ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওরা শান্তি নষ্ট করতে চায় ॥ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

ওরা শান্তি নষ্ট করতে চায় ॥ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোটকে প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তারা (বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট) যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। কেননা, তাহলে তারা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। আমরা ইতোমধ্যেই অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেগুলো বাস্তবায়ন করেছি এবং অনেকগুলো বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কাজেই আমি দেশবাসীকে বলব উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের আরেকটিবার দেশসেবার সুযোগ করে দিতে। বুধবার ধানম-িতে নিজ বাসভবন সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যকে কুষ্টিয়া, নওগাঁ ও চাঁদপুর জেলায় তিনটি পৃথক নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনে গিয়ে দুর্ব্যবহার এবং পুলিশকে গালিগালাজ করায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছে। জনগণ যখন নৌকায় ভোট দিতে উদগ্রীব, তখন ঐক্যফ্রন্ট দেশজুড়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। এক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ধৈর্য সহকারে কাজ করতে হবে। যেহেতু তারা সন্ত্রাস করে নেতাকর্মীদের খুন করছে, তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে, বোমা হামলা করে যাচ্ছে, নির্বাচনী প্রচার মিছিলের ওপর হামলা করছে। আমাদের নির্বাচনী অফিস পোড়াচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্টের জোটের হাতে। তিনি বলেন, যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে তারা সেখানেই হামলা করে যাচ্ছে। দেশের ৫১ জেলায় ৪৪টি সংসদীয় আসনে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে যাচ্ছে। বোমা হামলা করে যাচ্ছে। আসলে এটাই তাদের চরিত্র, সেটা তারা করে যাচ্ছে। এবার হামলায় আমাদের পাঁচজন নিহত ও বহু আহত হয়েছে। সেটা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এসেছে। শেখ হাসিনা বলেন, তারা (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি-জামায়াত) জানে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, এতিমের অর্থ আত্মসাত, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, অগ্নিসংযোগকারীদের দেশের মানুষ ভোট দেবে না। আর সেই কারণে তারা তাদের পেশী শক্তি দেখানোর চেষ্টা করছে। অতীতে তারা যেভাবে মানুষকে আক্রমণ করেছে, ঠিক সেভাবে এখনও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। দেশবাসীকে উদ্দেশে করে সরকার প্রধান বলেন, জনগণের কাছে আহ্বান জানাব, এই নির্বাচন জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার সুযোগ। তাই আপনারা যারা ভোটার সকলে ভোট দেবেন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আমরা এখানে দেখেছি, ঐক্যফ্রন্টের আচার-আচরণ থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (ড. কামাল) নির্বাচন কমিশনে গিয়ে পুলিশকে গালিগালাজ করে এসেছেন। তার যে অকথ্য ভাষা, তিনি নাকি আবার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী! তার মুখ থেকে অকথ্য নোংরা গালি, এটা নিশ্চয়ই কেউ আশা করে না। এ রকমই তার চরিত্র। এর আগেও আদালতে বসে বর্তমান এ্যাটর্নি জেনারেলকে নোংরা গালি দিয়েছেন। এখন আবার পুলিশ বাহিনীকে নোংরা গালি দিয়ে বসেছেন। সাংবাদিকদের ‘খামোশ’ বলে দেখে নেব এমন হুমকি দিয়েছেন। এসব আচরণ থেকেই বোঝা যায়, তাদের নেতাকর্মীদের আচরণ কতটা জঘন্য। আমরা এসবের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। নওগাঁ থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নওজোয়ান মাঠে আয়োজিত জনসমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছয় নির্বাচনী আসনেই নৌকায় মার্কাকে বিজয়ী করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নওগাঁ-১ আসনের দলের প্রার্থী সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-২ আসনের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু, নওগাঁ-৩ আসনের ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম, নওগাঁ-৪ আসনের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, নওগাঁ-৫ আসনের প্রার্থী ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল ডন এবং নওগাঁ-৬ আসনের প্রার্থী ইসরাফিল আলমকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের বিজয়ী করার জন্য নওগাঁবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিকনফান্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার, নিজাম উদ্দিন জলিল ডন ও শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু বক্তব্য রাখেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়নের জন্য কাউকে তাগাদা দিতে হয় না। আওয়ামী লীগ উন্নয়নের রাজনীতি করে। দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য কাজ করে। এই ১০ বছরে সবক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও সরকার গঠন করার সুযোগ দিন। স্থানীয় নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী আবারও ক্ষমতায় আসলে নওগাঁয় একটি ইকোনমিক জোন, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, নওগাঁ শহরকে যানজটমুক্ত করতে পৃথক বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং গ্যাস সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব প্রতিশ্রুতি শুনে জনসমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন এবং হাততালি ও স্লোগান দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নওগাঁ একটি কৃষি নির্ভর জেলা। বিশেষ করে উদ্বৃত্ত ধান উৎপাদনের জেলা। কৃষি ক্ষেত্রে আরও উন্নত পরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন। কুষ্টিয়ার নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য জেলার ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে নৌকাকে কেউ হারাতে পারবে না। আমরা ১০ বছরে মানুষের জন্য কাজ করেছি। দেশের মানুষ উন্নয়ন পেয়েছে। প্রতিটি শ্রেণী-পেশার মানুষ ভাল আছে। আমরা জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস প্রায় নির্মূল করেছি। আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে দেশকে মাদকমুক্ত করব। তিনি বলেন, আমরা গত ১০ বছরে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এনেছি। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এক কথায় বলব, দেশের মানুষ ভাল আছে। আগামীতে আরও ভাল থাকতে এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়তে নৌকা মার্কায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী। কুষ্টিয়া থেকে ১৪ দলের প্রার্থী তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রার্থী মাহবুবউল আলম হানিফসহ অন্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। চাঁদপুর থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট এরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে। এরা হত্যা, সন্ত্রাস ও গুমের রাজনীতিতে অভ্যস্থ। তারা জানে বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দেবে। এ জন্য তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর-১ আসনের প্রার্থী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর, চাঁদপুর-২ আসনের প্রার্থী নুরুল আমিন, চাঁদপুর-৩ আসনের প্রার্থী ডাঃ দীপু মনি, চাঁদপুর-৪ আসনের প্রার্থী মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও চাঁদপুর-৫ আসনের প্রার্থী সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম। প্রধানমন্ত্রী সব প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানালে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ দু’হাত তুলে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেন। দলের পক্ষে ধারাবাহিক নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী সুধাসদন থেকে বিকেল ৩টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমিল্লা টাউন হল ময়দান, টাঙ্গাইল পৌর উদ্যান, যশোর টাউন হল ময়দান এবং পাবনা এ্যাডওয়ার্ড কলেজ মাঠে জেলা/মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেবেন। এটাই হবে প্রধানমন্ত্রীর শেষ নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ। এসব নির্বাচনী জনসভায় সংশ্লিষ্ট জেলার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং নির্বাচনী এলাকাসমূহের আওয়ামী লীগ ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থীরা উপস্থিত থাকবেন।
×