ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দর দিনের আগমনী বার্তা

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

সুন্দর দিনের আগমনী বার্তা

আকাশে সূর্যের উদয় আর অস্তগমন। এভাবেই রাত ও দিনের পালা বদলের ফলে দিন, সপ্তাহ আর মাস শেষে আবারও আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিচ্ছে একটি বছর। সুখের আশা, নতুন ভাবনা ও নবউদ্দীপনার মণিকোঠায় আবারও নব আলোয় আলোকিত হতে যাচ্ছে নতুন বছর। পুরনো বছরের বিষণ্ণতাকে ছাপিয়ে মনকে উৎফুল করে তোলে নতুন বছরের আগমনী বার্তা। ক্যালেন্ডারের শেষ পাতাটি ছিঁড়ে একসঙ্গে উচ্চারিত হয় হ্যাপি নিউ ইয়ার। নতুন দিনের সূচনা, নতুন করে পথচলা। নতুন প্রাণচাঞ্চল্য, নতুন শপথ সব কিছুই যেন একাকার হয় নতুন বছরে। অতীতকে মুড়িয়ে দিয়ে নতুন এক সময়কে বরণ করে নেয়ার শিহরণই যেন অন্য রকম। নতুনের প্রতি সব সময়ই মানুষের থাকে বিশেষ আগ্রহ ও উদ্দীপনা। কেননা নতুনের মধ্যে নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণ করার সুযোগ করে দিতেই নতুন বছরের আগমন। সবাই চায় পুরনো বছরের গ্লানি, ব্যর্থতা ও অপারগতাকে ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরে নতুন আশা ও কর্মোদ্দীপনা নিয়ে জেগে উঠতে। পৃথিবীতে আজ অবিশ্বাস্য গতিতে সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। চারদিকে অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে সম্ভব। এর সব কিছুর মূলে রয়েছে নতুন চিন্তা ও নতুন ভাবনা। তাই পুরনো বছরের গ্লানি, ব্যর্থতা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে নতুনকে আবাহন করার কথা বলেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই কথা স্মরণ করে বাঙালী জাতি ও তার কর্ণধাররা চিরাচরিত রেওয়াজ অনুসারে শুক্রবার রাত ১২টা এক মিনিটে স্বাগত জানায় নতুন বছরকে। জীবনের নির্দিষ্ট সীমা থেকে একটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়া সামান্য বিষয় নয়। একটু ভাবুন, আপনার জীবনকাল যদি ৭০ বছর হয়ে থাকে তাহলে এর থেকে একটি বছর চলে গেল। শত চেষ্টা করেও সেই বছরটি আর জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। আর একজন চিন্তাশীল মানুষের কাছে এটা অনেক ভাবনার বিষয়। এই এক বছরে আমি কী করলাম, আমার কী করার ছিল, কেন করতে পারলাম না এই ভাবনাটাই হলো নতুন বছরের মূল চেতনা। প্রতিটি ধর্মমতে সব মানুষকে তার প্রতিটি কর্মের জন্য একদিন আল্লাহর, ভগবান, ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ফেলে আসা দিনগুলোর কৃতকর্মের ওপরই তার পরিণাম নির্ভর করে। সৃষ্টিকর্তা মানুষের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি অবগত আছেন। এ জন্য মানুষের উচিত অতীতের ভুলত্রুটির জন্য অনুতপ্ত হওয়া। অনুশোচনার অশ্রু প্রবাহিত করা। তাই পুরনো বছরকে বিদায় দিতে কিংবা নতুন বছরকে স্বাগতম জানাতে এমন কোনো আনন্দ-ফুর্তি করা উচিত নয় যা এই ভাবনাকে ভুলিয়ে দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় দেশ গড়ার মূলমন্ত্র জাগ্রত হোক। পাল্টে যাক দেশের ভাবমূর্তি আরও। তাতেই ক্ষুধা-আতুর, দরিদ্রক্লিষ্ট মানুষেরা মুক্তি পাবে অভাবের যাঁতাকল থেকে। বেকার যুবকেরা খুঁজে পাবে কাজের সন্ধান। শ্রমজীবী মানুষেরা পাবে তাদের শ্রমের ন্যায্যমূল্য। ছাত্রছাত্রীরা পাবে তাদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে দেশে। ন্যায়বিচার পাবে দেশের প্রতিটি নাগরিক। সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চর্চা হবে দেশে। আকাশ সংস্কৃতি অথবা বিজাতীয় সংস্কৃতির রাহুকবল থেকে বেঁচে থাকবে এ দেশের মানুষ। নারী তার সম্ভ্রম রক্ষা করে চলবে। নতুন বছরে হারানো দিনগুলোর বেদনা ভুলে নবউদ্যমে পথ চলতে প্রেরণা দিক। নতুন করে জীবন শুরুর সুযোগ এনে দিক। আর এ জন্য বছরের শুরুতেই আমাদের পরিকল্পনা করা উচিত বছরটি কীভাবে কাটাব। আমরা নিজেকে যেমন সুন্দর করব তেমনি দেশ ও জাতিকে সুন্দর করার সঙ্কল্পও আমাদের করতে হবে। চারদিকে যে অন্যায়-অবিচার আছে এর বিরুদ্ধে কিন্তু আমাদেরই সোচ্চার হতে হবে। আমরা যে বয়সেরই হই, দায়িত্ব সচেতন হলে আমার দ্বারা সবাই উপকৃত হবে। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে
×