ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরডিসির জরিপ ;###;ঐক্যফ্রন্ট পাবে ৪৯ ;###;৬০ ভাগ ভোটার আওয়ামী লীগকে চান ;###;বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে চান ২২ ভাগ

মহাজোট পেতে পারে ২৪৮ আসন

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

মহাজোট পেতে পারে ২৪৮ আসন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৪৮ আসন নিয়ে আবারও সরকার পরিচালনায় আসছে বলে আভাস মিলেছে এক জরিপে। গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র-আরডিসির ওই জরিপের ফলে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৪৯ ও অন্যরা তিনটি আসন পাবে বলে জানানো হয়েছে। জরিপের ফল বলছে এবারের বিরোধী দল হচ্ছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোট। বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ওই জরিপের ফল প্রকাশ করে আরডিসি। রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ছায়া ভোটের ফলে দেখা গেছে, দেশের ভোটারদের ৬০ শতাংশ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। আর বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে ভোট দিয়েছে ২২ শতাংশ ভোটার। এই ভোটে ১০ শতাংশ মানুষ কাকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি। আরডিসির জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত এই ছায়া ভোটের ফল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। ছায়া ভোটে জাতীয় পার্টির পক্ষে ভোট পড়েছে ৪ শতাংশ। আর ৩ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে জরিপে অংশ নেয়া ৯৮ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তারা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট দিতে চান। আরডিসি গত ৯-১৬ ডিসেম্বর জরিপের মাধ্যমে এই ছায়া ভোট নেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ভোটারদের মতামত নেয়া। ভোট জরিপে অংশ নেয় ২ হাজার ২৪৯ জন ভোটার। দেশের ৫১টি নির্বাচনী এলাকাতে এই ভোট-জরিপ চালানো হয়। ভোটের ফল দেখে আরডিসির অনুমান, এবারের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট ২৪৮টি আসন পাবে, ঐক্যফ্রন্ট পাবে ৪৯টি আসন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বা অন্যরা পাবে তিনটি আসন। অনুষ্ঠানে ফলাফল তুলে ধরেন আরডিসির অর্থনীতিবিদ ফরেস্ট ই কুকসন। তিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একজন পরামর্শক। জরিপ সম্পর্কে ফরেস্ট ই কুকসন বলেন, গ্রামীণ নারী থেকে সেনাবাহিনীর সদস্য সব শ্রেণী, পেশা ও বয়সের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। নমুনার সংখ্যা একটু ছোট। কত জেলা বা উপজেলায় এই জরিপ করা হয়েছে, তা আমি এখন বলতে পারছি না। তবে দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের ভোটারদের থেকে মতামত নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হয়ে নির্বাচনের সম্ভাব্য ফল জানতে এই জরিপ করা হয়। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নির্বাচনের আগে এ ধরনের ভোট নেয়ার রেওয়াজ আছে। ছায়া জরিপে ভোট দিতে নারীদের জন্য ছিল লাল ব্যালট পেপার এবং পুরুষদের জন্য ছিল নীল ব্যালট পেপার। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্যগুলোকে নমুনা হিসেবে নিয়ে দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের জেলা-উপজেলাগুলো থেকে ভোটারদের এই জরিপ করা হয়। প্রশ্ন ছিল, ‘আজ যদি নির্বাচন হয়, তবে কার জন্য ভোট দেবেন? ভোট দেয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন ভোটাররা। ফলাফলে আওয়ামী লীগকে ভাল বলেছে, ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এবং খারাপ বলেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। বিএনপিকে ভাল বলেছে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এবং খারাপ বলেছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। জাতীয় পার্টিকে ভাল বলেছে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং খারাপ বলেছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। জাতীয় নির্বাচনের ভোটারদের সংখ্যার তুলনায় এই জরিপের নমুনার সংখ্যা কম বলে মনে করেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ফরেস্ট ই কুকসন বলেন, জরিপটির নমুনা ছোট। তবে যুক্তরাষ্ট্রেও এমন ধরনের জরিপ নেয়া হয় যেখানে নমুনার সংখ্যা থাকে কেবল এক হাজার। ছোট নমুনা হলে সহজে সেটা ব্যবস্থা করে একটা উত্তর পাওয়া যায়। ভোটারদের মতামত সম্পর্কে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমার মনে হয়, নির্বাচনে সহিংসতা বা দ্বন্দ্ব যা-ই হোক না কেন, সেটা হয়তো ভোটারদের ওপর প্রভাব ফেলবে। কিন্তু ভোটারদের পছন্দ একই থাকবে। জরিপে অংশ নেয়া ৯৮ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তারা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট দিতে চান। আরডিসি গত ৯-১৬ ডিসেম্বর জরিপের মাধ্যমে এই ছায়া ভোট নেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ভোটারদের মতামত নেয়া। এবার বেশি ব্যবধানে জয় পাবে আওয়ামী লীগ ॥ এই জরিপের আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরেকটি জরিপ চালিয়ে ছিল আরডিসি। জরিপের সূত্র তুলে ধরে ১৩ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের চেয়েও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশি ব্যবধানে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে একথা উল্লেখ করে গবেষণা সংস্থার জরিপের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে জয় লিখেছেন, আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে ১৬৮ থেকে ২২০টি আসনে জয়লাভ করবে। সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, এই বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত আমরা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় জাতীয় জনমত জরিপটি করাই। নিরপেক্ষ গবেষণা সংগঠন রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি) দ্বারা এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এ বছরের মেয়র নির্বাচনের জরিপটিও এই সংগঠনটিই করেছিল। আপনাদের হয়তো মনে আছে আমার পেজ থেকে সেই জরিপটিও শেয়ার করি, যার ফলাফল নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে মোটামুটি ভালই মিলেছিল। তিনি আরও জানান, এই জরিপটির জন্য আমরা ৫১টি নির্বাচনী আসনের ৫১ হাজার নিবন্ধিত ভোটারের সঙ্গে কথা বলি, অর্থাৎ প্রতি আসনে অন্তত ১ হাজার ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচনের ফলাফল আমলে নিয়েই এই ৫১টি আসন আমরা বৈজ্ঞানিকভাবে বেছে নিয়েছিলাম। এই আসনগুলোতে আমরা সবচেয়ে বেশি ভিন্ন ভিন্ন দলের জন্য ভোট দেয়ার প্রবণতা দেখতে পাই বা সাধারণত জয়ের পার্থক্য সবচেয়ে কম থাকে। অর্থাৎ এই আসনগুলো নিয়েই আমাদের দল সবচেয়ে বেশি চিন্তিত ছিল। যেহেতু জরিপটি মনোনয়ন প্রক্রিয়ার আগে করা হয়েছিল, সেহেতু আমরা প্রার্থীদের ব্যাপারে জনমত জানতে পারিনি। কিন্তু দলগতভাবে ৫১টি আসনেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে। ১২ দশমিক ২ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়ের সম্ভাবনা জয়পুরহাট-১ আসনে আর ৭৫ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের সম্ভাবনা বরিশাল-৪ আসনে। যারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি তাদের সবচেয়ে কম সংখ্যা দেখা যাচ্ছে টাঙ্গাইল-৩ আসনে, ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এই আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিকটবর্তী দলের ব্যবধান ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সিদ্ধান্তহীনদের সংখ্যা সাতক্ষীরা-৩ আসনে, যেখানেও আওয়ামী লীগের জয়লাভের ব্যবধান ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ। গবেষণার প্রতিবেদনের বরাতে সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, গড়ে আওয়ামী লীগের জন্য সমর্থন ৬৬ শতাংশ মানুষের, বিএনপির জন্য ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটার সিদ্ধান্ত নেননি। যারা সিদ্ধান্ত নেননি তাদের থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থনের ব্যবধান অনেক বেশি। আরও গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হচ্ছে কোন আসনেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সমর্থনের পার্থক্য ১০ শতাংশের মধ্যে নেই। শুধু ২টি আসনেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সমর্থনের পার্থক্য ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ২৮টিতে, অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি জরিপকৃত আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সমর্থনের পার্থক্য ৫০ শতাংশের বেশি। সমর্থনের পার্থক্য ১০ শতাংশের এর বেশি হলেই দ্বিতীয় দলটির জন্য তা পার করা মোটামুটি অসম্ভব হয়ে যায়, আর ২০ শতাংশ এর বেশি পার্থক্য থাকলে একাধিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দ্বারাও তা টপকানো সম্ভব হয় না। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেয়েছিল। দুই বছর জরুরী অবস্থার পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০, বিএনপি ২৯, জাতীয় পার্টি ২৭, জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, জামায়াতে ইসলামী দুটি, এলডিপি একটি, বিজেপি একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চারটি আসনে জয়ী হন। জয় লিখেছেন, ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সকল নির্বাচনের ফলাফল দেখে ওই জরিপের ৫১টি আসন বেছে নেয়া হয়েছে। এই আসনগুলোর ভোটারদের মধ্যে একেক নির্বাচনে একেক দলের প্রার্থীদের জয়ী করার প্রবণতা বেশি। ৫১টি আসনেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে। সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়ের সম্ভাবনা জয়পুরহাট-১ আসনে, সেখানে ভোটের ব্যবধান হতে পারে ১২ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট। সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের সম্ভাবনা বরিশাল-৪ আসনে, ভোটের ব্যবধান হতে পারে ৭৫ শতাংশ। গত জুলাইয়ে রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগেও আরডিসিকে দিয়ে একটি জরিপ করিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে জরিপে বরিশাল ও রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের কথা বলা হয়েছিল। অন্যদিকে সিলেটে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকার কথা বলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সিলেটে বিএনপি প্রার্থী ছয় হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। আর বাকি দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বড় জয় পান। ওই জরিপের কথা মনে করিয়ে দিয়ে জয় লিখেছেন, আমার পেইজ থেকে সেই জরিপটিও শেয়ার করি, যার ফলাফল নির্বাচনের সঙ্গে মোটামুটি ভালই মিলেছিল।
×