ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওই অর্থে জানোয়ার বলিনি ॥ ড. কামালের ব্যাখ্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

ওই অর্থে জানোয়ার বলিনি ॥ ড. কামালের ব্যাখ্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশকে জানোয়ার বলার কথা স্বীকার করে এর ব্যাখ্যা দিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল। তার দাবি ‘আমি ওই অর্থে জানোয়ার বলিনি’। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে জামায়াত ইস্যুতে সাংবাদিকদের উর্দু ভাষা ‘খামোশ’ বলে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। পরদিন খামোশ শব্দেরও ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন সাবেক এই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী। এবারও পুলিশকে জানোয়ার বলায় দেশজুড়ে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই ইস্যুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ক্ষুদ্ধ। বুধবার রাজধানীর মতিঝিলের চেম্বারে কামাল হোসেন বলেন, পুলিশকে ওই অর্থে জানোয়ার বলিনি। ইসির বৈঠকে পুলিশকে জানোয়ার বলেছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই অর্থে তো বলিনি। তারা মানুষ হিসেবে ভূমিকা রাখবে, আমরা সেটা আশা করি। বলেছি, পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবে। আমরা তো পুলিশের প্রশংসাও করেছি।’ পুলিশ কেন এসেছিল জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ এসেছিল কারণ তারা আমার নিরাপত্তার বিষয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তারা জানতে চেয়েছেন, যদি আপনার নিরাপত্তা প্রয়োজন হয়, সেটা আমাদের জানালে সেভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব। আপনি বাড়িতে যাওয়ার সময় নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে সেই নিরাপত্তাও আমরা দিতে পারি। ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে ফোনে কী কথা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কারণ, তারও আসার কথা ছিল। আসন্ন সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কী- এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, আশঙ্কাতো অবশ্যই হচ্ছে। কারণ, সারাদেশে ধরপাকড় চলছে। জেলায় জেলায় ফোন করে বলা হচ্ছে, প্রার্থীদের ওপর হামলা ও আটক করা হচ্ছে। এটা অস্বাভাবিকভাবে হচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা দেখছেন কিনা জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, আশাতো আমরা সব সময়ই করব। কিন্তু আশঙ্কাও আছে। কারণ, যেভাবে হামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। কারচুপি হলে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্ট থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, আমার কথা ধরে রাখতে হবে। ওরা যেন না বলতে পারে সরে গেছে। এটা আমাদের অধিকার। আমাদের অধিকার থেকে কেন আমরা সরে যাব। যদি শেষ পর্যন্ত অসম্ভব করে দেয় তখন মানুষ দেখবে, তারা অসম্ভব করে দিয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঐক্যফ্রন্ট মানবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি দেখে এর উত্তর দেয়া যেতে পারে। ইসি বিশ^াস করতে পারছে না... মন্টু ॥ ধানের শীষের প্রার্থীদের পোস্টার লাগাতে দেয়া হচ্ছে না বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিশ্বাসই করতে পারছেন না। বুধবার মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারের বাইরে সাংবাদিকদের একথা বলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। সিইসির সঙ্গে বৈঠক নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য আমরা ইসির কাছে দাবি করেছিলাম। আমরা বিভিন্ন অভিযোগ তাদের জানিয়েছি। কিন্তু সিইসি বলছেন, তিনি বিশ্বাস করছেন না যে কোথাও পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না। অথচ দেশের মানুষ জানে, মিডিয়াও জানে যে ধানের শীষের কোন পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না। ড. কামালের চেম্বারে পুলিশ আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ডিএমপি কমিশনারের একটি বার্তা নিয়ে কয়েকজন পুলিশের কর্মকর্তা কামাল হোসেনের চেম্বারে এসেছিলেন। তিনি বলেন, পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে তিন কর্মকর্তা জানান ড. কামাল হোসেনের সিকিউরিটির প্রয়োজন আছে কিনা? এ জন্য কোন ব্যবস্থা নিতে হবে কিনা? তা জানতে চেয়েছেন। তখন কামাল হোসেন বলেছেন আমার কোন সমস্যা নেই, নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। তবে তারপরও যদি পুলিশ নিরাপত্তা দিতে চান তাহলে দিতে পারেন। এর আগে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ঐক্যফোরামের নেতাদের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বাগ্বিত-া হয়। এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্টু জানান, এ সব বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। শুধু নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশের প্রতি ড. কামালের মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা পুলিশের সেই ভূমিকা দেখতে চাই যে ভূমিকা ১৯৭১ সালে পালন করেছে পুলিশ। পাক হায়েনাদের মতো পুলিশকে দেখতে চাই না। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সংবিধান অনুযায়ী পুলিশ ভূমিকা পালন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, আমরা সব প্রার্থীদের নির্বিঘেœ প্রচারের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানাচ্ছি, আর এই কাজে পুলিশ সাহায্য সহযোগিতা করবে বলে আশা করছি আমরা। মঙ্গলবার কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যদের সঙ্গে ইসি কার্যালয়ে বৈঠক করেন। প্রায় দেড়ঘণ্টা চলা বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আনা হয়। সরকারী দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করাসহ বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের গ্রেফতার, হয়রানির অভিযোগ করেন কামাল হোসেন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের লোকজন প্রতিপক্ষকে পুলিশের ছত্রছায়ায় হামলা করার অভিযোগ তুলে ধরা হয় বৈঠকে। একপর্যায়ে পুলিশকে ‘জানোয়ার’ বলে বেফাস মন্তব্য করেন দেশের এই প্রবীণ আইনবিদ। এ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কামাল হোসেনের বাগ্বিত-া হয়। এক পর্যায়ে বৈঠক শেষ না করেই ঐক্যফ্রন্ট নেতারা ইসি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন।
×