ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৫ মাসে এসেছে ১৮৭ কোটি ডলার

রেকর্ড বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

রেকর্ড বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের (জুলাই-নবেম্বর) পাঁচ মাসে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ঋণ ও অনুদান মিলে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ১৮৭ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের এ ছাড় গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ কোটি ডলার বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রায় ১৭১ কোটি ডলার ছাড় হয়েছিল। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে ইআরডি’র যুগ্ন-সচিব রুহুল আমিন বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমরা দেশের ইতিহাসের রেকর্ড প্রায় ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা ছাড় করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এবার প্রথম পাঁচ মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি ছাড় হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে পারলে অর্থ ছাড়ও বাড়ে। এবার প্রথম পাঁচ মাসে এ পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন বেড়েছে বলেই বৈদেশিক মুদ্রার ছাড় বেড়েছে। পুরো অর্থবছর ধরে প্রকল্প বাস্তবায়নের এ হার ধরে রাখতে পারলে এবার গতবারের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার ছাড় বাড়বে বলে আমি মনে করি।’ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর ২০ শতাংশ বা ৩২ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে। এটা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বেশি। ইআরডি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, অর্থবছরের নবেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে মোট ১৮৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে ছাড় হয়েছে ১৮১ কোটি ১৩ লাখ ডলার। আর অনুদান হিসেবে ছাড় হয় প্রায় ছয় কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের জন্য সরকারের ৭০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ঋণ হিসেবে ছাড় হয়েছিল ১৬০ কোটি ডলার আর অনুদান হিসেবে ছাড় হয়েছিল প্রায় ১১ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে সরকার ৭১৭ কোটি ডলার ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ২৬ শতাংশ অর্থ ছাড় হয়েছে। গত অর্থবছরের এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ অর্থ ছাড় হয়েছিল। এদিকে নবেম্বর পর্য়ন্ত পাঁচ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৩৮২ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৩২৪ কোটি ডলার। দাতারা অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৫৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের এ সময়ে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ৬৭১ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৬৫৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলার ছিল ঋণ আর ১৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার ছিল অনুদান প্রতিশ্রুতি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পাওয়ার ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম কেন জানতে চাইলে ইআরডির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, গত অর্থবছরের এ সময়ে ভারতের দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি-২) আওতায় ২০০ কোটি ডলারের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়াও পদ্মা রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের ঋণ চুক্তি হয়েছিল বলে গত অর্থবছরে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। এবার এখনও ওই রকম বড় প্রকল্পের চুক্তি হয়নি। তাই প্রতিশ্রুতিতে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নবেম্বর মাস পর্যন্ত দাতাদের কাছে পুঞ্জীভূত পাওনা হিসেবে দাতাদের কাছে ৬০ কোটি ৪১ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে আসল হিসাবে পরিশোধ করা হয়েছে ৪৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার এবং সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার। গতবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয়েছিল ৫২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে আসল ৪১ কোটি ১৪ লাখ ডলার এবং সুদ পরিশোধ হয়েছিল ১১ কোটি ডলার। নবেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এরপর বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৩৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলার এবং জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার (জাইকা) ছাড় করা অর্থের পরিমাণ ৩৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার।
×