ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তাহিরা খাতুন

সবাইকে পেছনে ফেলছেন সাকিব

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

সবাইকে পেছনে ফেলছেন সাকিব

সময় গড়াচ্ছে, বয়সও বাড়ছে- তবে তার ফর্ম পড়ে যাচ্ছে না। সাকিব আল হাসান ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ব্যাটে-বলে যে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, এখনও তা ধরে রেখেছেন। আর তাই একের পর এক নতুন উচ্চতায় উঠছেন ৩১ বছর বয়সী সাকিব। সম্প্রতিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে টি২০ ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার এবং তিন ফরমেট মিলিয়ে ১৩ বার সিরিজ সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন এ বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম পারফর্মার হিসেবে সর্বকালের সেরা হয়ে ওঠার পথে থাকা ভারতের বিরাট কোহলিও তিন ফরমেট (টি২০, ওয়ানডে ও টেস্ট) মিলিয়ে ১৩ বারই হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। ক্রিকেট ইতিহাসে সিরিজ সেরা হওয়ার দিক থেকে এখন সাকিব সর্বকালের সেরা তালিকায় ৪ নম্বরে। এই সিরিজে ৮ উইকেট নিয়ে ৭২ ম্যাচে মোট শিকার সংখ্যাকে নিয়ে গেছেন ৮৮টিতে। যার ফলে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে এখন বিশ্বের তৃতীয় সেরা বোলার তিনি। সাকিবের ওপরে আছেন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি ৯৮ ও শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গার ৯২ উইকেট নিয়ে। অর্থাৎ তাদেরও পেছনে ফেলে বিশ্বের সর্বাধিক টি২০ উইকেট শিকারি হয়ে ওঠার। কারণ, আফ্রিদি অবসরে। তাই সেরা হওয়ার যুদ্ধটা মালিঙ্গার সঙ্গেই সাকিবের। এই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন এবং ব্যাট হাতে ৪২ রান করেছেন। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত এটিই সেরা অলরাউন্ড নৈপুণ্য। পেছনে পড়ে গেছেন বাকি সবাই। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে অনেকগুলো রেকর্ডের মালিক সাকিব। ব্যাটে-বলে নিয়মিত নৈপুণ্য দেখিয়ে বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে তিন ফরমেটেই এক নম্বর অলরাউন্ডার ছিলেন। তবে আপাতত শুধু টেস্টে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার ওয়ানডে ও টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে আছেন। এ দুটি ফরমেটেও ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দারুন নৈপুণ্য দেখিয়ে এক নম্বর স্থানটা ফিরে পাওয়ার খুব কাছাকাছি চলে এসেছেন সাকিব। টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে অন্যতম সেরা পারফর্মার সাকিব। সে কারণেই তাকে দেশের অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিজেকে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজে নিয়ে গেছেন আরও অনন্য উচ্চতায়। ৩ ম্যাচে বল হাতে ৮ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি, ব্যাট হাতে করেছেন ৫১.৫০ গড়ে ১০৩ রান। তাই আইসিসির টি২০ অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ে আবার উঠে এসেছেন দুই নম্বরে। আর বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়ে এখন ৩ ধাপ এগিয়ে ৭ নম্বরে তিনি। হয়েছেন তৃতীয়বারের মতো সিরিজ সেরা খেলোয়াড়। এই সিরিজেই তিনি বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে দ্বিতীয় সেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়ে ২০ রানে ৫ উইকেট নেন দ্বিতীয় ম্যাচে যা তার ক্যারিয়ারসেরা। আর এমন বোলিংয়ের সুবাদেই তিনি এখন আন্তর্জাতিক টি২০ ইতিহাসের তৃতীয় সেরা বোলার হয়ে গেছেন ৭২ ম্যাচে মোট ৮৮ উইকেট নিয়ে। তার ওপরে এখন শুধু পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি (৯৯ ম্যাচে ৯৮) এবং শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা (৬৯ ম্যাচে ৯২)। টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ দল ২-০ এবং ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় তুলে নেয়। তবে টি২০ সিরিজে হয়েছে দারুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রথম ও তৃতীয় ম্যাচ জিতেছে ক্যারিবীয়রা আর দ্বিতীয় টি২০ জিতে যায় বাংলাদেশ। এ কারণেই ব্যাটে-বলে দারুণ লড়াই হয়েছে দু’দলের মধ্যে। তবে উভয় দলের মধ্যে ব্যাটে-বলে সেরা পারফর্মার ছিলেন সাকিব। তিনি বল হাতে ৮ উইকেট নেন ৩ ম্যাচে। আর ব্যাট হাতে করেন একটি অর্ধশতকসহ ১০৩ রান। তাই আবারও সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব। বাংলাদেশের পক্ষে আর একজনই শুধু সিরিজসেরা হতে পেরেছেন। সাব্বির রহমান হয়েছিলেন একবার সিরিজ সেরা। সেখানে সাকিব একাই তৃতীয়বারের মতো সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হলেন। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ এই তিন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব সিরিজসেরা হয়েছেন মোট ১৩ বার। কোহলিও ১৩ বার। দু’জন এক্ষেত্রে ইতিহাসে চার নম্বরে। তবে কোহলির চেয়ে ২৪ ম্যাচ কম খেলেছেন সাকিব। সর্বাধিক ১৯ বার সিরিজসেরা হয়েছেন কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকর। দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস ১৪ বার ও শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়া ১৩ বার হয়েছেন সিরিজ সেরা। টেস্টে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব বর্তমানে ওয়ানডেতে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা অলরাউন্ডার। এক সময় তিন ফরমেটেই বিশ্বসেরা হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ে ছিলেন। কিন্তু টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে নেমে গিয়েছিলেন ৩ নম্বরে। কিন্তু এবার সিরিজে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে ৩৩৯ রেটিং নিয়ে দুই নম্বরে উঠে এসেছেন। এক ধাপ পেছনে পড়ে গেছেন আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবি। তার রেটিং ৩১৪। শীর্ষে আছেন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৩৬২ রেটিং নিয়ে। বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭ নম্বরে উঠে এসেছেন সাকিব। এর আগে ১০ নম্বরে ছিলেন তিনি। এছাড়াও টি২০ ইতিহাসে এখন তৃতীয় সেরা বোলার হয়ে গেছেন তিনি। ৮৫ উইকেট করে নেয়া উমর গুল ও সাঈদ আজমলকে পেছনে ফেলে এখন ৮৮ উইকেট ঝুলিতে পুরে আন্তর্জাতিক টি২০ ইতিহাসে তিন নম্বর বোলার। খুব কাছাকাছিই আছেন লঙ্কান পেসার মালিঙ্গা ৯২ উইকেট নিয়ে এবং সবার ওপরে থাকা আফ্রিদি ৯৮ উইকেট নিয়ে। দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে ২০ রানে ৫ উইকেট নেন সাকিব। যা বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সেরা টি২০ বোলিং নৈপুণ্য। ১৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ওপরে ইলিয়াস সানি। তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের দিক থেকে এটি বিশ্ব ক্রিকেটে মাত্র অষ্টম বোলার হিসেবে দেখানো কীর্তি। ভারতের কুলদ্বীপ যাদব ও ভুবনেশ্বর কুমার, দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহির, পাকিস্তানের উমর গুল, শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিস ও লাসিথ মালিঙ্গা এবং নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি দেখিয়েছেন। সাকিব ওয়ানডেতে একবারই ৫ উইকেট পেয়েছেন, টেস্টে ১৮ বার এবং টি২০-তেও ১ বার পেলেন ৫ উইকেট। সেদিক থেকে বিশ্ব ক্রিকেটে মাত্র চতুর্থ স্পিনার হিসেবে সাকিব তিন ফরমেটেই ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়লেন। আর টি২০ ইতিহাসে প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে একই ম্যাচে ৪০ এর বেশি রান ও বল হাতে ৫ উইকেট নেয়ার একমাত্র নজির গড়েছেন সাকিব। এ সিরিজে দারুণ ব্যাটিং করে ব্যাটসম্যানের র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭ ধাপ এগিয়ে ৩৭তম এখন তিনি।
×