্ষণ পর দলের খেলোয়াড়রা এসে অস্কারকে চ্যাংদোলা করে শূন্যে ছুড়ে মারলেন কয়েকবার। বসুন্ধরার কোচ অস্কার ব্রুজোনের আনন্দটা একটু বেশিই। কেননা বসুন্ধরার যেমন এটা প্রথম শিরোপা, তেমনি বসুন্ধরার কোচ হিসেবে অস্কারেরও এটা প্রথম শিরোপা। এর আগে কোচ হিসেবে অন্য বিভিন্ন দলের হয়ে পাঁচটি শিরোপা জিতেছেন (ভারত ও মালদ্বীপের দুটি ক্লাবের হয়ে)। ফাইনালের আগে একটা গুঞ্জন ছিলÑ ফেডারেশন কাপের মতো স্বাধীনতা কাপের ফাইনালেও হেরে গেলে তার চাকরি চলে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত দলকে চ্যাম্পিয়ন করিয়ে সব গুজবের অবসান ঘটালেন অস্কার। তবে স্বাধীনতা কাপের পরিবর্তে ফেডারেশন কাপেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারলেই নিশ্চয়ই সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন অস্কার। কারণ ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতলে বসুন্ধরা যোগ্যতা অর্জন করতে পারতো ‘এএফসি কাপ’-এ খেলার। সেটা না হওয়ার যন্ত্রণায় নিশ্চয়ই এতদিন ভুগেছেন ৪১ বছর বয়সী অস্কার। এছাড়া বসুন্ধরার সুশান্ত ত্রিপুরা ও তৌহিদুল আলম সবুজ গত ২৩ নবেম্বরের ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মারামারি করে ৬ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ায় দলের শক্তি কমে গেছে এবং স্বাধীনতা কাপে তারা জিততে না পারার যে আশঙ্কা অনেকেই করেছিলেন সেটিও অমূলক প্রমাণিত হয়েছে। মোট কথা ঘরোয়া ফুটবলের নতুন শক্তি হিসেবে অবশেষে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হলো এবারের মৌসুমের দলবদলের সবচেয়ে দামী দল বসুন্ধরা। মজার ব্যাপারÑ ফাইনালে যে দু’দল খেলে তারা ছিল একই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের (বসুন্ধরা গ্রুপ) দল! কাজেই এই ফাইনালকে ‘অল বসুন্ধরা ফাইনাল’ হিসেবেও আখ্যায়িত করলেও ভুল হবে না। শিরোপা যেই জিতুক সেটা তো যাবে এক ঘরেই। ‘বেঙ্গল ব্লুজ’ খ্যাত শেখ রাসেলের জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে না পারাটা ছিল বেদনাদায়ক। কেননা তারা এই আসরের ফাইনাল খেলে পাক্কা পাঁচ বছর পর। ২০১২-১৩ মৌসুমে এই স্বাধীনতা কাপেই তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ফাইনালের আগে এই আসরে রাসেলই একমাত্র দল ছিল যারা কোন গোল হজম করেনি। শেষ পর্যন্ত দুই গোল হজম করে শিরোপাটাই খোয়াল তারা। আরও মজার ব্যাপারÑ এবারের আসরের ফাইনালিস্ট রাসেল-বসুন্ধরা দুই দলই ছিল একই গ্রুপে (ডি)। আক্রমণাত্মক ফুটবলটা উপহার দেবার কথা ছিল বসুন্ধরা কিংসেরই। কিন্তু রক্ষণের জালে আটকে দিয়ে ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবলটা খেলেতে শুরু করে রাসেলই। শুরুর দিকেই দু’টি কর্নার আদায় করে নিয়ে যেখানে এগিয়ে যাবার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল রাসেল, সেখানে ১৭ মিনিটে উল্টো গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে তারা। ডানপ্রান্তে বক্সের প্রায় ত্রিশ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের আচমকা-জোরালো কোনাকোনি উঁচু শটে বল জালে পাঠিয়ে বসুন্ধরাকে এগিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মার্কোস ভিনিসিয়াস (১-০)। মৌসুমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গোলগুলোর একটা ছিল এটি। প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে রাসেলের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল ওদোইন যে গোলটি করেন সেটিকে অনেকটা বসুন্ধরার গোলের কার্বন কপিই বলা চলে। সতীর্থর পাসে বল পেয়ে বক্সের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে কোনাকোনি উঁচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন রাফায়েল (১-১)। রক্ষণাত্মক কোচ হিসেবে পরিচিত শেখ রাসেলের কোচ সাইফুল বারী টিটু। অন্যদিকে বসুন্ধরার কোচ অস্কার ব্রুজোন শিষ্যদের খেলান আক্রমণাত্মক ফুটবল। কিন্তু বুধবার ফাইনালে যেন এক কোচের ভূত ভর করে অন্য কোচের ওপর। মাঠের লড়াইয়ে আক্রমণাত্মক রাসেল। দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটাতেই বসুন্ধরা খেলেছে রক্ষণাত্মক ফুটবল। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ম্যাচের ফল অমীমাংসিত থাকায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গড়ায় ম্যাচ। এর আগে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে ১১৮ মিনিটে এক গোল দিয়ে শেখ রাসেলকে হারিয়েছিল বসুন্ধরা। এই ম্যাচেও অতিরিক্ত সময়ে হয়তো ম্যাচের ফল বদলে দেবেন ব্রুজোন শিষ্যরা, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছিল। ৯৫ মিনিটে ঠিকই রাসেলের জালে আরেকবার বল পাঠায় তারা। রাসেলের বক্সে বল দখলের লড়াইয়ে ছিলেন সিলেটের দুই ফুটবলার। একজন রাসেলের বিপলু আহমেদ, অন্যজন বসুন্ধরার মতিন মিয়া (বদলি ফরোয়ার্ড)। কিন্তু বক্সের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়ে বলটা পায়ে রাখতে পারেনি বিপলু। বল কেড়ে নিয়ে ডান পায়ের আলতু-উঁচু-বুদ্ধিদ্বীপ্ত চিপে গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে পরাস্ত করেন মতিন (২-১)। শেষ পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফেরা হয়নি রাসেলের। তাই ২-১ গোলের জয়ে প্রথম শিরোপা জেতে বসুন্ধরা কিংস। পুরস্কার চ্যাম্পিয়ন : বসুন্ধরা কিংস (৫ লাখ টাকা ও ট্রফি)। রানার্সআপ : শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র (৩ লাখ টাকা ও ট্রফি)। ম্যাচসেরা : মার্কোস ভিনিসিয়াস (বসুন্ধরা কিংস)। টুর্নামেন্টসেরা : আনিসুর রহমান জিকো (গোলরক্ষক, বসুন্ধরা)। সর্বোচ্চ গোলদাতা : পল এমিল (৪ গোল, আরামবাগ)। ফেয়ার প্লে ট্রফি : ঢাকা আবাহনী লিমিটেড।
×