ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব ফুটবলে বছরের স্মরণীয় পাঁচ

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

বিশ্ব ফুটবলে বছরের স্মরণীয় পাঁচ

জিএম মোস্তফা ॥ আরও একটি বছরের সমাপ্তি। ফুটবলে এই বছরটা ছিল বেশ ঘটনাবহুল। রাশিয়া বিশ্বকাপ কিংবা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ-বিমোহিত করেছে এবার। ২০১৮ সালটা ফুটবলের নানা ঘটনায় সাজানো ছিল। ঘটে যাওয়া সেইসব ঘটনাগুলোর মধ্যে পাঁচটি স্মরণীয় ঘটনা নিয়েই এই আয়োজন। ইংল্যান্ডের পেনাল্টি জয় মাত্র ১২ গজ দূর থকে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বলটা তিন কাঠির মধ্যে রাখতে হবে। মানসিকভাবে যারা একটু শক্তিশালী, তাদের জন্য কাজটা কঠিন নয়। কিন্তু এই অল্প দূরত্ব থেকে ২৪ ফুট প্রশস্তও ৮ ফুট উঁচু গোলপোস্টে বল রাখা কতটা যে কঠিন, ইংল্যান্ডের চেয়ে ভাল আর কোন দলের জানার কথা নয়। কারণ এর আগে টাইব্রেকারে তিনবার হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল ইংলিশরা। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপের দৃশ্যটা এবার বদলেছে। কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে। ২০১৮ বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র হয় কলম্বিয়া-ইংল্যান্ডের ম্যাচ। অতিরিক্ত যোগ করা ৩০ মিনিটেও সমতা। এরপর ম্যাচ গড়ায় ভাগ্য ও স্নায়ুর পরীক্ষা টাইব্রেকারে। সেখানেই বাজিমাত করে তারুণ্যনির্ভর ইংলিশ দল। রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে জার্মানির বিদায় বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব চালুর পর জার্মানি কখনও বাদ পড়েনি। কথাটা ভুল প্রমাণ করল ২০১৮ বিশ্বকাপ। রাশিয়া বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলের অবিশ্বাস্য হারে টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ২০১৮ বিশ্বকাপে এটাই সবচেয়ে বড় অঘটন। যোগ করা সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে মহামূল্যবান গোল দুটি করেছিলেন কিম ইয়ং-গাউন ও সন-হিউং-মিন। ‘এফ’ গ্রুপে ভীষণ জটিল সমীকরণের মধ্যে পড়েছিল চার দল। শেষ ষোলোয় উঠতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা জিতে নিজেদের কাজটা সেরে রাখতে হতো জার্মানিকে। পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হতো মেক্সিকো-সুইডেন ম্যাচের ফলেও। সুইডেন ৩-০ ব্যবধানে মেক্সিকোকে হারানোয় জার্মানির জন্য কাজটা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কোরিয়ার বিপক্ষে জিততেই হতো জার্মানিকে। কিন্তু জোয়াকিম লো’র শিষ্যরা এই কাজটাই করতে পারলেন না। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে জার্মানি কখনই প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়েনি। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে রিয়াল মাদ্রিদের হ্যাটট্রিক ২০১৬ সালে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে যে ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেটা তারা ধরে রাখল টানা তৃতীয় বছর। গত বছর জুভেন্টাসকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপার রেকর্ড গড়েছিল তারা। ২০১৮ সালে অনন্য নজির গড়ল হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে। এ বছর কিয়েভে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে লিভারপুলকে ৩-১ গোলে হারায় রিয়াল। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিতের পর থেকে সবার আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো আর মোহাম্মদ সালাহ। দু’জনের কেউই কিয়েভে শিরোপার লড়াইয়ে জ্বলে উঠতে পারেননি এবার। রোনাল্ডো কঠিন পরীক্ষা নিতে পারেননি লিভারপুলের রক্ষণভাগের। আর আধাঘণ্টা যেতেই ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে সালাহকে। দুই তারকার নিভে যাওয়ার ফাইনালে এবার জ্বলে ওঠেন গ্যারেথ বেল। ম্যানসিটির রেকর্ড ১০০ পয়েন্ট ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ২০১৭-১৮ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন হয় ম্যানচেস্টার সিটি। শুধু তাই নয়, ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে মৌসুম শেষ করার অবিস্মরণীয় কীর্তিও গড়ে তারা। সাউদাম্পটনের বিপক্ষে লীগের শেষ ম্যাচে জয় নিয়ে ৫৮ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন ইতিহাস গড়ে সিটিজেনরা। সেই ম্যাচের ইনজুরি সময়ের শেষ মিনিটে গোল উপহার দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসুস। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে ম্যাচের নিষ্পত্তি ঘটে। প্রথম দল হিসেবে লীগের ইতিহাসে তিন অঙ্কের মাইলফলক স্পর্শ করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন গার্ডিওলাও। তিনি বলেন, ‘হয়তো এই রেকর্ডও একদিন ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু তা কঠিন হবে। এটা বিশাল। ১০০ পয়েন্ট অসাধারণ অর্জন।’ ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লীগে ১০০ পয়েন্টের রেকর্ড আছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সিলোনা, জুভেন্টাস ও এসি মিলানের। অভিজাত তালিকায় নাম লেখালো এবার গার্ডিওলার ম্যানসিটি। পয়েন্টের পাশাপাশি এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল ও সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও গড়ে ২০১৮ সালে। ২০০৯-১০ মৌসুমে ১০৩ গোল ও ৯৫ পয়েন্ট নিয়ে ২০০৪-০৫ মৌসুম শেষ করেছিল ব্লুজরা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের (৮১) চেয়ে ১৯ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে মৌসুম শেষ করেছিল ম্যানসিটি। এবার ৩২ ম্যাচ জিতে আগের রেকর্ডধারী টটেনহ্যামকে ছাড়িয়ে যায় সিটিজেনরা। ১৯৬০-৬১ মৌসুমে ইংলিশ শীর্ষ লীগে ৩১ ম্যাচে জয় দেখেছিল টটেনহ্যাম। পাদপ্রদীপের আলোয় এমবাপে ২০১৮ সালে আলো ছড়িয়েছেন কিলিয়ান এমবাপে। রাফায়েল ভারান ও এ্যান্থনি গ্রিজম্যানকে পেছনে ফেলে সর্বশেষ ফ্রান্সের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটাও নিজের শোকেসে তুললেন এই তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলার। ফ্রান্স ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন ঘোষিত পুরস্কারটির জন্য ক্লাব ও জাতীয় দলের পক্ষে দুরন্ত ফর্মে বছরটি কাটানো ২০ বছর বয়সী এমবাপেই ছিলেন ফেবারিট। প্রাপ্তির দিক থেকে গত ১২ মাসে দু’হাত ভরে গেছে এমবাপের। ক্লাবদল প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের পক্ষে ঘরোয়া পর্যায়ে ট্রেবল জিতেছেন। আর গত জুন-জুলাইয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে আসে সেরা সাফল্য। এমবাপের হাত ধরে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বজয় করে ফরাসীরা। বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিময় আক্রমণ আর ফিনিশিং করার দক্ষতার কারণে পুরো বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় জয় করে নেন এমবাপে। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ডি-বক্সের বাইরে থেকে করেন দর্শনীয় এক গোল।
×