ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দারিদ্র্য এবং ভোট ক্রয়

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

দারিদ্র্য এবং ভোট ক্রয়

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ মানেই সোনার বাংলায় সোনার মানুষের অবিরাম যাত্রাপথ প্রশস্ত হওয়া। নিরন্ন মানুষের মুখ দৃশ্যমান হওয়ার সুযোগ অপসৃয়মান হতে থাকা। বাংলার ঘরে ঘরে আলোকের ঝর্ণাধারা বয়ে যাওয়া। সোনায় মোড়ানো বাংলা আবার রেঙে ওঠা বিশ্ব মানচিত্রে। অভাবী, হতদরিদ্র, হতশ্রী মানুষের মুখ আর কোথাও দেখতে না পাওয়া বাংলাদেশের সন্ধান খুঁজে পাওয়ার দিন সমাগত। বাঙালী তখন ‘হও করমেতে বীর, হও ধরমেতে ধীর, হও উন্নত শির।’ অবস্থানে নিজেকে সমর্পিত করতে সচেষ্ট থাকার লগ্নে হবে উপনীত। গ্রাম-গঞ্জে বয়ে যাবে সুবাতাস নগর জীবনের। গ্রামীণ জনপদ মানেই অভাবের পাহাড়ে আবৃত থাকবে না। ঘরে ঘরে প্রহরী প্রদীপ জ্বলবে। আলোকের রোশনাই হবে প্রজ্বলিত সর্বত্র। সেই উনিশ শতকের কবি ভারতচন্দ্রের উচ্চারিত ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’ অবস্থা বিরাজিত হবে সর্বত্র। বর্গীরা এসে লুটে নিয়ে যেত একদা সম্পদ। সোনার বাংলাকে লুটেরা শাসক করেছিল শ্মশানে পরিণত। তারপর কত পানি গড়িয়েছে পদ্মা মেঘনা যমুনায়। বাঙালী সহস্র বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে এনেছে স্বাধীন স্বদেশ সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে। দুর্ভাগ্য জাতির, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সকল আয়োজনকে করা হয় পদদলিত। ক্ষমতা দখলকারী জান্তা শাসকরা বাঙালীর জাগরণ, উত্থান আর বিকশিত হওয়ার সব পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে মুষ্টিমেয় লোককে বিত্তবান আর কোটি কোটি বাঙালীকে নিঃস্ব, রিক্ত, হতদরিদ্রে পরিণত করে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আর যুদ্ধাপরাধীদের অর্থবিত্ত এবং রাজনৈতিক শক্তিতে পুষ্ট করে তোলা হয়। গরিবী হটাতে তারা এগিয়ে আসেনি। বরং ক্ষুদ্র ঋণের নাগপাশে বেঁধে রেখে বিদেশে দারিদ্র্য বিক্রি করার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছিল। এই সময় বাঙালীর মুক্তির যে দীক্ষা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু সেই দীক্ষা নিয়ে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে একনিষ্ঠ শ্রম ও কর্মকুশলতায় নিমগ্ন হন। তারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হতদরিদ্র, হতশ্রী দেশটি ঘুরে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার পথে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন ‘রোল মডেল’। গ্রামগুলো নাগরিক সুযোগ-সুবিধার দিকে ধাবিত। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জীবনধারাকে দিয়েছে বদলে। ডিজিটাল ব্যবস্থা বাঙালীর জীবনকে তথ্যপ্রযুক্তির দিগন্তে এগিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের সহযোগীরা চায় না বাংলার মানুষের উন্নতি। তাই জঙ্গী হামলা, নাশকতা, বোমাবাজি, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে নারকীয় পরিবেশ তৈরি করেছিল। তারা যেনতেনভাবে ক্ষমতায় এসে দেশকে আবারও দারিদ্র্যপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু শেখ হাসিনা চাইছেন দারিদ্র্র্যমুক্ত দেশ। বস্তিবাসীদের জন্য এই রাজধানীতে বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণ করে তাদের জীবনধারাকে বদলে দিতে বদ্ধপরিকর তিনি। কেবল বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে তা হওয়ার নয় বলে তিনি বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন থেকে বস্তিবাসীদের উদ্ধার করে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে চাইছেন। তাই সোচ্চার কণ্ঠে নির্বাচনী জনসভায় বলেছেনও, যদি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারেন তবে এদেশে দারিদ্র্য থাকবে না। ভিক্ষুকের হাতকে তিনি কর্মীর হাতে পরিণত করার কাজ অব্যাহত রেখেছেন। বিধবা ও বয়স্ক ভাতাও দিচ্ছেন। কিন্তু এর বিপরীতে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনকালে টাকা দিয়ে ভোট কেনার নানা কসরত। দেশকে পশ্চাৎপদ ধারায় নিয়ে যেতে চায় যারা সেই বিএনপি-জামায়াত জোটের ঐক্যফ্রন্ট টাকা বিলিয়ে ভোট কেনার পাশাপাশি পরিকল্পিত সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থাসহ নানা উৎস থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে ভোট কেনার বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই পারে। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হলে ভোট কেনার পথ চিররুদ্ধ হবেই।
×